s alam cement
আক্রান্ত
১০২১৮২
সুস্থ
৮৬৮৫৬
মৃত্যু
১৩২১

কইয়ের তেলে কই ভাজা হচ্ছে আনোয়ারায় বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণে

অনিয়মের অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

0

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় টেকসই উপকূলীয় বেড়িবাঁধের বড় প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং বিরুদ্ধে। ৫৭৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ কাজে সাগর থেকে ড্রেজিং করে তোলা বালুতে ভরাট করে দেয়া হচ্ছে নির্মিত সড়কের গর্ত। স্থানীয়রা এটিকে ‘কইয়ের তেলে যেন কই ভাজা’ এমনটাই মন্তব্য করেছেন।

টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য বালি ও মাটির আলাদা স্তর ও সংমিশ্রণ বিশেষ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞমহল। শুধু বালি দিয়ে বাঁধ তৈরি হলে সাগরের উত্তাল জোয়ারের তোড়ে মুহুর্তে তা বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা স্থানীয়দের। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং স্বত্বাধিকারী গোলাম মওলা রতন বাঁধে বালি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ণ কুমার ত্রিপুরা জানান, বালি-মাটি মিশ্রণ করেই দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর গত ৩০ বছরে বহুবার আনোয়ারা উপকূলীয় বেড়িবাধ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু কাজের মানে নয়-ছয়ে তিন দশকে সব টাকাই জলে গেছে। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে নয়, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা জোয়ারের পানিতেও এখানে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বছর না ঘুরতেই বিলীন হয়ে যায় বাঁধ।

কইয়ের তেলে কই ভাজা হচ্ছে আনোয়ারায় বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণে 1

বর্তমানে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থসহায়তায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ বছরের পুরোনো বেড়িবাঁধে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। টেকসই উপকূলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্প নামের এই কাজে ৮ থেকে ১০ ফুট গর্ত করে তা বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। যদিও বাঁধের এই ভিত্তি বালি ও মাটির সংমিশ্রনে করার কথা। দূর থেকে মাটি আনার খরচ বেশি ও সহজে সাগর থেকে ড্রেজিং করে বালি তোলা সম্ভব হওয়ায় শুধু বালি দিয়েই কাজ সারছেন এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁধের নিকট থেকে বালি তোলার কারণে বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বললে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কাজের এই অনিয়ম আড়াল করতে প্রকল্প এলাকায় তথ্য সম্বলিত কোন সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি। অনিয়মের প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর ভয় দেখান এবং ঘরে পাঠান পুলিশ।

রায়পুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ গহিরা ছিপাতলী ঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো বেড়িবাঁধে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ৮-১০ ফুট গভীর করে গর্ত করা হয়েছে। সেই গর্তে বঙ্গোসাগরে ড্রেজার বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালুগুলো দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে তৈরি করা গর্তগুলো। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে স্থানীয় লোকজন কাজের নানা অনিয়মের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন।

পানি উন্নন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী শিকলবাহার ইন্দ্রাপুল খালের মুখ থেকে আনোয়ারা উপজেলার বরকল, হাইলধর, বাখাইন, বরুমচড়া, জুইদন্ডী, রায়পুর, বারশত ও বদলপুরা পর্যন্ত উপকূলের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার বিভিন্ন প্যাকেজে ৫৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এ প্রকল্পের অধীনে রায়পুর ইউনিয়নের উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের নাফ নদীর বাঁধসহ দেশের কয়েকটি উপকূলে বাঁধের উপর সড়ক নির্মাণ কাজে মাটি ও বালির সংমিশ্রণ করে দেওয়ার ফলে মজবুত বাঁধ সৃষ্টি হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় রায়পুর ইউনিয়নের উপকূলীয় বেড়িবাঁধে মাটি-বালির মিশ্রণ করে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বেড়িবাঁধে বালি দেওয়ার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং স্বত্বাধিকারী গোলাম মওলা রতন বঙ্গোপসাগর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে মাটি আর বালি মিশ্রণ করে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ণ কুমার ত্রিপুরা জানান, আনোয়ারার উপকূল রক্ষায় সরকারের বরাদ্ধকৃত ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে রায়পুর ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। মূল বাঁধের মাটি খনন করে বালি ও মাটির সংমিশ্রণ করে দেওয়ার নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে। ৮-১০ ফুট পরিমাণ গর্তে বালি দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm