s alam cement
আক্রান্ত
৯৫০৪৪
সুস্থ
৬১৫০২
মৃত্যু
১১২৮

চট্টগ্রামে করোনার ভয়ে ডাক্তার এড়িয়ে আশকারা পাচ্ছে অন্য রোগ, রুটিন চেকআপে হেলাফেলা

0

করোনার কারণে অন্য সব জটিল রোগীদের নিয়মিত যে রুটিন চেকআপের দরকার পড়ে, তা এখন প্রায় বন্ধ হয়েই রয়েছে। রোগী ও রোগীর স্বজনরা এই করোনাকালে সংক্রমণের অবস্থা দেখে রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। আর এই রুটিন চেকআপে দীর্ঘদিন ধরে বিরতি পড়ে যাওয়ায় এদের অনেকেই এখন অন্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

অন্যদিকে চিকিৎসকরাও আগের মতো রোগী দেখতে এখনও সেভাবে স্বস্তি বোধ করছেন না। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কেউ কেউ বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ডাক্তাররা ব্যক্তিগত চেম্বার ও হাসপাতালে রোগী দেখছেন। তাই রোগীদের রুটিন চেকআপ প্রতিমাসে না হলেও দুই তিন মাস পরপর করা উচিত। যেভাবেই হোক না কেন, ডাক্তারের কাছে অবশ্যই যাওয়া উচিত।

চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী ও পুরুষ উভয়েরই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি আছে। নারীদের অবশ্য এর বাইরে আরও কিছু রোগের ঝুঁকি থাকে, যেখানে রুটিন পরীক্ষা খুবই জরুরি। যেমন স্তন ক্যানসার, জরায়ু বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার। আবার কিছু রোগ আছে, যা নারীদেরই বেশি হয়। যেমন থাইরয়েডের সমস্যা বা নানা ধরনের বাত। তাই নারীদেরও রুটিন পরীক্ষার দরকার আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, পূর্ণবয়স্ক নারীদের বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ মাপা উচিত। ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রক্তে শর্করা বা চর্বি পরীক্ষাও করা উচিত।

চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত বা রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক অজ্ঞাত রোগকে আগে নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এতে সম্ভাব্য অনেক জটিলতাও এড়ানো যায়। পরিবারে নানা রোগের ইতিহাস, মুটিয়ে যাওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন ইত্যাদি সাধারণত নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই সময় থাকতেই সতর্ক হওয়া উচিত।

করোনার এই সময়ে দুর্বিসহ এক জীবন যাচ্ছেন বিশেষ করে ক্যান্সার রোগীদের। চোখ ও দাঁতের সমস্যা যাদের, তারাও দারুণ দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। ক্যান্সারের মত জটিল রোগে ভুগছেন যারা, তাদের নিয়মিতই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। অথচ এই করোনাকালে তাদের সংখ্যাও কমে গেছে— বলছেন চিকিৎসকরাই।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শিউলী মজুমদার জানান, শুরুতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কোনো রোগী এলে তাকে কয়েকটা পরীক্ষা করাতে বলা হয়ও। এই পরীক্ষাগুলোতে দেখা যায় তার অন্য কোনো রোগ রয়েছে কি না। যেমন এটা কি প্রাইমারি হাইপারটেনশন, নাকি সেকেন্ডারি কোনো কারণে তার ব্লাড প্রেসারটা বেড়ে গেছে? এতোদিন কি নিরবে বহন করছিল রোগটি? চিকিৎসকের কাছে এসেই কি ধরা পড়েছে সেটা?

Din Mohammed Convention Hall

বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রুটিন চেকআপে প্রস্রাবের পরীক্ষা, গ্লুকোজ, প্রোটিন রয়েছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে গ্লুকোজ, প্রোটিন রয়েছে কিনা, সেটা দেখা হয়। একটি ইসিজি করে দেখা হয়, ইসিজিতে কোনো পরিবর্তন রয়েছে কিনা। ব্লাড সুগার দেখা হয়। থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করে দেখা হয় তার হাইপারথাইরয়েডিজম রয়েছে কিনা। ইলেকট্রোলাইটি করি। দেখি তার ছোটবেলা থেকে অন্য কোনো রোগ রয়েছে কিনা।’

তিনি বলেন, ‘ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেলে তখন আমরা রোগীকে রুটিন ফলোআপে রেখে দেই। তখন তাকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। দুই থেকে তিন মাস পর পর রোগীকে রুটিন চেকআপে আসতে বলা হয়। কিন্তু রুটিন চেকআপ না হলে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থেকে অন্য সব জটিলতা নিয়ে রোগ কিডনির দিকে চলে যাবে। হৃদযন্ত্রেও বাসা বাঁধবে অন্য রোগ।’

রুটিন চেকআপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, যদি ক্রনিক ডিজিজ বা রোগ থাকে যেমন হাইপ্রেসার, হাই সুগার— তাহলে অতি অবশ্যই মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। হৃদযন্ত্রের কোনও রকম সমস্যা থাকলে, তাহলে একটু কম সময়ের ব্যবধানে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কারও মধ্যে কোনও ক্রনিক ডিজিজ যেমন প্রেসার বা সুগারের সমস্যা থাকে তাহলে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মে কিছুটা বদল আসবে। সেক্ষেত্রে বছরে অন্তত দু থেকে তিনবার রুটিন হেলথ চেকআপ করাতে হবে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের সমস্যা, হাইপ্রেশারের ফলে হাইপারটেনসনের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকআপে যেতে হবে।’

তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই করোনাকালে বেশিরভাগ জটিল রোগীই ডাক্তারের কাছে গিয়ে রুটিন চিকিৎসা করাতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ বাসায় প্রাইভেট ল্যাব থেকে প্যাথলজিস্ট ডেকে এনে রক্ত দিচ্ছেন। মুঠোফোনে জেনে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় কয়েকটি ডায়াগনসিস পরীক্ষার ফলাফল। কিন্তু তাতে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ল্যাব আলাদা চার্জ নিয়ে এই ধরনের সেবা দিয়ে আসলেও মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তরা পড়ছেন বড় অর্থঝুঁকিতে।

চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদ নবীর বাড়িতে তার সঙ্গে মা ও বাবা থাকেন। মায়ের হার্টে রিং পরানো হয়েছে, আছে ডায়াবেটিসও। অন্যদিকে বাবা প্রেসার ও কিডনির রোগী। আসাদ নবী আগে প্রতি মাসে কিংবা দুই মাস পর পর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেন দুজনকেই। কিন্তু করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় গত অন্তত সাত মাস ধরে বাবা-মাকে আর বাড়ির বাইরে নেননি। ‘এখন বাবা-মা প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতার কথা বলেন। অথচ আগে এরকম হয়নি’— এমনটি জানিয়ে আসাদ নবী বলেন, ‘বাড়িতে তো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডেকে এনে দেখানোও সম্ভব না। কী যে একটা খারাপ সময়ের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে, বোঝানো মুশকিল।’

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, ‘আমার যেসব রোগী আগে থেকে ছিল, তাদের এখন কম দেখি। দীর্ঘদিন আমার অধীনে চিকিৎসায় রয়েছে, এমন রোগীর সংখ্যা কম না। কিন্তু সেই পরিচিত মুখগুলো সেভাবে আর দেখছি না। অনেকে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে বলে, করোনার ভয়ে তারা চেম্বারে আসতে ভয় পাচ্ছেন।’

প্রবীণ এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি নিয়মিত চেম্বার করছি। তাই রোগীকে অবশ্যই রুটিন চেকআপে আসতে হবে। যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে একটা রুটিন চিকিৎসায় থাকতে হয়। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। না হলে যে কোনো সময় হার্ট ফেইলর হয়ে যেতে পারে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই রোগীদের রুটিন চেকআপ কখনোই বাধাগ্রস্থ করা যাবে না।’

লালখানবাজারের বাসিন্দা ব্যাংকার দিবাকর ঘোষের ৭০ বছর বয়সী মায়ের চিকিৎসা আটকে ছিল লকডাউনের কারণে। তিনি বললেন, ‘ডায়াবেটিসে ভোগা মাকে নিয়ে চলতি মাসের ৮ তারিখে চেকআপের জন্য যাবার তারিখ ছিল, কিন্তু বের হবার সাহস করি নাই আমরা।’

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm