চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি জায়গা উদ্ধারে অভিযানের পর থেকে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ ওঠেছে। সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন ভালো কাজের পর থেকেই এ ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের একটি মোনাজাতের ভিডিও নিয়েও অনেকে জল ঘোলা করছে। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এসব অপপ্রচারকে পূর্ব পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। বিভিন্ন প্রার্থীর অনেক কর্মী, সমর্থক, দলীয় নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ ছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। সম্মেলন কক্ষে ওইদিন সকাল ১০ টা হতে সম্প্রীতি সমাবেশ, আসন্ন দুর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক বিশেষ সভা, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের চেক বিতরণের কর্মসূচিও ছিল।
ওইদিন সভাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষের ভিড়ের কারণে সভাকক্ষে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড, মিরসরাইয়ের রেলক্রসিং দুর্ঘটনা ও গত ১৪ সেপ্টেম্বর জোরারগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজন ব্যক্তির আত্মার মাগফেরাত কামনা করার কথা ছিল। এরমধ্যে মনোনয়ন দাখিলের ভিড়ের মধ্যে শ্রমিক লীগ নেতা সফর আলী মোনাজাত ধরেন। সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত অনেকেই মোনাজাত অংশ নেন। এরমধ্যে জেলা প্রশাসক সকলকে মোনাজাত পরিচালনায় নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তবে মোনাজাতে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা মোনাজাতে বলা হয়নি।
আরও জানা গেছে, কোনো দলের পক্ষে ভোট চাওয়া বা জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো কোনো বক্তব্য জেলা প্রশাসক ওইদিন দেননি। আর জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনো দলের কোনো প্রার্থী বা সমর্থক কোনো আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপন করেননি। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনের শত শত প্রার্থী, কর্মী, সমর্থকদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময়ও কোনো প্রার্থী বা কর্মী-সমর্থক কেউ রিটার্নিং কর্মকর্তার কোনো কর্মকাণ্ডে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে—এরূপ আপত্তি বা কথা বলেননি। এ সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নির্বাচন
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান যোগদানের পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ১৬টি পৌরসভার নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কখনো কোনো দল বা প্রার্থী জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা বা ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা সামান্যতম কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান
২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেন মো. মমিনুর রহমান। এরপর থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ১৩৬টি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ৫টি দুর্নীতির মামলায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ৩৯ কারাদণ্ড, ৯৬ জনকে জরিমানা, সাতজনকে চাকরিচ্যুত, ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দণ্ডবিধির আওতায় ২টি, দুদক আইনে মামলা করা হয়েছে ৩টি, ১৯৩ জন দুর্নীতিবাজ ওমেদার ও অস্থায়ী কর্মচারীকে ভূমি অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৮টি সরকারি অফিস যথাক্রমে ভূমি অফিস, তহশিল অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ৭১৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
জঙ্গল সলিমপুরে অভিযান
চট্টগ্রাম জেলার পাহাড় থেকো, ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ৩১০০ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। জেলা প্রশাসকের এ কর্মকাণ্ডে একটি চক্র নানামুখি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের ওপর হামলা ও হত্যার হুমকি
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, উপ পরিচালক (স্থানীয় সরকার) বদিউল আলম, জেলা প্রশাসনের দুজন কর্মচারী এবং নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত একজন আনসার সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। এ সকল ভূমিদস্যু গ্রুপ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং র্যাব-৭ কমান্ডিং অফিসারের ওপরও হামলা করেছে। এ সকল প্রভাবশালী, ভূমিদস্যু এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে হত্যার হুমকিও প্রদান করা হয়েছে। মূলত জঙ্গল সলিমপুরের উচ্ছেদ প্রতিহত করা এবং রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করার জন্য ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট নানামুখি অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘এ সকল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকালীন সময়কার অসত্য সংবাদ কিছু কিছু মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু হওয়ার আগেই বা নোটিশ গ্রহীতারা নোটিশ পাবার পূর্বেই কিছু মিডিয়ায় লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, বিষয়টি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত একটি অপপ্রচার।’
সিএম/সিপি