১০০ কুস্তিগির লড়বে শতবর্ষী ঐতিহ্যের জব্বারের বলীখেলায়, বিকেলেই শুরু

0

দুই বছর পর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আসর বসতে যাচ্ছে আজ বিকেল ৩টায়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কুস্তিগীর খেলায় অংশ নিতে তাদের নাম নিবন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। নিবন্ধিতদের মধ্যে ১০০ কুস্তিগীর মুল খেলায় অংশ নেবেন।

লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় মাঠের পাশে বালু দিয়ে বানানো অস্থায়ী মঞ্চে হবে এবারের বলী খেলা। এই উৎসবের আমেজে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলি খেলা উপলক্ষে বৈশাখী মেলা।

করোনাভাইরাসের কারণে গেল দুই বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও মেলার আয়োজন নিয়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। অবশেষে রোববার (২৪ এপ্রিল) থেকে আবার শুরু হয়েছে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের এ মেলা। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) মেলা শেষ হবে।

লালদিঘী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাটির তৈজসপত্র, খেলনা আর বাঁশ-বেত, মুড়ি-মুড়কি, গাছের চারা, ফুলঝাড়ু, হাতপাখাসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি ও লোকজ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বিকিকিনি শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র। মাটির তৈরি ঘর সাজানোর বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনার পুতুল, টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও নানা আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কয়েকজন দোকানি। মেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

মাটির তৈরি জিনিস বিক্রি করার জন্য গাজীপুর থেকে মেলায় এসেছেন বিপ্লব পাল। তিনি ফুলের টব, মূর্তি, হাড়ি-পাতিল, কাপ-প্লেট ও ডেকচি নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘১২ বছর ধরে মেলায় দোকান দেই। কিন্তু করোনার কারণে মাঝে দুই বছর মেলা বন্ধ থাকায় আসা হয়নি।’

আরেক বিক্রেতা জাহেদুল ইসলাম এসেছেন কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে। তিনি বলেন, ‘৬ লাখ টাকার কাঠের জিনিস নিয়ে মেলায় এসেছি। আশা করছি সবগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। সকাল থেকে কিছু ক্রেতা আসছে। আজকে বেচাকেনা বেশি হবে বলে আশা করছি।’

ঢাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য মেলায় নিয়ে এসেছেন মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে মেলায় আসি। গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা হয়নি, তাই আসা হয়নি। সকাল থেকে ক্রেতারা আসছে। আশা করি সন্ধ্যার পরে মেলায় ভিড় আরও বাড়বে।’

চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে বলীখেলা প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন।

১৩১৬ বাংলা ১২ বৈশাখ (১৯০৯) সালে প্রথম এই বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১০তম আসর পর্যন্ত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। বলি খেলা ঘিয়ে কয়েকদিন ধরে উৎসবমুখর মেলার প্রচলন সংযুক্তি চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়।

ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এই বলি খেলা ও মেলার পরিধিও জনপ্রিয়তা ব্যাপকতা লাভ করে। চট্টগ্রাম পৌরসভা পরে সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মেলা কমিটি প্রতি বছর ১২ বৈশাখ বলি খেলার আয়োজন করে আসছিল।

এর মধ্যে করোনার ভয়াবহতায় ২০২০ ও ২০২১ সালে বলি খেলা ও মেলা স্থগিত করা হয়। এবার বলি খেলা ও মেলার ১১৩তম আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বলীখেলা ও মেলা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘এবার মাঠ নিয়ে সংকটে পড়লেও চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপে নির্দিষ্ট সময়েই এ আয়োজন হচ্ছে। সোমবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ১০০ কুস্তিগীরের মধ্যে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে। খেলা হবে ৫০ রাউন্ড। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ বিজয়ীকে ট্রফিসহ প্রথম থেকে চতুর্থ বিজয়ীকে নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে। খেলার একদিন আগে থেকে শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। এ উপলক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে এক হাজারের বেশি দোকানি মেলায় হাজির হয়েছেন।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর) শাহাদাত হুসেইন রাসেল বলেন, ‘২৫ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগরীর লালদীঘি এলাকায় বৈশাখী মেলা চলবে। মেলা চলাকালে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আগত লোকজনের সমাগমের কারণে মেলা কেন্দ্রিক আশপাশের এলাকা ও লালদীঘি অভিমুখী সব প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’

এদিকে মেলা চলাকালে নগরীর বিভিন্ন সড়ক বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। মেলা চলাকালে আন্দরকিল্লা মোড় (জামে মসজিদের সামনে) থেকে বক্সিরহাট-লালদীঘিগামী রাস্তা বন্ধ থাকবে।

জেলা পরিষদ মার্কেট থেকে টেরিবাজার-আন্দরকিল্লাগামী রাস্তা, সিনেমা প্যালেস থেকে কেসি দে রোড হয়ে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত রাস্তা, জহুর হকার্স/মহল মার্কেট থেকে বাটা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা, টেরিবাজার ফুলের দোকান থেকে টেরিবাজারগামী রাস্তা, আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ থেকে টেরিবাজারগামী রাস্তা বন্ধ থাকবে।

তবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং রোগীদের আসা-যাওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। টেরিবাজার, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাইগামী সব ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি, বড় গাড়ি রাজাখালী দিয়ে প্রবেশ করে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে বের হয়ে যাবে।

আরএম/এফএমও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm