এস আলম পরিবারের ১০ হাজার কোটির জালিয়াতি নিয়ে দুদকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা

স্ত্রী ও পাঁচ ভাইসহ আসামি ৬৭

চট্টগ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আবার এস আলম গ্রুপ। ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে এবার চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠীটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, তার স্ত্রী ও পাঁচ ভাইসহ মোট ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযোগ, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ব্যাংকের সার্কুলার অমান্য করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া এই ঋণের পরিমাণ মূলত ছিল ৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সুদ–লভ্যাংশ মিলিয়ে তা এখন দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা।

কী রয়েছে অভিযোগে

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি–বিধান উপেক্ষা করে এস আলম গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান—এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম স্টিলস লিমিটেড এবং এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড—এর নামে অনিয়মিতভাবে ঋণ অনুমোদন করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অনুমোদনবিহীন বিনিয়োগ নিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। ২০২২ সালের শেষের দিকে ইসলামী ব্যাংকে অস্বাভাবিক ঋণ বিতরণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

মামলার অগ্রগতি

রোববার (৯ নভেম্বর) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. তানজির আহমেদ গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অনিয়মের কারণে ইসলামী ব্যাংক, সাধারণ আমানতকারী এবং দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কারা অভিযুক্ত

মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, একাধিক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিনিয়োগ কমিটির সাবেক সদস্য, ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং এস আলম গ্রুপের মালিকপক্ষ।

তাদের মধ্যে আছেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হাসান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম, মো. আবদুল হামিদ মিয়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান ও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক ইভিপি মিফতাহ উদ্দীন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, সিলেট জোনের এসডিপি মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আইটি প্রধান মোহাম্মদ সিরাজুল কবির এবং সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আইসিটি উইং প্রধান তাহের আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া মামলায় সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান (এক্সিকিউটিভ কমিটি) আবদুল মতিন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান (এক্সিকিউটিভ কমিটি) মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক সিরাজুল করিম, মো. জয়নাল আবেদীন, কাজী শহীদুল আলম, সৈয়দ আবু আসাদ, তানভীর আহমেদ মো. কামরুল হাসান, খুরশিদ–উল–আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মো. মোসাদ্দেক উল আলম, মো. জাকির হোসেন ও মো. কামাল হোসেন গাজীসহ আরও কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।

এ তালিকায় আরও যুক্ত হয়েছেন সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. ফসিউল আলম, ডা. মোহাম্মদ সালেহ জহর, মো. সোলায়মান ও মো. কামাল উদ্দীন, সাবেক এসএডিপি মোহাম্মদ মোস্তাক আহমদ, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, এসইভিপি আহমেদ জোবায়েরুল হক, এসভিপি এসএম তানভির হাসান, সাবেক এভিপি হোসেন মোহাম্মদ ফয়সাল, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকিজ উদ্দিন, সাবেক বিনিয়োগ প্রধান মো. মনজুর হাসান, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুজ্জামান, সাবেক ডিএমডি মুহাম্মদ সাঈদ উল্লাহ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ কামালউদ্দিন, এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. ফরিদ উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি মো. আবদুল জব্বার, সাবেক ইভিপি মো. শফিকুর রহমান, সাবেক এএমডি মো. আলতাফ হুসাইন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসনে আলম, এএএম হাবীবুর রহমান, মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জি. এম. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের।

অন্যদিকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আব্দুস সামাদ লাভু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনি, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক রাশেদুল আলম, এস আলম স্টিলসের মালিক শহিদুল আলম, এস আলম গ্রুপের পরিচালক ফারজানা পারভীন, ইম্প্রেস কর্পোরেশনের মালিক মো. ইসমাইল, এপারচার ট্রেডিং হাউসের মালিক এসএম নেছার উল্লাহ, দুলারী এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ছাদেকুর রহমান, আহসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. এহসান উদ্দীন, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, আনসার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, জেনেসিস টেক্সটাইল অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসানুল আলম এবং পরিচালক মায়মুনা খানমকেও আসামি করা হয়েছে।

ksrm