মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্বামীকে গরম দুধ খেতে দেন স্ত্রী। আগে থেকেই দুধে ৫টি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেন তিনি। স্বামী প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে বুকের ওপর ওঠে, বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর গভীর রাতে দুই পরকীয়া প্রেমিকের সহযোগিতায় লাশ ভাসিয়ে দেন খালে।
সাড়ে ৪ মাস আগে পরকীয়া প্রেমের জেরে এভাবে স্বামী দিদার আলমকে (২৮) হত্যার কথা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে স্বীকার করেছেন স্ত্রী কোহিনূর আক্তার (২৭)। এ ঘটনায় কোহিনূর ছাড়াও আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহত দিদার আলম (২৮) ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় কৃষক ছিলেন। গ্রেপ্তার অপর তিনজন হলেন—আব্দুল খালেক (৩০), মো. হানজালা (২৬) এবং মো. সেলিম (২৮)। তারা সবাই পশ্চিম কোদালা গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনাটি গত ৩০ মে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার পশ্চিম কোদালা গ্রামের।
রোববার (১২ অক্টোবর) আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন আসামিরা।
এর আগে আদালতে মামলা করার পর দুই মাস ধরে কোনো অগ্রগতি না দেখে দিদারের বাবা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার হস্তান্তরের আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে গত ২ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে ৪ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কোহিনূর ও খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় কোহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন এবং হানজালা ও সেলিমের নাম জানান। শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে হানজালা ও সেলিমকে পিবিআই পশ্চিম কোদালা থেকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই জানিয়েছে, গত ২ জুন দিদারের বাবা জামির হোসেন চন্দ্রঘোনা থানায় ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করেন। সেখানে তিনি ৩১ মে থেকে তার ছেলের কোনো খোঁজ মিলছে না বলে উল্লেখ করেন। প্রায় দুই মাসেও ছেলের হদিস না পেয়ে গত ২৭ জুলাই তিনি ওই চারজনকে আসামি করে আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেন। আদালত মামলার আবেদন সরাসরি এজাহার হিসেবে নিয়ে চন্দ্রঘোনা থানাকে তদন্তের আদেশ দেন। পরে সেটি পিপিআইয়ের হাতে আসে।
গ্রেপ্তার তিনজনের বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন জানান, দিদার খুবই সাধারণ খেটে খাওয়া একজন কৃষক। তার স্ত্রী কোহিনূরের সঙ্গে খালেকের ঘটনার আগে অন্তত ছয় মাস ধরে এবং হানজালার সঙ্গে তিন বছর ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ঘটনার আগে একদিন দিদার ঘরে এসে কোহিনূর ও খালেককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। এরপর দিদার তার স্ত্রীকে মারধর করেন। কোহিনুর এ ঘটনা প্রথমে খালেক এবং পরে হানজালাকে জানান। খালেক এ নিয়ে দিদারের সঙ্গে কয়েক দফা ঝগড়া করে এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
অন্যদিকে হানজালা দিদারকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়ে কোহিনূরকে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ কিনে এনে দেয়। ৩০ মে রাতে দিদারকে গরম দুধের সঙ্গে চারটি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রায় অচেতন করে ফেলেন কোহিনূর। এরপর স্বামীর বুকের ওপর ওঠে নাকে-মুখে বালিশ চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি।
রুহুল আমিন আরও জানান, ঘটনার সময় হানজালা ও তার বন্ধু সেলিম ওই বাড়ির পাশে পশ্চিম কোদালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে লুডু খেলছিল। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে রাত ২টার দিকে ছাতা ও টর্চলাইট নিয়ে কোহিনূর তাদের কাছে আসে। এরপর তিনজন মিলে বাড়িতে গিয়ে দিদারের লাশ ধান শুকানোর প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে অদূরে কোদালা খালে ফেলে দেয়। বৃষ্টির কারণে তখন খালে পানির তীব্র স্রোত ছিল। স্রোতের মধ্যে মরদেহ মুহূর্তেই ভেসে যায়।
তিনি জানান, মূল হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোহিনূর। খুনের পরিকল্পনা করেছিল হানজালা। আর তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেলিমসহ তিনজন মিলে মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে কোদালা খালে ফেলে দেয়। আমরা মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছি। যদিও চার মাস পার হয়ে গেছে, মরদেহ আদৌ পাওয়া যাবে কী না জানি না। পাওয়া গেলে তাদের বক্তব্য সঠিক কী না সেটা প্রমাণ হবে।
ডিজে



