স্বামীর অবৈধ আয়ে চট্টগ্রাম শহরে স্ত্রীর ছয়তলা বাড়ি, দু’জনই দুদকের মামলায়

চট্টগ্রামের পটিয়ার বেলখাইন গ্রামের বাসিন্দা নূর জাহান বেগমের স্বামী রফিক আহমদ সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহকারী। নূর জাহান বেগম বার্ষিক আয়কর নথিতে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন। স্বামীর অবৈধ আয়ের অর্থে কেনা জায়গায় পটিয়া ও নগরীর কোতোয়ালীর পাথরঘাটায়য় নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুদক স্বামী ও স্ত্রী দু’জনকেই আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদের অর্জনের মামলা দায়ের করে দুদক।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম ভূঁইয়া বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্ত দু’জন হলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার বেলখাইন গ্রামের বাসিন্দা ও সীতাকুণ্ড সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহকারী রফিক আহমদ (৬৪) এবং তার স্ত্রী নূর জাহান বেগম (৫৬)। তারা নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইনের ৫৬ নম্বর রাস্তা ৫৬ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন।

দুদকের মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহকারী রফিক আহমদ ও তার স্ত্রীর নূর জাহান বেগমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অনুসন্ধানের শেষে তার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিল করে দুদক।

২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা বাবু সতীশ লেইনের ৫৬ নম্বর রাস্তা ৫৬ নম্বর ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেন নূর জাহান বেগম। একইভাবে ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পটিয়ায় নিজ এলাকায় কেনা জমিতে দু’তলা বাড়ি নির্মাণ করেন।

দুদক মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, আসামি নূর জাহান বেগম একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বার্ষিক আয়কর নথিতে উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন না। ২০০১-০২ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত নূর জাহান বেগম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কোনো ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেননি।

২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ এই তিন অর্থবছরে কমিশন এজেন্ট ও সরবরাহকারী হিসেবে মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হলেও তিনি কোনো ব্যবসায়ী ছিলেন না। দুদক তদন্তকালে তার প্রতিষ্ঠানের নামে দায়-দেনা, মুনাফা ও প্রত্যাহিক লেনদেনের রেজিস্ট্রার সংক্রান্ত নূর জাহান বেগমের কোনো ধরনের রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি।

অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৭৯ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৪ টাকা সম্পদের মিথ্যা তথ্য প্রদান ও ১ কোটি ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৪২১ টাকার সম্পদের তথ্য জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা তৎসহ দন্ডবিধি ১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম।

এমএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!