গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ও পরীক্ষা
উর্বর সময়ে কোনও সক্ষম মহিলার ডিম্বাণু এবং কোনও সক্ষম পুরুষের
শুক্রাণু মিলিত হলে ভ্রূণের সঞ্চার হয় অর্থাত্ মহিলা গর্ভবতী
হয়৷ ভ্রূণ জরায়ুতে বড় হতে থাকে, এই অবস্থাকে গর্ভাবস্থা বলা হয়৷
একটি সুস্থ বাচ্চা জণ্ম দেয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী
মহিলাকে বিভিন্ন ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়৷ গর্ভধারণের
সময় শরীরের অনেক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়৷
গর্ভাবস্থার লক্ষণ
* মাসিক স্রাব বন্ধ হওয়া
* বমি বা বমি বমি ভাব
* ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগ
* স্তনের পরিবর্তন
* জরায়ুর পরিবর্তন
* তলপেটে ও মুখে কালো দাগ দেখা যায়, তল পেটের ত্বক টান ধরেল পেটের
ত্বকে সাদা দাগ দেখা যায়
* শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়
* গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া (৪ মাস পর)৷
* গর্ভস্থ শিশুর হৃদস্পন্দন (৫ মাস পর)৷
গর্ভকালীন যত্ন
সমগ্র গর্ভকালীন সময়ে অর্থাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে ৯ মাস ৭ দিন ব্যাপী মাঝখানে গর্ভবতী মা ও তার পেটের সন্তানের যত্ন নেওয়াকে গর্ভকালীন যত্ন বলা হয়। নিয়মিত পরীক্ষা এবং উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। সমগ্র গর্ভকালীন সময়ে কম পক্ষে ৪ বার পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী
১ম ভিজিটঃ ১৬ সপ্তাহ (৪ মাস)
২য় ভিজিটঃ ২৪-২৮ সপ্তাহ (৬-৭ মাস)
৩য় ভিজিটঃ ৩২ সপ্তাহ ( ৮ মাস)
৪ র্থ ভিজিটঃ ৩৬ সপ্তাহ ( ৯ মাস)
গর্ভকালীন যত্নের উদ্দেশ্য
গর্ভকালীন যত্নের প্রধান উদ্দেশ্য হলো গর্ভবতী মাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থতার মাঝে তৈরী করে তোলা যাতে তার প্রসব স্বাভাবিক হয়, তিনি যেন একটি স্বাভাবিক সুস্থ শিশু জন্ম দেন, সন্তানকে বুকের দুধ দিতে পারেন এবং সন্তোষজনকভাবে তার এবং শিশুর যত্ন নিতে পারেন।
গর্ভকালীন যত্নের কার্যাবলী
* মায়ের কোন অসুখ থাকলে তা নির্ণয় করা এবং তার চিকিৎসা করা যেমন-গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, প্রি-একলাম্পশিয়া বা একলাম্পশিয়া এবং বাঁধাপ্রাপ্ত প্রসবের পূর্ব ইতিহাস।
* মা যাতে গর্ভকালীন সময়ে নিজের যত্ন নিতে পারেন, আসন্ন প্রসবের জন্য নিজে তৈরী হতে পারেন এবং নবজাত শিশুর যত্ন নিতে পারেন তার
শিক্ষা দেয়া।
*গর্ভাবস্থায় জটিল উপসর্গগুলি নির্ণয় করা। এর ব্যবস্থাপনা করা
যেমন- রক্ত স্বল্পতা, প্রি-একলাম্পশিয়া ইত্যাদি।
* ঝুকিপূর্ণ গর্ভ সনাক্ত করা।
*উপদেশের মাধ্যমে মাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করা, রক্তস্বল্পতা,
ম্যালেরিয়া এবং ধনুষ্টংকারের প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া।
*নিরাপদ প্রসব বাড়ীতে না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোথায় সম্ভব হবে তা
নির্বাচন করা।
*প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীর ব্যবস্থা করা।
* সকল গর্ভবতী মায়ের রেজিষ্ট্রেশন করা।
বাড়িতে কিভাবে গর্ভবতীর যত্ন নেয়া যায়
*
সকল গর্ভবতীকে হাসি খুশি রাখা
*
গর্ভবতী মাকে একটু বেশী খেতে দেয়া
*
খাবার যাতে সুষম হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা
*
বেশী করে পানি খেতে বলা
*
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে সহায়তা দেয়া
*
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলা
*
তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা
*
গর্ভবতী মা অসুস্থ হলে তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্য কর্মী বা ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা
শক্তিদায়ক খাবারঃ যেমন
* ভাত, রুটি/পরাটা, আলু, চিনি, গুড়, সুজি
* সয়াবিন তেল, বাদাম, কলিজা
* ঘি/মাখন, ডিমের কুসুম ইত্যাদি
শক্তি ক্ষয়পূরণ এবং নবজাতকের শরীর বৃদ্ধিকারক খাবার-যেমনঃ
* মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের সাদা অংশ
*বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটরশুটি, সীমের বীচি ইত্যাদি
শক্তি রোগ প্রতিরোধক খাবার-যেমনঃ
* সবুজ, হলুদ ও অন্যান্য রঙ্গিন শাক-সবজি
*সবধরনের মৌসুমী ফল-মূল
গর্ভবতী মায়ের খাবার
গর্ভে থাকা যে শিশুটি পৃথিবীর বুকে আসছে সে যেন সুস্থ-সবল হয় এটা সব মার চাওয়া। কারণ সুস্থ সন্তানের মুখের হাঁসি মায়ের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আর এ প্রাপ্তিকে পূর্ণতায় রুপ দিতে আগে নজর দিতে হবে মায়ের নিজের শরীরের প্রতি।
তাই আসুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় একজন নারীর কী কী পুষ্টির প্রয়োজন এবং তা ঠিক কি পরিমানে। ‘পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট’-এর চার্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তুলে ধরা হল সঠিক খাবারের সঠিক পরিমাপ।
প্রোটিন :
স্বভাবিকের তুলনায় গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় প্রায় ১/৩ ভাগ। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যেন অতিরিক্ত ১৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিদিন একটি ডিম, এক বাটি ডাল বা শিমের দানা অথবা এক ঠোঙা বাদাম— গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
ক্যালসিয়াম :
স্বাভাবিক অবস্থায় যতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন, গর্ভাবস্থায় এর প্রয়োজন বেড়ে যায় প্রায় ২০০ মি.গ্রা. এর মতো। দুধ, দই, পনির, বাটা মাছ, রুই মাছ ইত্যাদিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। তবে বেশিরভাগ শুঁটকি মাছ, বিশেষ করে চিংড়ি মাছের শুঁটকিতে ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
আয়রন :
মায়ের দুধে যেহেতু আয়রন থাকে না, তাই গর্ভে থাকাকালেই জন্মের ৬ মাসে প্রয়োজনীয় আয়রন শিশু নিজের শরীরে জমা রাখে। এ জন্য গর্ভাবস্থায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এত দরকারি। আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস ‘রেড মিট’, কচু, কাঁচা আম, পাকা তেঁতুল। এছাড়া শুঁটকি মাছ, ফুলকপিতেও আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়।
ভিটামিন বি-১, বি-২ ও নায়াসিন
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিন, বি-২ বা রিবোফ্লাবিন ও বি-৩ বা নায়াসিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় পেট, কোমর, গলা-এসব জায়গার চামড়ার রং পরিবর্তন হয়, পেটের চামড়া স্ফিত হওয়ায় টান লাগে, তাই বি-ভিটামিন এই সময় চামড়ার দেখভালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন-সি :
আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন-সি প্রয়োজন। এ জন্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরপরই লেবু, কমলা, বাতাবিলেবু বা আমলকী খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভিটামিন-ডি :
মায়ের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। সে কারণে গর্ভবতী অবস্থায় ডিম, দুধ, পনির, দই ও ছোট মাছ খাওয়া বেশি পরিমাণে খুবই দরকার।
ফলিক অ্যাসিড :
ফলিক অ্যাসিড খুব বেশি পরিমাণ পাওয়া যায় ব্রোকলি, ডাল ও পালংশাকে। এ ছাড়া বাঁধাকপি, ফুলকপি, কমলা, মটরশুঁটি ও হোলগ্রেন রুটিতেই ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ ভালো।
মনে রাখা প্রয়োজন,
গর্ভাবস্থায় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজনীয়তাই বেড়ে যায়। এ কারণে গর্ভাবস্থায় এমন খাবার বেছে নেওয়া জরুরি, যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল পাওয়া যায়।
গর্ভবতী অবস্থায় করণীয়
* গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর দ্বারা কমপক্ষে ৩ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
*
গর্ভাবস্থায় ২টি টিটি টিকা নিতে হবে।
*
দৈনিক স্বাভাবিকের চেয়ে সাধ্যমত বেশি খাবার খেতে হবে।
*
গর্ভবতী মহিলাকে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
*
গর্ভবতী মহিলাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাকে নিয়মিত গোসলও করতে হবে।
*
দুপুরের খাবারের পর কমপক্ষে ১-২ ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে।
গর্ভবতী অবস্থায় পরিহার্য
* গৃহস্থালীর কঠিন কাজ যেমন-ধান মাড়াই, ধান ভানা, ঢেঁকিতে চাপা ইত্যাদি
*ভারী কোন কিছু তোলা
* দূরে যাতায়াত করা এবং ভারী কিছু বহন করা
* শরীরে ঝাঁকি লাগে এমন কাজ করা
* দীর্ঘ সময় কোন কাজে লিপ্ত থাকা
* ঝগড়া ঝাটি এবং ধমক দেয়া
* জর্দা, সাদা পাতা খাওয়া
* তামাক, গুল ব্যবহার করা
* ধূমপান বা অন্য কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা
* স্বাস্থ্য কর্মী বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা
গর্ভকালীন প্রয়োজনীয় ৪ টি ব্যবস্থা
*
প্রসবের জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ধাত্রী বা স্বাস্থ্য সেবা দানকারীকে আগে ঠিক করে রাখতে হবে।
*
প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ে বাড়তি খরচ এবং জরুরী ব্যবস্থা আগে ঠিক করে রাখতে হবে।
*
প্রসবকালে গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের রক্তের গ্রুপে মিল আছে এমন তিন জন সুস্থ্য ব্যক্তিকে রক্ত দানের জন্য আগে ঠিক করে রাখতে হবে এবং
*
গর্ভকালীন কোন রকম জটিলতা দেখা দিলে তাকে দ্রুত হাসপাতলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য যানবাহন চালকের (ভ্যানগাড়ির চালক বা নৌকার মাঝি) সাথে আগে থেকে কথা বলে রাখতে হবে।
প্রসবের সময় ৫ টি বিপদ চিহ্ন
গর্ভকালীন জটিলতার ফলে মা ও শিশু উভয়ের জীবনের ঝুকি দেখা দেয়। ৫ টি বিপদ চিহ্নের মাধ্যমে এসব জটিলতা ধরা যায়। এরকম অবস্থায় মায়েদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। এই ৫টি বিপদ চিহ্ন হলোঃ
*
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তস্রাব, গর্ভফুল না পড়া
*
গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিনদিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব
*
গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে ও প্রসবের পরে শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথা ব্যাথা, চোখে ঝাপসা দেখা
*
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পরে খিঁচুনী
*
প্রসব ব্যথা ১২ ঘন্টার বেশি থাকা ও প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রথমে বের হওয়া।
মনে রাখতে হবে : এর যে কোন একটির জটিল অবস্থা দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভকালীন সেবা
*
টিটি টিকা দেয়া হয়
*
ওজন নেয়া
*
স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া
*
রক্তস্বল্পতা বা শরীরে রক্ত কম
কি-না তা পরীক্ষা করা
*
রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করা
*
পা অথবা মুখ ফোলা (পানি আছে কিনা ) আছে কি-না দেখা
*
শারীরিক অসুবিধা আছে কি-না তা পরীক্ষা করা
*
পেট পরীক্ষা করা
*
উচ্চতা মাপা
চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের স্থান
গর্ভকালীন অবস্থায় কোন জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথে গর্ভবতী মাকে নিম্নের সেবাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে
*
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
*
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
*
জেলা হাসপাতাল
*
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
Week 03
Week 04
Week 05
Week 06
Week 07
Week 08
Week 09
Week 10
Week 11
Week 12
Week 13
Week 14
Week 15
Week 16
Week 17
Week 18
Week 19
Week 20
Week 21
Week 22
Week 23
Week 24
Week 25
Week 26
Week 27
Week 28
Week 29
Week 30
Week 31
Week 32
Week 33
Week 34
Week 35
Week 36
Week 37
Week 38
Week 39
Week 40
Week 41
RESOURCE
www.babycenter.com
infokosh.gov.bd
prothom-alo.com
priyo.com
About
AppEIX is a mobile software development firm based in Dhaka, Bangladesh, which is run by a team of young and energetic professionals who have extensive knowledge and experience in the mobile software industry. Using cutting edge technology and an efficient development model, the company is capable of producing state of the art applications for mobile devices across different platforms including but not limited to iOS (iPhone & iPad), Android, Windows Phone, Blackberry, etc.
Arif Marias
Advisor
appeix.com
Mahadi Hasan
Apps Developer
appeix.com
Shaon Ahmed
Apps Developer
appeix.com
Shariful Haq
Apps Developer
appeix.com
JOIN US
on
Facebook:
www.facebook.com/appeix
Visit Us:
www.appeix.com
নতুন মায়ের খাবার
নতুন মা কে তার দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তি ছাড়াও সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৭৫০ কিলো ক্যালরি বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হবে। আর এ জন্য মা কে খেতে হবে অতিরিক্ত শর্করা ও তেল জাতীয় খাবার। তবে ভাজা পোড়া খাওয়া পরিহার করতে হবে। সেই সাথে খেতে হবে বেশি আমিষ জাতীয় খাবার দাবার। কারণ আমিষ বেশি খেলে বাচ্চা দুধের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় আমিষ পাবে। যেহেতু সন্তানকে একটু পরপর বুকের দুধ খাওয়াতে হয় তাই এ সময় যেকোনো মায়ের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঘুমানো বা খাবার খাওয়া করা হয়ে উঠে না। বলা হয়ে থাকে বাচ্চা যখন ঘুমাবে সাথে সাথে মাকেও বিশ্রাম করে নিতে হবে। তারপরও সাধারন একটি খাবারের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে আর রাতে খাবারটা হতে হবে ভারি। অন্যান্য খাবার সময় বুঝে ও অবস্থা বুঝে খাওয়া যেতে পারে। প্রসুতি মা'দের সাহায্যের জন্য খাবারের একটি তালিকা দেয়া হল।
সকালের প্রাতরাশঃ
প্রায় সারারাত অভুক্ত থাকার পরে সকালে নাস্তা করা হয়। তাই বলে একবারে বেশি করে খেতে যাবেন না। সকালের নাস্তায় ৩টি রুটি খেতে পারেন, অথবা মাখন দেয়া ব্রেড খেতে পারেন ৪টি। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে ব্রেড এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। রুটির সাথে থাকতে পারে এক বাটি সবজি তরকারি। সাথে একটা সিদ্ধ বা পোঁচ করা ডিম। খাবার পরে খেতে পারেন এক কাপ চা। তবে দুধ চা এর থেকে লিকার চা খাওয়া সাস্থের জন্য ভাল হবে।
দুপুরের খাবারঃ
দুপুরের খাবার হতে হবে একটু ভারি। দুপুরে ভরপেৎ খাওয়ার জন্য ভাত হবে সব থেকে ভাল। ভাত খেলে ১ বাটি পরিমাণ খেতে পারেন। ভাত খেতে না চাইলে খেতে পারেন ৫ থেকে ৬টি রুটি। সাথে থাকতে পারে ৬০ থেকে ৭০ গ্রামের এক টুকরো মাছ বা মাংস। সেই সাথে থাকবে বেশি পরিমাণে সবজি তরকারি, ডাল ও তাজা ফল ও সবজির সালাদ। খাবার পরে মিষ্টিমুখ করার জন্য দই খেতে পারেন। তবে তা যেন ঠাণ্ডা না হয় তা খেয়াল রাখবেন।
বিকালের নাস্তায়ঃ
বিকালের জন্য এক কাপ চা সাথে ২ থেকে ৩ টি বিস্কিট খেতে পারেন। কোন দিন এক টুকরো কেক, নুডলস, সবজির কাটলেট, ইত্যাদিও খেতে পারেন। চাইলে ফল ফলারিও খেতে পারেন। তবে তেল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত হবে না।
রাতের খাবারঃ
রাতের খাবারটাও ভারি হবে দুপুরের মতই। ভাত খাবেন এক বাটি সাথে সবজি, মাছ বা মাংস, ডাল ইত্যাদি। তবে রাত্রে খাবার পরে ফল ফলাদি না খাওয়াই ভাল হবে। সেই সাথে আঁশযুক্ত খাবার রাত্রে পরিহার করবেন। কারণ এটা হজম হতে সময় নেয়।
শোবার আগেঃ
শোবার আগে অবশ্যই এক গ্লাস দুধ খেতে ভুলবেন না। সাথে ৪ থেকে ৬টি বাদাম খেতে পারেন।
প্রসুতি মায়েদের দৈনিক খাবারের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে কোন খাবারে সমস্যা থাকলে বা কোন রোগের কারনে কোন খাবার খাওয়া নিষেধ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মত খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিন এবং সেটা মেনে চলুন। সন্তান জন্মদানের ধকল সামলে ও নতুন সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে অনেক মা'ই পারেন না নিজের খাবারের দিকে যত্ন নিতে তারপরও এসবের মাঝেও একটু কষ্ট করে নিজের খেয়াল রাখতে শিখুন। কারণ আপনি সুস্থ না থাকলে আপনার যেমন কষ্ট বৃদ্ধি পাবে তেমনই আপনার ছোট সন্তানটিও কিন্তু পুষ্টির দিক থেকে বিরাট ঝুকির মাঝে পড়ে যাবে। তাই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে নিজে সুস্থ থাকুন ও সন্তানকেও সুস্থ রাখুন
নবজাতকের খাবার
নবজাতকরা সাধারনত ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধটাই খাবে। তবে জন্মের পরপর মায়ের বুকে যে শাল দুধ থাকে তা বাচ্চাকে খেতে দিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। এই শাল দুধ বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী। শাল দুধ শেষ হবার পরে নবজাতককে মায়ের বুকের সাধারন দুধ খেতে দিতে হবে।
নবজাতকের খাবারের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তারা আমাদের মত নিয়ম করে ৩ বেলা খাবেনা। তাদের যখন ক্ষুধা লাগবে তারা তখনই খেতে চাইবে। তাই মাকে বাচ্চার খাবারের দিকে ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে। যখনই খেতে চাইবে তখনই খেতে দিতে হবে। জন্মের পরপর বাচ্চারা দিন-রাত সব সময়ে বুকের দুধ খেতে চাইবে। যেহেতু গর্ভকালীন সময়ে তার জন্য রাত বা দিন বলে কিছু ছিলনা তাই জন্মের পরপর গর্ভের চক্র অনুযায়ী সে চলবে কিছুদিন। তবে ধীরে ধীরে এই অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে আসবে নবজাতক বেড়ে উঠার সাথে সাথে।
মায়ের বুকের দুধ বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমানে না পেলে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক বাচ্চাকে কোন ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে ফর্মুলার পাশাপাশি যত অল্পই হোক না কেন মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে।
নবজাতকের ক্ষুধা লাগলেই সে কাঁদতে শুরু করবে। এমনটাই নিয়ম বলে ধরা হয়। তবে অনেক সময় পর্যাপ্ত খাবার না পাবার জন্যও নবজাতক কাঁদতে পারে। বাচ্চা ঠিক মত খাবার পাচ্ছে কি না তা জানার জন্য খেয়াল রাখবেন যে সে দিনে ৪ থেকে ৬ টি ডায়পার নষ্ট করে কি না। সেই সাথে সে যখন জেগে যাবে তখন কেঁদে বা শব্দ করে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে কিনা। এছাড়াও দেখতে হবে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি ঠিক মত হচ্ছে কি না। এসবকিছু আপনার নবজাতকের মাঝে দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনার সন্তান ঠিকমত খেতে পাচ্ছে। বাচ্চার খাবার নিয়ে অযথা চিন্তা করতে যাবেন না।
অনেকেই নবজাতকের মুখে জন্মের পরপর মধু বা চিনির রস দেন। ভুলেও এই কাজটি করতে যাবেন না। মধুতে এমন কিছু উপাদান আছে যা নবজাতকের ক্ষতি করতে পারে। মনে রাখবেন বাচ্চার জন্য শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধটাই যথেষ্ট। এমনকি প্রথম ৬ মাস বাচ্চাকে পানি পান করানোর দরকারও নেই। বাচ্চা তার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি মার বুকের দুধ থেকেই পেয়ে যায়। তবে মায়ের কোনও শারীরিক সমস্যা হলে বা বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমান দুধ না পেলে সেক্ষেত্রে প্যাকেটের দুধ দিতে হবে। তবে গরুর দুধ একদম দেয়া যাবেনা। কারন গরুর দুধ সহ্য করার মত ক্ষমতা নবজাতকের থাকেনা। তাই সে দিকটাতেও নজর দিন।
নবজাতকের টিকা
শিশুর জন্মের ১ বছরের মধ্যে ৭ টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টিকা শিশুকে দিতে হবে। আমাদের দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে এই সকল টিকাদান কর্মসূচী পরিচালিত হয়।
বিসিজি টিকাঃ
এটি জন্মের পরপরি দেয়া হয়। যক্ষ্মা প্রতিরোধই এর কাজ। জন্মের পর থেকে ৪২ দিন বা দেড় মাসের মধ্যে এটি দিতে হয়। শিশু একদম এ ছোট থাকে বলে টিকা দেয়ার পর জায়গাটি একটু ফুলে যায় এবং শিশুর সামান্য জ্বরও আস্তে পারে। তবে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
ডিপিটি টিকাঃ
ধনুষ্টঙ্কার, ডিপথেরিয়া এবং হুপিং কাশি এই ৩ টি রোগের জন্য ডিপিটি টিকা দেয়া হয়। ৩ টি ডোজের মাধ্যমে এটি দেয়া হয়। প্রথমটি দেড় মাস বয়সে, দ্বিতীয়টি আড়াই মাস বয়সে আরে শেষেরটি সাড়ে ৩ মাস অর্থাৎ প্রতি ১ মাস অন্তর টিকা ৩ টি দেয়া হয়। এর ৩ ডোজের সাথে ২ ফোটা করে পোলিওর টিকাও খাওয়ানো হয়।
হেপাটাইটিস-বি টিকাঃ
যখন ডিপিটি টিকা দেয়া হয় তখন শিশুকে হেপাটাইটিস-বি থেকে বাঁচাতে আরো একটি টিকা দেয়া হয়। এটিও পর পর ৩ ডোজে নিতে হয়।
হামের টিকাঃ
শিশুর বয়স যখন ৯ মাস হয় তখন তাকে হামের টিকা দেয়া হয়। একই সাথে তাকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ও পোলিওর চতুর্থ ডোজও দেয়া হয়।
শিশুর জন্মের পর এই ৭ টি টিকা অবশ্যই দিয়ে নিন। কিছুদিন পর থেকে সরকারি উদ্যোগে হিব- হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি নামে আরেকটি টিকা দেয়া হবে। এর বাইরে মিসেলস, মামস ও রুবেলা থেকে বাঁচাতে এমএমআর টিকাটি দিয়ে দিন আপনার শিশুকে। আর সেই সাথে চিকেন পক্সের টিকা দিতেও ভুলবেন না।
নতুন মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবশ্য করণীয় ৫টি কাজ
সন্তান জন্মের পরের সময় অনেককেই প্রসুতি মাকে অবহেলা করতে দেখা যায়। নতুন মা হয়ে নারীরাও সন্তানের খেয়াল রাখতে গিয়ে লক্ষ্য রাখতে পারেন না নিজের প্রতি। কিন্তু এই সময়টাও নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময়েও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সকলের রাখতে হবে বাড়তি একটু খেয়াল। যত্ন নিতে হবে নতুন মায়ের নিজেরও। এতে করে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবেন।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ছেড়ে দেবেন না
গর্ভকালীন সময়ে মাকে যেভাবে যেধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন ঠিক তেমনই গর্ভকালীন পরবর্তী সময়ে একই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া পরামর্শ দেন তারা। কারণ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য একজন মাকে বাড়তি ২০০ থেকে ২২০ ক্যালোরি খাবার খেতে হয়। তাই প্রোটিন, ভিটামিন, ফাইবার জাতীয় খাবার অবশ্যই এই সময় খাবেন।
ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান
গর্ভকালীন পরবর্তী সময়ে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ফলমূল এবং শাকসবজির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। কারণ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে পুষ্টি পৌছায়। ফলমূল এবং শাকসবজি মায়ের দেহে পরিমিত পুষ্টি সরবরাহ করে মায়ের দেহ রাখে সুস্থ, এতে শিশুও সুস্থ থাকে।
দেহের ওপর চাপ দিয়ে কাজ করবেন না
মহিলাদের সংসারে অনেক ধরণের কাজ করতে হয়। গর্ভকালীন পরবর্তী সময়ে অনেকেই নিজের আগের রুটিনে ফিরে যেয়ে শরীরের ওপর চাপ ফেলেও কাজ করে থাকেন যা একেবারেই উচিৎ নয়। কাজ করুন, তবে বুঝে শুনে। মনে রাখবেন মায়ের অসুস্থতার প্রভাব বাচ্চার ওপর পরে। ঘণ্টা তিনেক ধরে রান্না করার কাজ না করে সহজ ধরণের রান্না করুন, ঘরের কাজের জন্য সহযোগীর ব্যবস্থা করুন।
আস্তে আস্তে ওজন কমান
গর্ভকালীন সময়ে বাড়তি খাবার খেয়ে এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য মায়েদের ওজন বেড়ে যায়। অনেক সাস্থ্যসচেতন মায়েরা চেষ্টা করেন সেই ওজনটুকু কমিয়ে আগের মতো হয়ে যেতে চান। কিন্তু এই কাজটি বেশ সাবধানে করতে হবে। একবারে করতে পারবেন না, এতে শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। ডায়টিং করতে যাবেন না, খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার রাখুন, হালকা পাতলা ব্যায়াম করে নিন।
পানি ও পানি জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন
প্রতিবার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে এক গ্লাস পানি অবশ্যই পান করে নেবেন। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করবেন। সেই সাথে ফলের রস, ডাবের পানি, গ্লুকোজ ইত্যাদি ধরণের পানি জাতীয় খাবার রাখবেন। এতে ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় পড়বেন না।
নবজাতক শিশুর যত্ন ও কিছু পরামর্শ :
জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে শিশু সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিবেশে চলে আসে। এমনিতেই সে থাকে খুবই নাজুক। একটু অযত্ন বা অসচেতনতা ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর পরিণতি।
►► আসুন দেখে নেয়া যাক নবজাতকের যত্নের জন্য কি কি করা যেতে পারে::
♦♦♦ যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ খেতে দিন। অনেক সময় মায়ের বুকে দুধ আসতে একটু দেরি হয়, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
♦♦♦ বাচ্চার ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ ব্যতীত অন্য কোনো খাবারের কোনোই প্রয়োজন নেই। এমনকি পানিও নয়। তাই চিনি, মধু, তালমিছরি এগুলো কোনো অবস্থাতেই তার মুখে দেবেন না।
♦♦♦ বাচ্চাকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে গরম রাখুন। মায়ের পেটে সে তুলনামূলক গরম আবহাওয়ায় থাকে তাই তাকে একটু উষ্ণতায় রাখুন।
♦♦♦ বাচ্চার গা কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিন। তবে গরমের দিনে তিন দিন বয়স পর্যন্ত ও শীতের দিনে ১৫ দিন বয়স পর্যন্ত গোসল করানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
♦♦♦ নাভি না পড়া পর্যন্ত তা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখুন। নাভিতে কোনো ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না। কোনো কিছু করার আগে ডাক্তারের কাছে জেনে নিন।
♦♦♦ বাচ্চার প্রস্রাব এবং কালো রঙের পায়খানার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চা যদি জন্মের ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কালো রঙের পায়খানা না করে তবে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
♦♦♦ বাচ্চাকে জন্মের পর, ৪ দিন এবং ২৮ দিন বয়সে ভিটামিন কে ইনজেকশন মুখে খাওয়াতে হবে।
♦♦♦ প্রতি ঘণ্টায় বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে হবে। তবে প্রথম দিকে মায়ের বুকে দুধ কম থাকে, এ সময় বাচ্চার চাহিদাও কম থাকে।
♦♦♦ নবজাতকের পরিধেয় হতে হবে পাতলা সুতির। কোনো এমব্রয়ডারি, সুতা বা লেসের কাজ করা কাপড় না দেওয়াই ভালো। দোকান থেকে কিনে এনেই বাচ্চাকে কাপড় পরানো যাবে না। প্রথমে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে ও খসখসে ভাব দূর করতে হবে।
♦♦♦ জন্মের পরপরই মাথার চুল কাটার কোনো দরকার নেই। কারণ বাচ্চার মাথার উপরিভাগ তখনো সম্পূর্ণ তৈরি হয় না। তাই চুল কাটতে গিয়ে ওই স্থান কেটে যেতে পারে, ইনফেকশন হতে পারে, বাচ্চার ব্রেইনে আঘাত পেতে পারে।
♦♦♦ বাচ্চার গায়ে তেল, ভ্যাসলিন, লোশন ব্যবহার না করাই ভালো। এসবে বহু শিশুর ত্বকে র্যাশ বা এলার্জি হয়। যদি একান্তই ব্যবহার করতে চান তবে প্রথমে শরীরের কিছু অংশে একটু লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন ত্বকে র্যাশ বা এলার্জি হয় কি-না।
♦♦♦ বাচ্চাকে সব সময় ডায়াপার পরিয়ে রাখবেন না। দীর্ঘসময় ডায়াপার পরিয়ে রাখলে ঘা-ইনফেকশন হতে পারে।
♦♦♦ বাচ্চাকে স্পর্শ করার আগে সাবান পানি বা হেক্সিসল বা স্পিরিট দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
♦♦♦ বাচ্চার গোসলের পানি অন্তত ১০ মিনিট ফুটিয়ে তারপর ঠাণ্ডা করে নিন। গরম পানিতে অসিদ্ধ ঠাণ্ডা পানি মেশাবেন না। গোসলের পানিতে এন্টিসেপটিক যেমন স্যাভলন, ডেটল ইত্যাদি মেশাবেন না। গোসলের স্থান হবে পরিষ্কার।
নতুন মায়ের যত্ন
নবজাতকের যেমন যত্ন দরকার, সে রকম নতুন মায়েরও যত্নের প্রয়োজন। স্বাভাবিক বা অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান ডেলিভারি) যেভাবেই হোক, সন্তান জন্মদানের পরে মায়ের দরকার বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার—যা মা ও শিশু দুজনের জীবনকেই নিরাপদ করে তুলবে।
♦♦♦ সন্তান জন্মের পর মায়ের নিরিবিলিতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। এ সময় বেশি লোকের আনাগোনা না থাকাই ভালো।
♦♦♦ অস্ত্রোপচার বা সিজারিয়ান ডেলিভারির পরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে (অন্তত এক সপ্তাহ) হঠাৎ করে ভয়ংকর মাথা, ঘাড়ে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। তখন প্রচুর পরিমাণ পানি পান, বিশ্রাম, রাতে সঠিকভাবে ঘুম, কম কথা বলা, দুশ্চিন্তা না করা ও তুলনামূলকভাবে নিচু বালিশে শুতে হবে। মা যেন এই পরিবেশ পান, তা পরিবারের সদস্যদের নিশ্চিত করতে হবে।
♦♦♦ স্বাভাবিক ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা হওয়ার পরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। মায়ের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি তাঁর ব্যবহার্য জিনিসপত্রও পরিষ্কার করতে হবে।
♦♦♦ সন্তান জন্মের আগে ও পরে মায়ের হাত-পায়ের নখ ছোট করে কাটতে হবে।
♦♦♦ মাকে কালোজিরা, লাউ, ডাবের পানি, পাতলা করে রান্না করা ডালের পানি ও স্যুপ খাওয়াতে হবে। এটি বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য জরুরি। তবে যেসব মায়ের গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের সময়ে ডায়াবেটিস ছিল, তাঁরা অবশ্যই মিষ্টি খাবার বর্জন করুন এবং নিয়মিত ব্লাড সুগার মাপুন। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়মিত মাপবেন। আর ওষুধ খেতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।
♦♦♦ হাসপাতাল ও বাড়িতে মায়ের ও নবজাতকের জন্য যাঁরা থাকবেন, খেয়াল রাখুন তাঁদের যেন কোনো ছোঁয়াচে রোগ (যেমন: জন্ডিস, দাদ বা ছোঁয়াচে চর্ম রোগ, চোখ ওঠা, বসন্ত, টাইফয়েড, জ্বর, বসন্ত, হাঁচি, কাশি) না থাকে। সম্ভব হলে বাসার মেঝে, মা ও সন্তানের কাপড়ে নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
♦♦♦ সন্তানকে হাসপাতালে মায়ের কাছে দেওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করতে হবে বুকের দুধ পান করানোর জন্য। জন্মের পরপরই দুধ আসে না, তার পরও খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে মায়ের বুকে দুধ উৎপাদন বাড়বে এবং নবজাতকের অভ্যাস হবে।
♦♦♦ ল্যাকটেটিং অন্তর্বাস পরতে পারেন। বুকের দুধ বারবার সন্তানকে খাওয়াতে সুবিধা হবে। দুধ বেশি জমলে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে তাপ দিতে পারেন।
♦♦♦ সন্তান জন্মের দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত দৈহিক সম্পর্ক বন্ধ রাখুন। দেড় মাস পর থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিতে হবে। আর মা হওয়ার পরে ওজন ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন। অল্প অল্প করে হাঁটার পরিমাণ বাড়ান। ছয় মাস ভারী কাজ করবেন না। উঁচু হিল না পরে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরুন। একবারে চার বা পাঁচতলা সিঁড়ি দিয়ে উঠবেন না। হালকা টক ফল খাবেন; যা মায়ের কাটা স্থান শুকাতে সাহায্য করবে। সম্ভব হলে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন।
♦♦♦ গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের পরে অবশ্যই আয়রন ও ক্যালসিয়াম ওষুধ খেতে হবে (এক মাস বা তার বেশি)।
♦♦♦ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না। অনেক ওষুধ দুধের মাধ্যমে নবজাতকের দেহে পৌঁছায়।
গর্ভবতী মায়ের যে টিকা গুলো নেয়া প্রয়োজন
সময়মত সবগুলো ভ্যাকসিন বা টিকা নেওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। আপনি যদি গর্ভবতী হোন বা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট টিকা নেওয়া উচিত। কোন টিকাগুলো আপনি নিবেন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, জীবনযাত্রা, শারীরিক অবস্থা যেমন- ডায়াবেটিস বা হাঁপানি আছে কিনা, আপনি কোথাও ভ্রমণে যাবেন কি না কিংবা আগে আপনি কি কি টিকা নিয়েছেন তার উপর।
সন্তান নেওয়ার আগে আপনার উচিত যে রুটিন টিকাগুলো দেওয়া হয়, সেগুলো ধাপে ধাপে নেওয়া। জন্মের পর আমাদের দেশে বর্তমানে ইপিআই সিডিউলে যেসব টিকা দেওয়া হয়, সেগুলো নেওয়া হয়েছে কি না তা প্রথমেই নিশ্চিত হোন।
গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে যে টিকাটি নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে
রুবেলা টিকা
গর্ভবতী মায়েদের রুবেলার ইনফেকশন হলে সন্তান জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে, এমনকি জন্মের পূর্বেও সন্তানের মৃত্যু হতে পারে। গর্ভবতী হওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার রুবেলা প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে কি না। আমাদের দেশে অধিকাংশ নারীই নয় মাস বয়সেই হামের সঙ্গে রুবেলার টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে থাকেন, আর দ্বিতীয় ডোজটি নিয়ে থাকেন ১৫ বছর বয়সে। যদি আপনার রুবেলা টিকা না নেওয়া থাকে, তাহলে দ্রুত টিকাটি নিয়ে নিন। নিশ্চিত করুন, রুবেলার টিকা নেওয়ার কমপক্ষে এক মাস পর আপনি গর্ভধারণ করছেন। অন্যভাবে বললে, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রুবেলার প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনার শরীরে তৈরি হয়েছে, এটা নিশ্চিত হয়েই গর্ভধারণ করুন।
হুপিং কাশি
এমন একটি রোগ যা গর্ভবতী মায়েদের হলে গর্ভের সন্তানের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে, এমনকি নিশ্বাসও বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হেপাটাইটিস বি
ইনফেকশনের কারণে লিভারের সমস্যা, এমনকি লিভারের ক্যান্সারও হতে পারে। গর্ভবতী মা যদি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত থাকেন, তাহলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় সন্তানেও এই রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের যদি ফ্লু থাকে, তাহলে গর্ভের সন্তানও বিপদের মধ্যে থাকে। মায়ের ফ্লুয়ের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান জন্ম নিতে পারে, সন্তানের আকার এবং ওজন কম হতে পারে, এমনকি মারাও যেতে পারে। তাই প্রতিটি গর্ভবতী মায়েদের হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস বি এবং ফ্লুয়ের টিকা নেওয়া উচিত।
আমাদের দেশে এই তিনটি টিকাই রুটিন ইপিআই সিডিউলে টিটেনাস এবং ডিপথেরিয়ার সাথে তিনবার দেওয়া হয়ে থাকে যথাক্রমে ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ এবং ১৪ সপ্তাহ বয়সে। তাই গর্ভবতী মায়েদের নিশ্চিত হওয়া উচিত বাচ্চাকালে তারা এই টিকাগুলো নিয়েছিলেন কি না। যদি সেই সময়ে না নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে গর্ভধারণের ২৭ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যেই এই তিনটি টিকা একসঙ্গে নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে যেন মা এবং অনাগত সন্তান বিপদমুক্ত থাকেন, সেজন্য প্রতিটি নারীকে ১৫ বছর বয়সে হাম এবং রুবেলার টিকার পাশাপাশি টিটির প্রথম ডোজ, ৪ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ, ৬ মাস পর তৃতীয় ডোজ, ১ বছর পর চতুর্থ ডোজ এবং চতুর্থ ডোজের ১ বছর পর পঞ্চম ও সর্বশেষ ডোজ নিয়ে নেওয়া উচিত।
অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় মায়েরা দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদেরকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ আগেই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত যাত্রাকালে কী ধরনের সতর্কতা নিতে হবে বা কোনো টিকা নিতে হবে কি না। কোন দেশে ভ্রমণে যাবেন সেটার উপরও নির্ভর করে আপনাকে সেই সময়ে বাড়তি কোন টিকাগুলো নিতে হবে। গর্ভবতীকালীন ভ্রমণের সময়ে আপনি যেসব টিকা নিতে পারবেন, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে র্যারবিস এবং মেনিনজাইটিসের টিকা।
মনে রাখতে হবে কিছু কিছু টিকা গর্ভকালীন সময়ে একদমই নিতে পারবেন না,
যেমন- মাম্পস, হাম, রুবেলা, ভ্যারিসেলা (চিকেন পক্স), বিসিজি, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এবং ইয়েলো ফিভারের টিকা। এছাড়াও টাইফয়েড এবং জাপানিজ এনকেফালাইটিসের টিকা গর্ভকালীন সময়ে কতটুকু নিরাপদ সে তথ্য পুরোপুরি এখনো পাওয়া যায়নি। তাই এগুলো পরিহার করাই উচিত। একইসঙ্গে যেসব এলাকায় এসব রোগের প্রাদুর্ভাব আছে গর্ভকালীন সময়ে সেসব জায়গায় না যাওয়াই ভালো। শেষ কথা হচ্ছে, গর্ভকালীন সময়ে যাতে আপনি এবং আপনার অনাগত সন্তান নিরাপদ এবং সুস্থ থাকে, সেজন্য প্রয়োজনীয় টিকাগুলো অবহেলা না করে সঠিক সময়েই নিয়ে নিন।