চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে একটি বৈশাখী মেলা (গড়িয়া মেলা) বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় হিঙ্গুলী ২ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলাটি একক সিদ্ধান্তে বন্ধ করে দেন তিনি।
মেলা বন্ধের জন্য চেয়ারম্যান নিরাপত্তার অজুহাত দেখালেও পুলিশ বলছে, মেলাস্থলে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে— এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তাছাড়া মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি দলও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। পূর্বঘোষণা ছাড়াই মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এতে মালপত্র নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।
মেলার আয়োজনের সাথে যুক্ত থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় খীল হিঙ্গুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনেক বছর ধরে পয়লা বৈশাখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে একটি বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়ে আসছিল। স্থানীয় লোকজনের আয়োজনে এক দিনের এ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর আবার মেলা উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয় মাঠে দোকানিরা যখন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছিল, তখন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া এসে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মেলা বসাতে নিষেধ করেন। চেয়ারম্যানের বাধা পেয়ে মেলায় পণ্য বিক্রি করতে আসা প্রায় ১০০ দোকানি মালপত্র নিয়ে ফিরে যান।
মেলা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের একজন সঞ্জয় মজুমদার জানান, চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো কমিটি বা কারও অনুমতি ছাড়াই এ বৈশাখী মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার অনুমতি না নেওয়ার কথা বলে মেলার দিন সকালে এসে চেয়ারম্যান মেলা বন্ধের নির্দেশে দেন। যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া এ মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষ হতাশ হয়েছে।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন থেকে মেলায় খেলনাসামগ্রী বিক্রি করতে আসা মো. আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে এই মেলায় এসে খেলনাসামগ্রী বিক্রি করেছি। লাভের আশায় এবারও এসেছিলাম। কিন্তু পূর্বঘোষণা ছাড়াই মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় আমার বড় ক্ষতি হয়েছে।’
ঐতিহ্যবাহী মেলাটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, ‘পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মেলাটির কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। মেলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে বা কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাছাড়া মেলার নামে সেখানে মাদকের আড্ডাসহ বিভিন্ন অপকর্ম হয়। পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া মেলা আয়োজন করলে যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে মেলা পরিচালনার জন্য তাদের একটি কমিটি গঠন করতে বলি।’
তিনি আরও বলেন, মেলা একেবারে বন্ধ করা হয়নি। যে সকল ব্যবসায়ী নিরাপত্তাশঙ্কা করেছেন তারা চলে গেছেন।’
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নূর হোসেন মামুন বলেন, ‘পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় মেলা আয়োজনে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে, এমন কিছু কেউ জানাননি আমাকে। বরং ওই মেলার আয়োজন হলে সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের পুলিশ সদস্যের একটি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেছেন মেলাটি এবার হবে না। মেলায় নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল আমাদের।’
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বৈশাখী মেলা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। মেলা করা বা বন্ধ করার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি।
সিপি