চট্টগ্রামে মডেলের আত্মহনন অভিমানে, অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে ‘প্রেমিক’

প্রেমিকের সঙ্গে কথার পরই গলায় ফাঁস

0

চট্টগ্রামের এক মডেলের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর চান্দগাঁওয়ে বাসার সিলিংয়ের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে রিয়া শর্মা নামের ওই মডেল। এ নিয়ে মেয়েটির পরিবার দোষ চাপাচ্ছে প্রেমিকের ওপর। কিন্তু প্রেমিক বলছেন, পরিবারের কলহের কারণেই রিয়া আত্মহত্যা করেছে।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে পুরাতন চান্দগাঁও পাঠানিয়াগোদার একটি ভবনের ৪র্থ তলায় এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

নিহত রিয়া শর্মা (১৮) রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া পথেরহাট মানিক শীলের বাড়ির ওমানপ্রবাসী সন্তোষ শর্মার মেয়ে। সে পরিবারের সঙ্গে পুরাতন চান্দগাঁও এলাকায় থাকতো।

রিয়া অপর্ণাচরণ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। একইসঙ্গে ওয়াসা মোড়ের প্রমোট একাডেমির নামক এক মডেল ইনস্টিটিউটেরও ছাত্রী ছিলেন।

জানা যায়, ওয়াসা মোড়ের প্রমোট নামে একটি প্রশিক্ষণ র‍্যাম্প একাডেমি রয়েছে। সেখানে র‍্যাম্পের প্রশিক্ষণ নিতো রিয়া শর্মা। একবছর আগে ওই একাডেমির শিক্ষক মিঠু ভৌমিকের সঙ্গে রিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরমধ্যে তারা দুজনের সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

রিয়ার বন্ধুদের দাবি, রিয়ার কিছু অন্তরঙ্গ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় প্রেমিক মিঠু। তাই অপমানে আত্মহত্যা করে রিয়া। তবে মিঠু দাবি করেন, রিয়ার বাবা ও মায়ের কারণেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে সে।

রিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা౼এমন প্রশ্নের উত্তরে রিয়াকে প্রথমে ‘বোন’ হিসেবে পরিচয় দেন মিঠু। পরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এক বছর আগে থেকে আমাদের সম্পর্ক। গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত আমাদের প্রেম ছিল। তবে গত একসপ্তাহ ধরে রিয়া সম্পর্কটি ছিন্ন করতে চাচ্ছিল। তাছাড়া রিয়া আমাদের মডেলিং একাডেমির ছাত্রী ছিল। তবে বেশ কিছুদিন ধরে সে অনিয়মিত হয়ে উঠেছিল।’

রিয়ার অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠু বলেন, ‘না আমাদের কোনো অন্তরঙ্গ ছবি নেই। কারণ আমি তাকে সত্যিই ভালবাসতাম, তাই কখনও আমরা ফিজিক্যাল রিলেশনে জড়ায়নি। যেহেতু অন্তরঙ্গ কোনো মুহূর্তই ঘটেনি সেখানে ছবি আসবে কোত্থেকে?’

পারিবারিক কলহের কারণে রিয়া আত্মহত্যা করেছে দাবি করে মিঠু বলেন, ‘রিয়ার বাবা বিদেশে থাকত, কিন্তু তিনি কোনো টাকা-পয়সা দিতেন না। এটা নিয়ে রিয়ার সঙ্গে তার মা-বাবার ঝগড়া চলছিল। এই কারণে অভিমানে সে হয়তো আত্মহত্যা করেছে।’

এদিকে রিয়ার মামা অপু শীল বলেন, ‘প্রেমঘটিত ব্যাপারেই আমার ভাগনি আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।’

আত্মহত্যার দায় পরিবারের ওপর চাপালেও রিয়ার সঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ঝগড়া হচ্ছিল জানিয়ে মিঠু বলেন, ‘এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক থাকার পরও গত কয়েকদিন ধরে সম্পর্কটি ভাঙতে চাচ্ছিল রিয়া। আত্মহত্যার তিনদিন আগেও সে পরিবারের কাউকে এমনকি আমাকেও কিছু না বলে একা কক্সবাজার চলে যায়। পরে ঘটনাটি আমি জানার পর তাকে বকা দিলে সে আমাকে ‘কেন কৈফিয়ত দিতে হবে’ বলে রাগারাগি করে। এরপর সে একটি সিগারেট খেতে খেতে আমাকে ভিডিও কল দিয়ে বলে সে নষ্ট হয়ে যাবে। আমি তাকে অনেক বুঝিয়ে বললেও আমার কোনো কথা শুনতে চাইছিল না সে। তাই আমি সিগারেট খাওয়ার ভিডিওর একটা স্ক্রিনশর্ট নিয়ে ওর মাকে দেখাই। এটা নিয়ে সে আমার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া শুরু করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে মৃত্যুর আগে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আমার সঙ্গে ওর হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। আমাদের সম্পর্কের কথা দু‘জনের পরিবার জানলেও আমার চাকরি না থাকায় সম্পর্ক মেনে নিতে চাইছিল না তার পরিবার। কথার এক ফাঁকে সে পরিবারের সমস্যাগুলোর কারণে আর বাঁচতে চায় না বলে জানালে আমি তাকে স্বান্ত্বনা দিতে থাকি এবং কথা শেষ করে ফোন রেখে দিই। এর পরদিন (বুধবার) সকাল ৮টায় রিয়ার নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে রিয়ার ছোট ভাই একটি ভয়েস রেকর্ড পাঠায় আমায়। সেখানে আমাকে ‘দেখে নেওয়া’, ‘মেরে ফেলার’ হুমকি দেওয়া হয়। প্রথমদিকে রিয়ার ভাই মজা করছে মনে করলেও সকাল ১০টার দিকে জানতে পারি রিয়া আর পৃথিবীতে নেই।’

বিএস/আরএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm