র‌্যাব-১৫ ঘিরে কক্সবাজারে নানা প্রশ্ন, ইয়াবাকাণ্ডে ৫ দফায় ৬৩৪ জনকে বদলি

জব্দতালিকায় ইট–লাঠি, এজাহারে ভুল পরিচয়

মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালানের অন্যতম রুট কক্সবাজার। জেলার বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার যেন এখানে প্রতিদিনকার ঘটনা। এসব অনিয়ম ও মাদক পাচার রোধ করতে সমুদ্র ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। কিন্তু খোদ র‌্যাব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ—ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে অনিয়ম, আসামির পরিচয় নিয়ে জালিয়াতি, জব্দ তালিকায় অসামঞ্জস্য এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির।এসব ঘটনার প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে তদন্ত দল। এরই ধারাবাহিকতায় তিন প্রজ্ঞাপনে র‌্যাব-১৫ এর প্রায় তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।

৫ প্রজ্ঞাপনে ৬৩৪ জনকে বদলি

র‌্যাব সদর দপ্তরের পাঁচটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, বাবুর্চি, সুইপার, সুবেদার, হাবিলদার, এসআই, নায়েক, করপোরাল, এএসআই, কনস্টেবল, সিপাহিসহ বিভিন্ন পদের ৬৩৪ জন সদস্যের বদলির আদেশ জারি হয়েছে। তিন শতাধিক র‌্যাব সদস্যকে প্রত্যাহার করে অন্যান্য ইউনিটে পাঠানো হয়েছে এবং একই সংখ্যক সদস্যকে অন্য ইউনিট থেকে কক্সবাজারে বদলি করা হয়েছে।

গত ১৯ নভেম্বর জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপনে ১৯৮ ও ২০০ জন সদস্যকে বদলি করা হয়। এর আগে ১২ নভেম্বরের এক প্রজ্ঞাপনে বদলি হয় ৬২ জন। ১৭ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপনে বদলি করা হয় আরও ১০০ জন সদস্যকে। সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর বদলি করা হয়েছে আরও ৭৪ জনকে।

র‍্যাব মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এমজেডএম ইন্তেকাব চৌধুরী জানান, দায়িত্বে এক বছর পূর্তির কারণে লে. কর্নেল কামরুল হাসানকে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন লে. কর্নেল মোহাম্মদ নেয়ামুল হালিম খান পিএসসি।

ইয়াবা আত্মসাৎ ও জালিয়াতি

জানা গেছে, ৭ সেপ্টেম্বর উখিয়া কুতুপালং পশ্চিম পাড়ায় র‍্যাবের অভিযানে দেখানো হয়—৮৯,৬০০ পিস ইয়াবা ও ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৮৩০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে, স্থানীয় সাংবাদিক সেলিম উদ্দিনের বাবার নাম জালিয়াতি করে এজাহারে লেখা, আরেক আসামির সম্পূর্ণ ভুল পরিচয় এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা আত্মসাতের ঘটনা। এরপর র‍্যাব সদর দপ্তরের তদন্ত দল সরেজমিন কুতুপালং সফর করে।

অন্যদিকে টেকনাফ লেদা অভিযানে তালিকায় ‘ইট–লাঠির নাটক’ সাজিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর লেদায় ‘শীর্ষ মাদককারবারি’ জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার দেখায় র‍্যাব-১৫। কিন্তু জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়, ৭টি ইটের টুকরো, ২টি কাঠের লাঠি। যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ব্যঙ্গ–বিদ্রুপ শুরু হয়।

দুটি অভিযানেরই নেতৃত্ব দেন সেই সময়ের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান। তার ঘনিষ্ঠ এফএস কমান্ডার কর্পোরাল ইমাম এ ঘটনার নেপথ্যের কারিগর আলোচনায় আসেন।

উইং কমান্ডার ইন্তেকাব চৌধুরী বলেন, অপরাধে জড়িত যে-ই হোক, র‍্যাব তদন্ত করে শাস্তি দেয়। এখানেও দায়ীরা ছাড় পাবে না।

শুদ্ধি অভিযান নাকি নিয়মিত বদলি

কক্সবাজার–বান্দরবানের র‍্যাব-১৫ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যেসব বিতর্কিত অভিযানে জড়িয়ে পড়েছে, তারই তদন্তের ধারাবাহিকতায় অধিনায়কসহ তিন শতাধিক সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। র‍্যাব বলছে এটি নিয়মিত বদলি, তবে সংশ্লিষ্ট মহল এটিকে শুদ্ধি অভিযানের বড় সিদ্ধান্ত বলেই দেখছে।

এএইচ/ডিজে

ksrm