প্রতিদিনের মতোই রাতের খাবার খেয়ে মেয়েকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন আফরোজা আক্তার অ্যানি। দেড় বছরের আকিয়া আয়েশা তখন মায়ের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু সেই ঘুম আর ভাঙেনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের বিবিরহাট বাজারের কামাল ভবনের নিচতলার ঘর থেকে উদ্ধার হয় মা ও শিশুর নিথর দেহ।
নিহত আফরোজা আক্তার অ্যানি (২৫) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আনোয়ার হোসেন বিপুলের স্ত্রী। তাঁদের একমাত্র সন্তান আকিয়া আয়েশা মাত্র ১৫ মাস বয়সী। বিপুল কর্মসূত্রে বাঁশখালীতে থাকতেন, অ্যানি শ্বশুর কামাল উদ্দিন ও মেয়েকে নিয়ে ফটিকছড়ির ওই বাসায় বসবাস করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘুম থেকে না ওঠায় শ্বশুর কামাল উদ্দিন ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে জানালায় উঁকি দিয়ে দেখেন, সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছেন অ্যানি। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, বিছানায় নিথর অবস্থায় পড়ে আছে ছোট্ট আকিয়া।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুর আহমদ বলেন, ‘দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মা মেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। অ্যানির লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং শিশুটির লাশ বিছানায় পাওয়া গেছে।’
ওসি আরও জানান, অ্যানির শ্বশুরপক্ষ জানিয়েছে, তাঁর মানসিক সমস্যা ছিল। তবে পুলিশ কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে এবং অন্য কোনো কারণ জড়িত কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একই ঘটনার বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ধারণা, গৃহবধূ আফরোজা আত্মহত্যার আগে শিশুকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন। সব দিক যাচাই করে তদন্ত চলছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকালে আকিয়া আয়েশাকে গোসল করানোর কথা বলে ঘরে ঢোকেন আফরোজা। ঘণ্টাখানেক পরও কোনো শব্দ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করেন। বারবার ডাকার পর সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন।
এই ঘটনার পর বিবিরহাট বাজারের কামাল ভবনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বলছেন, অ্যানি ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ। কেউ কল্পনাও করতে পারেননি এমন একটি সকাল এতটা শোকে ভরিয়ে দেবে পুরো পাড়া।
আইএমই



