আশুতোষ মজুমদার ও আবু বক্কর পরশ। দুজনই রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিপাহী। তবে তাদের পদবী সিপাহী হলেও আশুতোষ চালান আরএনবি চট্টগ্রামের বিভাগের কমান্ড্যান্ট রেজওয়ান-উর-রহমানের গাড়ি। আর বক্কর করেন কমান্ড্যাটের ঘরের বাজার-সদাই ও গৃহস্থালির কাজ। গাড়ি চালালেও আশুতোষ সবসময় চলাফেরা করেন হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে। নিজেকে কমান্ড্যান্টের ‘খাস লোক’ পরিচয় দেন।
এখানেই শেষ নয়, আশুতোষের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি-মারধরসহ নানা অভিযোগ । এছাড়া তাকে সিআরবির গোয়েন্দা শাখায় বদলি করা হলেও তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেননি। বরং তেলবাহী ট্রেনের বিভিন্ন জেলায় স্কট ডিউটি দেখিয়ে প্রতি মাসে তুলে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। তার দৌরাত্ম্যে অসহায় আরএনবির বাকি সদস্যরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আশুতোষ মজুমদার ২০০৪ সালে প্রহরী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এরপর সিআরবি রেলওয়ে সংকেত কারখানা ও পলোগ্রাউন্ড টিএ ব্রান্ডে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান-উর-রহমানের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠলে ২০২৩ সালে তাকে মৌখিক নির্দেশে চট্টগ্রাম কমান্ড্যান্টের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তখন থেকে তিনি মো. রেজওয়ান-উর-রহমানের গাড়ি চালানো শুরু করেন।
এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে তাকে সিআরবি গোয়েন্দা শাখায় বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির পরও সেখানে তিনি কখনও দায়িত্ব পালন করেননি। বরং তেলবাহী ট্রেনে সিলেট রংপুর, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন জেলায় স্কট ডিউটি দেখিয়ে যাতায়াত ভাতা (টিএ) ১০-১২ হাজার ও বেতন ২৫ হাজার টাকাসহ মোট ৩৫-৩৭ হাজার টাকা তুলে নিচ্ছেন প্রতিমাসে। এছাড়া আশুতোষ যার পরিবর্তে গাড়ি চালান সেই ইউসুফও গাড়ি না চালিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ওভারটাইম ও বেতন ৪৫ হাজার টাকাসহ প্রতিমাসে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা তুলে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, গোয়েন্দা শাখায় দায়িত্ব পালন না করেও আশুতোষকে নিয়মিত সেখানে হাজিরা দেখানোর কাজে সহায়তা করছেন গোয়েন্দা শাখার চিফ ইনস্পেক্টর আমিনুল হক।
এ বিষয়ে চিফ ইন্সপেক্টর আমিনুল হক জানান, চাকরি বাঁচাতে করতে হয় এবং উপরের নির্দেশনাও মানতে হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আশুতোষ সিআরবি পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায় হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে সবসময় চলাফেরা করেন। কমান্ড্যাটের নাম ভাঙিয়ে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ, স্টোরসহ ঝাউতলা আশপাশের এলাকার লোহা ও ভাঙ্গারি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়সহ নানা অপকর্ম করে বেড়ান।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি খুলশী এলাকায় মো. রানা নামের এক চালককে মারধর করে ১২ ঘণ্টা খুলশী থানায় আটক ছিলেন তিনি। পরে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন আরএনবির সদস্যরা।
এদিকে আরেক সিপাহী আবু বক্কর পরশের চাকরিস্থল খুলশী ট্রেনিং সেন্টারে হলেও ২০২৩ সাল থেকে তিনিও কমান্ড্যান্ট রেজোয়ান উর রহমানের পরিবারের বাজার-সদাই করাসহ গৃহস্থালির কাজ করছেন। তবে তারা দুজন কমান্ড্যান্টের ব্যক্তিগত কাজ করলেও রেলওয়ে কোষাগার থেকে নিয়মিত তুলছেন বেতন-বোনাস।
জানতে চাইলে আশুতোষ মজুমদার অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওয়াকিটকি আমার স্যারের। আমি চাঁদাবাজি করি না। চাকরি বাঁচাতে সিনিয়রদের কথা শুনতে হয়। না হলে চাকরি করা যায় না।’
গোয়েন্দা শাখায় চাকরি হলেও কমান্ড্যান্টের গাড়ি চালানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। গাড়িচালককে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তেমন কিছু না, একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। পরে মারামারির ভিডিওর কথা জানালে বলেন, সবকিছু যখন জানেন তখন নিউজ না করে বসে আছেন কেন?’ পরে তিনি নিউজ না করারও তদবির করেন।
জানতে চাইলে সিপাহী আবু বক্কর বলেন, ‘আমি ট্রেনিং সেন্টারে ডিউটি করি। তবে মাঝেমধ্যে কমাড্যান্ট স্যারের বাসায় কাজে যায়।’
গাড়িচালক আবু ইউসুফ বলেন, আমি কমান্ড্যান্ট স্যারের গাড়ি চালাই। আমি অসুস্থ থাকলে আশুতোষ মজুমদার চালায়। দুজনে মিলেমিশে চালায়। তবে আশুতোষ সবসময় চালান না।
এসব বিষয়ে জানতে আরএনবি চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান-উর-রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
সিএম