চট্টগ্রামের বাজারে ‘মিনিকেটে’র ধোঁকা, আড়ালে আতপ-সিদ্ধ চাল

ভারতীয় ‘মিনিকেট’র বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

আতপ, সিদ্ধ ও আধা সিদ্ধ চালকে মিনিকেট নামে চালিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন চাল ব্যবসায়ীরা। অথচ দেশে মিনিকেট নামের কোনো ধান নেই। সাধারণ ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে গেলেও এবার নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ মিনিকেট চাল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়েছে।

একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনাজপুরের বেশিরভাগ চাল মিল থেকেই মোটা চাল সরু করে বানানো হয় মিনিকেট। এ মিনিকেট নাম দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি, বাহারি ট্রেডমার্ক দিয়ে বস্তার গায়ে মার্কা ব্যবহার করে বিক্রি করছে এসব চাল।

চাক্তাইয়ের চাল বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১২ ধরনের মার্কা ব্যবহার করে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট চাল। মিনিকেটের মধ্যেও আতব, সিদ্ধ, আধা সিদ্ধ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত চালগুলো। হরিণ, হাতি, ঘোড়া, গোলাপ ফুল, আপেল, সেতু, সূর্য ও চাবি মার্কার মিনিকেট চালে ভরে গেছে চাক্তাইয়ের বাজার। মার্কাভেদে আছে দামের তারতম্যও। চাবি মার্কা মিনিকেট ২৫ কেজির প্রতি বস্তা এক হাজার ৪০০ টাকা, সেতু মার্কা এক হাজার ৫০০, সূর্য মার্কা এক হাজার ৫৫০, আপেল মার্কা এক হাজার ৬০০, গোলাপ ফুল মার্কা মিনিকেট এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রত্যেকটি মার্কা সিদ্ধ চালের ক্যাটাগরিতে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি। আর আধা সিদ্ধ ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

তবে এবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মোটা চাল সরু বা চিকন করে মিনিকেট নামে বিক্রি করতে পারবে না ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্যরাও এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

বুধবার (৫ অক্টোবর) গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি) পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না। চালের মিলেই বস্তার ওপরে ধানের জাতের নাম লিখে দিতে হবে। কেউ এর ব্যতিক্রম করলে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Yakub Group

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার চালের নাম মিনিকেট লিখতে নিষেধ করছে। তাতে ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা নেই। সরকারের নির্দেশনা মতে, ব্যবসায়ীরা কাজ করবে। কিন্তু এ মিনিকেট নামে ভারত থেকেও বেশ কিছু চাল দেশে আসে। সেগুলোর বিষয়েও সরকারের নির্দেশনা প্রয়োজন।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ‘মিনিকেট ও কাটারি—এই দুই নামের কোনো ধান নেই। তবে এ চালগুলো আসে কোথা থেকে? আমাদের দেশের স্থানীয়ভাবে ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়। কিন্তু সেই দেশি চালের মূল্যায়ন হয় না। মিনিকেট আর কাটারির মাঝে দেশীয় চাল পিছিয়ে। তাই সরকার যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এই নামে যাতে চাল বিক্রি না হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান দরকার।’

এএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm