রোজায় লিভারের রোগীদের যেসব নিয়ম মানতে হবে, যেমন হবে খাবার

ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদের পরামর্শ

0

পবিত্র রমজানে শারীরিকভাবে সক্ষম সবাই রোজা রাখার চেষ্টা করেন। লিভারের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা চাইলে এই সময়টা ভালোভাবে কাজে লাগাত পারেন। এবার জেনে নেওয়া যাক করণীয়—

একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং একিউট লিভার ফেইলার

হঠাৎ করে তীব্র জন্ডিসে আক্রান্ত ‘একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস’ এবং ‘লিভার ফেইলরের’ রোগীদের লিভারের কার্যক্ষমতা অত্যাধিক মাত্রায় কমে যাওয়ায় তারা রোজা রাখতে পারবেন না।

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ

যারা ফ্যাটি লিভারের রোগী, তাদের জন্য রোজা বড় একটি সুযোগ। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, উপবাসের সময় লিভার সেলের নানামুখী তৎপরতায় লিভারে ফ্যাট জমা হতে দেয় না। কাজেই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগ সঙ্গে না থাকলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে উপকৃত হবেন।

ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস-বি এবং সি

হেপাটাইটিস ‘বি’ কিংবা ‘সি’তে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী যাদের শারীরিক তেমন কোনো অসুবিধা নাই এবং লিভার ফাংশন ভালো তারা রোজা করতে পারবেন। তবে যারা এই রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তারা অবশ্যই যথারীতি ওষুধ চালিয়ে যাবেন।

লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার

সাধারণভাবে জটিলতাবিহীন বা ‘কমপেনসেটেড লিভার সিরোসিস’ এর রোগীরা রোজা করতে পারবেন। কিন্তু যাদের জন্ডিস, পা কিংবা পেটে পানি আসা, রক্ত বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে তাদের জন্য রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত কিন্তু লিভার ফাংশন মোটামুটি যাদের ভাল, এবং সোরাফেনিব ওষুধ খাচ্ছেন, তারা রোজা রাখতে পারবেন।

লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট

এই ধরনের রোগীরা লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তত্তাবধানে রোজা রাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কেমন হবে খাবার

ইফতার

ইফতারের সময় প্রচুর পানি এবং তরল খাবার ,কম চর্বিযুক্ত খেতে হবে। এছাড়া রসালো খাবার ও ফল খাওয়া উচিত। কম তেলে ভাজা দু-একটি পেয়াজু , বেগুনি খেতে পারবেন। মাঝারি মাপের একটি জিলাপি এবং ছোট এক বাটি হালিম খেতে পারবেন। আর ইফতারের সময় একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খেলে হজম ভাল হবে।

পানীয়

পানি, দুধ, শরবত, ঘরে বানানো ফলের রসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ চিনি খেতে পারবেন।

খেজুর

ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানরা খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙেন ।লিভারের রোগীরাও প্রতিদিন ইফতারিতে ৩-৪টি খেজুর খেতে পারবেন।

ফল

যে কোনো ধরনের ফল লিভারের রোগীরা খেতে পারবেন, যথেষ্ট পরিমাণ রসালো ফল খেতে পারেন তবে সঙ্গে ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি ফল বেশি খাবেন না।

স্যুপ

ভেজিটেবল, চিকেন অথবা কর্ণ-যে কোনো স্যু খেতে পারবেন।

রাতের খাবার

ইফতারের পর রাতের খাবার হালকা হতে হবে। এ সময় আপনি ভাত অথবা রুটি অথবা পেস্তা খেতে পারেন। সঙ্গে মুরগি, মাছ, সবজি পরিমাণ মতো খেতে পারবেন। এ সময় ফ্যাটি লিভারের রোগীরা টক দই খেতে পারেন।

সেহেরি

সেহেরিতে পরিমিত ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, মুরগি খেতে পারবেন। কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং সঙ্গে কলা খেতে পারবেন।

যা এড়িয়ে চলতে হবে

— অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার,
— ফাস্ট ফুড, গরু ও খাসির মাংস (বিশেষত লিভার সিরোসিস এবং ফ্যাটি লিভারের রোগীরা)
— বড় চিংড়ি
— অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার
— অতিরিক্ত ঝাল খাবার
— কোমল পানীয়

রমজানে ব্যায়াম

শারীরিকভাবে সক্ষম ক্রনিক হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার এবং কমপেনসেটেড লিভার সিরোসিসের রোগীরা ইফতারের পর সাধ্যমত হালকা ব্যায়াম অথবা হাঁটাহাটি করতে পারবেন।

শেষ কথা

তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে লিভারের বিভিন্ন রোগীরা রমজানেও সুস্থ থাকতে পারবেন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, হেপাটোলজি (লিভার) বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm