চসিকের তদারকি নেই, আইটি পার্কের লিফটে আটকা পড়ে প্রাণ যাওয়ার দশা

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের আইটি পার্কের লিফটে আটকা পড়েন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী। পরে আটকেপড়াদের লিফট ভেঙে উদ্ধার করা হয়। তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এমন আকস্মিক ঘটনায়।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের লিফটে এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় এই পার্ক। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তির মাধ্যমে এটি নির্মিত হলেও এটির ত্রুটিপুর্ণ কাজের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করা হয়েছিল।

ঘটনার শিকার কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল হক রাসেল বলেন, ‘আইটি পার্কের লিফটে আটকে পড়ে প্রাণ যাবার দশা হয়েছিলো। ওখানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। স্থানীয় এমপি এমএ লতিফ ভাইও অনুষ্ঠানে ছিলেন। দীর্ঘ দেড় ঘন্টা পর যুবলীগের নেতাকর্মীরা লিফটের দরজা ভেঙে আমাদের উদ্ধার করেছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এটি তদারকি করার কথা। কিন্তু নিম্নমানের লিফট লাগিয়ে অব্যবস্থাপনার জন্য সাধারণ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আগ্রাবাদস্থ সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত ৫টি ফ্লোরে নির্মাণ করা হয়েছে এই হাইটেক পার্ক বা আইটি ভিলেজ। পার্কের প্রতি ফ্লোরের আয়তন প্রায় ২০ হাজার বর্গফুট। প্রতি ফ্লোরে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১০০টি আইটি স্টল। স্টলগুলোতে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানসহ আইটি সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু লিফট মেইনটেইন্যান্সই করা হয়নি কখনও।

Yakub Group

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চসিকের যান্ত্রিক ও বিদ্যুৎ উপ বিভাগের দায়বদ্ধতা রয়েছে এতে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ফুড কোর্ট থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করলেও বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় কোনো তদারকি নেই সংস্থাটির।

জানা গেছে, ভবনের পুরো আয়তন প্রায় ১ লাখ বর্গফুট। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জায়গার ওপর নির্মিত এই পার্ক যৌথ ভাবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্মাণ করেছে। পার্কের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জয়েন্ট পার্টনার হিসেবে কাজ করলেও সংস্থাটি বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠে অব্যবস্থাপনায়।

২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আইটি পার্কের ফলক উন্মোচন করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। দেশের ৩৯টি হাইটেক পার্কের মধ্যে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল হাইটেক পার্ক একটি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নজিরবিহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি দায়ীদের বিরুদ্ধে। নগরের বিভিন্ন সড়কে সড়ক বাতি নষ্ট, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় চরম অনিয়ম ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে সংস্থাটিকে। সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক বিভাগেও নানা অনিয়ম ও লুটপাটে জড়িত সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও আইটি পার্কের ভবনটি তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm