চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী কাদেরের ‘অবৈধ’ সম্পদের খোঁজে দুদক

0

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ফজলুল কাদের। শুরুতেই সিটি কর্পোরেশনের চাকরিতে যোগ দেন ট্রান্সপোর্ট সহকারী পদে। ওই পদে সর্বোচ্চ পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল উপসহকারী প্রকৌশলী পর্যন্ত। কিন্তু সেখানে তার চাকরির অভিজ্ঞতার কথা বলে পদোন্নতি দিয়ে বসানো হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর চেয়ারে। একইসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলী স্কেলের বেতনও। সম্প্রতি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগে ২০২০ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘৩০ বছরে অঢেল সম্পদ চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলীর’- শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুদকে অভিযোগ দেন চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিকের পক্ষে সমর কুমার সাহা।

এরপর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী মির্জা ফজলুল কাদেরের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ৩০ বছরের চাকরি জীবনে অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের অর্জনের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এক অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, সিটি কর্পোরেশনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমাধারী উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের পদসমূহের বেতন স্কেল ২৩০০-৪৪৮০ টাকা। অথচ মির্জা ফজলুল কাদের যান্ত্রিক শাখার প্রকৌশলী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও গত ৩০ বছর ধরে ডিপ্লোামাধারী প্রকৌশলীর স্কেলে বেতন-ভাতা ভোগ করে আসছেন। ১৯৮৮ সালের সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে তার বেতন নির্ধারণ হয় ৮৫০-১৭০০ টাকা। এ পদে যোগদানকারী কর্মকর্তার সর্বোচ্চ পদোন্নতি হওয়ার কথা রয়েছে ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদ পর্যন্ত।

পদোন্নতিতে এমন অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরও ২০১০ সালের ৫ আগস্ট মির্জা ফজলুল কাদেরকে যান্ত্রিক শাখার পুল সহকারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই আদেশে বলা হয়, পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে স্বপদে বদলি করা হল। কিন্তু এতো কিছুর পরও গত কয়েক বছর আগে এই কর্মকর্তাকে ‘অভিজ্ঞতা’র কথা বলে পদোন্নতি দেওয়া হয় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে।

মির্জা ফজলুল কাদের ১৯৯০ সালের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ট্রান্সপোর্ট সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ওই সময় তার বেতন স্কেল ছিল ৮৫০-১৭০০ টাকা। ২০০১ সালে এই যান্ত্রিক শাখার পুল সহকারীগণকে ৩৪০০-৬৬২৫ টাকায় বেতন স্কেল প্রদান করে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করার নির্দেশ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এক অফিস আদেশ জারি করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মির্জা ফজলুল কাদেরের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। সেখানে রয়েছে তার একাধিক দোকান ও স্থাপনা। চট্টগ্রাম শহরে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। তার মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে অংশীদারি ব্যবসার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং রাঙ্গুনিয়ায় গড়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা শত কোটি টাকা বৈধ করতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির পাহাড় এলাকায় জমি কিনে গাছের বাগানও করেছেন তিনি।

এছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য মির্জা ফজলুল কাদেরের রয়েছে দুটি কার। এ দুটি কারের নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৪৫২৫ ও চট্টমেট্রো-গ-১১-১৭৩৯। তবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, মির্জা ফজলুল কাদের ব্যবহৃত দুটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দুই ব্যক্তির নামে। এর মধ্যে চট্টমেট্রো গ-১১-১৭৩৯ নম্বরের প্রাইভেট কারটি সৈয়দ আব্দুল গনির নামে এবং ঢাকামেট্রো গ-১২-৪৫২৫ নম্বরের গাড়িটি মোছাম্মত নাঈমার নামে নিবন্ধন রয়েছে।

মির্জা ফজলুল কাদেরের বিরুদ্ধে তদন্তের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক এনামুল হক।

এএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm