চবিতে ‘আইন না বুঝে’ নিয়োগে অবৈধ হস্তক্ষেপ শিক্ষক সমিতির, দাবি উপাচার্যের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বন্ধে শিক্ষক সমিতি আইন না বুঝেই চিঠি দিয়েছে। এমন দাবিই করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

তিনি নিয়োগ বোর্ড শুরু করার মুহুর্তে শিক্ষক সমিতির হস্তক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কয়েকজন সদস্য উপাচার্য দপ্তরে গিয়ে হট্টগোল বাঁধিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ২৮৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি অনুরোধ না করলে প্রভাষক পদের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে উপাচার্যকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এ ক্ষমতাবলে আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগে শূন্য পদ পূরণে বিজ্ঞাপন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আইন অনুষদের শূন্য পদে প্রভাষক পদে নিয়োগ বোর্ডের পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল রোববার।

রোববার সকালেই এ নিয়োগে পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ নেই উল্লেখ করে বোর্ড বন্ধ করতে উপাচার্য দপ্তরকে চিঠি দেয় শিক্ষক সমিতি। বোর্ড শুরুর আগমুহূর্তের উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক সমিতির কিছু নেতা উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায়ও জড়িয়ে পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো বিভাগ, ইনস্টিটিউটে কোনো শিক্ষকের পদ খালি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, পরিকল্পনা কমিটির মাধ্যমে পদটিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ না করলে সেক্ষেত্রে উপাচার্যকে পদটির বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হল।

এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলা বিভাগ ও আইন অনুষদের শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগে মতামত চেয়ে রেজিস্ট্রার অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ দুই বিভাগ শূন্য অওদে নিয়োগ দিতে রাজি হয়নি। অথচ ২৮৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শূন্য পদে তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।

কিন্তু সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের বাধ্যবাধকতা থাকায় উপাচার্য ২৮৩তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর এই দুই বিভাগে নিয়োগ বোর্ড আহবান করা হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আইন না বুঝে শিক্ষক সমিতি শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে। ২৮৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদি বিভাগ বা ইনস্টিটিউট শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে চিঠি না দেয় তাহলে শূন্য পদ পূরণে উপাচার্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন। পড়াশুনার মান নিশ্চিতে পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ দিবেন। শিক্ষক সমিতিকে আমি বারবার আলোচনার জন্য ডেকেছি। আমি নিজে কল করে শিক্ষক সমিতি সভাপতিকে ডেকেছি। ওনারা আসেন না। নিয়োগ বোর্ড শুরুর করার সময় চিঠি দেওয়া কি অফিসিয়াল আচরণ? বোর্ডতো আমি অনেক আগেই ঘোষণা করেছি। ওনারা আসলে আমি ওনাদের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তসহ আগে যে এভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে সেগুলোর কাগজপত্র দেখাতাম। ওনারা উপাচার্য অফিসে এসে ঝগড়া করে গেলেন। এটাতো কোনো অফিসিয়াল আচরণ হতে পারে না। আমরা সিন্ডিকেটের নিয়ম অনুযায়ী শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দিবো।

উপাচার্য আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দেশের ভোটের পর কে ক্ষমতায় আসবে তাতো বলা যায় না। আমার মনে হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতের জন্য ওনারা শূন্য পদগুলো রেখে দিতে চাইছেন।

বোর্ড বাতিলের দাবিতে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, বিভাগে উপাচার্য ক্লাস নেন। ক্লাস নেন শিক্ষকেরা। শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা ওনারাই বুঝবেন। পরিকল্পনার কমিটিই বুঝবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাগবে কি লাগবে না। যদি উপাচার্য বিশেষভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিতে চান, বুঝতে হবে ওনার কোনো স্বার্থ সেখানে থাকতে পারে। তাই এই বোর্ড বাতিলের দাবিতে আমরা চিঠি দিয়েছি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!