চট্টগ্রাম-ঢাকায় বস্তির লোকের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি বেশি

বস্তির পাশের এলাকায়ও অ্যান্টিবডি মিলেছে কম

0

ধনীদের তুলনায় তুলনামূলক বস্তিতে বসবাস করা মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি বেশি। চট্টগ্রামের দুই বস্তি ও ঢাকার চার বস্তিতে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষের মাঝে গবেষণা চালিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য এলাকা তো বটেই, এমনকি বস্তির পাশের এলাকার চেয়েও বস্তির ভেতরে বসবাস করা মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি বেশি।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে বস্তি-সংলগ্ন এলাকার (৬২.২ শতাংশ) তুলনায় বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের (৭১.০%) শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেশি। অন্যদিকে চট্টগ্রামের (৫৪.২ শতাংশ) তুলনায় ঢাকার (৭২.৯ শতাংশ) বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

তবে জরিপে অংশ নেয়া বস্তিবাসীদের শরীরে ভিটামিন-ডি’র অভাব দেখা গেছে বেশি। যদিও ভিটামিন-ডি’র এই ঘাটতি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেনি। দেখা গেছে, শারীরিক গঠনের তুলনায় ওজন বেশি এমন মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতিও বেশি।

২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও ঢাকার বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন এমন মানুষের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দুটি (আকবরশাহ এলাকা শহীদ লেন বস্তি এবং আকবর শাহ কাটা পাহাড় বস্তি) এবং ঢাকার ৪টি (কড়াইল, মিরপুর, ধলপুর ও এরশাদ নগর বস্তি) জরিপের জন্য বেছে নেওয়া হয়। ঠিক একই সময়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার এসব বস্তির পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও চালানো হয়েছিল জরিপ।

গবেষকদল জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের উচ্চতা, ওজন ও রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়েছিল এবং তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। কোভিড-১৯ ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), হিউম্যান করোনাভাইরাস (এইচকোভ-এইচকেইউ-১), ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বি, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ডেঙ্গু ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের এন্টিবডি এই ব্যক্তিদের শরীরে ছিল কিনা তাও পরীক্ষা করা হয়েছিল। এছাড়া রক্তে ভিটামিন-ডি ও জিঙ্কের মাত্রাও পরীক্ষা করা হয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে— যারা নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকেন, মুখে কিংবা নাকে হাত দেন না, বিসিজি টিকা নিয়েছেন এবং মধ্যমানের কায়িক শ্রম করেন এমন ব্যক্তিদের সার্স কোভ-২-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল। যারা এর আগে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) অথবা হিউম্যান করোনাভাইরাসে (এইচকোভ-এইচকেইউ-১) আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল কম।

অন্যদিকে যারা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন বেশি। যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা এতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রক্তে জিংকের মাত্রা যথাযথ পরিমাণে ছিল।

আইসিডিডিআরবি এই গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলো হলো— করোনা সংক্রমণের মাত্রা বুঝতে অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মহামারী সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানের ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। বস্তিবাসী কারও মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিল কিনা তা জানার জন্য পদক্ষেপ বাড়াতে হবে। করোনার উপসর্গ নিয়ে পক্ষপাতমূলক তথ্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। গ্রাম ও শহর অঞ্চল লক্ষ্য করে আরও জরিপ এবং কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।

এর আগে গত বছরের জুনেও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) একই ধরনের জরিপ পরিচালনা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে। ৩ হাজার ২২০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে আইসিডিডিআরবির পাঁচ মাসের ওই গবেষণায় জানানো হয়, চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ ও ঢাকায় ৭১ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় অ্যান্টিবডির হার (সেরোপজিটিভিটি) বেশি। ঢাকায় যেটি ৭১ শতাংশ, চট্টগ্রামে তা ৫৫ শতাংশ। বয়স্ক ও তরুণদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার প্রায় সমান। নারীদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ, যা পুরুষদের (৬৬%) তুলনায় বেশি। যেসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির (মোট ২ হাজার ২০৯ জন) মধ্যে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে শুধু ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। স্বল্পশিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের মধ্যে অধিক মাত্রায় সেরোপ্রিভ্যালেন্স (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গিয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm