ফেসবুক-মেসেঞ্জারে নারীরা হয়রানির শিকার, যৌন প্রস্তাব আসে ৫৩ ভাগের ইনবক্সে
অনলাইন জরিপের মাধ্যমে সমীক্ষা
দেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। এর বেশিরভাগই ঘটছে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে নারীদের ৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ফেসবুকে, ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ মেসেঞ্জারে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি প্রদান এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব পেয়েছেন।
এছাড়া ইনস্টাগ্রামে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ, ইমোতে ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, হোয়াটসঅ্যাপে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ইউটিউবে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ নারী হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
বান্দরবান, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে অনলাইন জরিপের মাধ্যমে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। সেখানে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৯ জন নারী অংশ নেন।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, ভিডিও কল, মোবাইল ফোন এবং এসএমএসের মাধ্যমেও তারা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী অনলাইনে সহিংসতার মধ্যে ঘৃণ্য ও আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য, ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি প্রদান এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব, ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।
১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি খোলায় তারা হয়রানির শিকার হয়েছে।
অন্যদিকে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বলেছেন, তাদের কার্যকলাপ সব সময় অনুসরণ করা হয় এবং ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছেন।
৩ দশমিক ৬ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, যৌন নিপীড়নের সময় তাদের ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করা হয় এবং সেগুলো পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। ২ দশমিক ৬২ শতাংশ নারী বলেছেন, তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গোপনে পোস্ট করা হয় এবং পরে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলেছেন, তাদের ছবি সম্পাদনা করে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, অনলাইন সহিংসতায় নারীদের জীবনে গুরুতর প্রভাব হলো মানসিক আঘাত, হতাশা ও উদ্বেগ (৬৫.০৭%)। দ্বিতীয় প্রভাব হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বা মতামত প্রকাশ করায় আস্থা হারানো (৪২.৭৯%)। ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন।
সমীক্ষায় বলা হয়, অনলাইন সহিংসতা এবং হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত করেছে। ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী অভিযোগ না দিয়ে নিরব ছিলেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে, ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ জাতীয় জরুরি পরিষেবার (৯৯৯) মাধ্যমে, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ থানায়, ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপির মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন।