চট্টগ্রাম মেডিকেলে দেড় হাজার শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেড় হাজার শয্যা বাড়ানোর কাজের অবকাঠামোগত ডিপিপি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক। তিনি বলেন, ‘দেশে জেলা পর্যায়ে কিছুটা ভালো সেবা দেওয়া হলেও উপজেলা পর্যায়ে সেবার মান ভালো না। বাংলাদেশের কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞানবিদের পোস্ট খালি নেই, এরপরও সেখানে কোনো অপারেশন হয় না। কারণ সেখানে ডাক্তাররা যেতে চান না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে না ভেবে আধুনিকভাবে ভাবা দরকার।’

‘চট্টগ্রাম মেডিকেলে অবকাঠামো ও জনবলের যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেশের অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেশি। এ সেবা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা যায়। বেসরকারি হাসপাতালে যে ডাক্তাররা সেবা দেন, তারা সরকারি হাসপাতালেরই চিকিৎসক। সরকারি চাকরি করে দিনশেষে তারা বেসরকারি হাসপাতালে সেবা দেন। যে মানসিকতা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে সেবা দেন, সেই মানসিকতার ধারা বজায় রেখে সরকারি হাসপাতালেও সেবা দেওয়া সম্ভব।’

সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে স্বাস্থ্যসেবা খাতের চট্টগ্রামে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এমন সুন্দরভাবে কাজ করেন যাতে আমরা প্রাইভেটের সঙ্গে কম্পিট করতে পারি। প্রাইভেটে আমাদের সরকারি ডাক্তাররাই কিন্তু সেবা দিয়ে থাকেন। আমাদের চেয়ে তাদের বেশি ডাক্তার নেই, আমাদের থেকে বেশি নলেজ নেই, যন্ত্রাপাতি নেই। প্রাইভেট হাসপাতাল একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। তাহলে আমরাও যদি একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি তাহলে দেখবেন, প্রাইভেটের চেয়ে আমরা ভালো সার্ভিস দিচ্ছি। ওখানে অনেক টাকা নেয় আর আমরা বিনামূল্যে সার্ভিস দিই।’

গত ৩ বছরে ১২ হাজার ডাক্তার ও ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন। এটা একটা ব্যাপক টার্ম। মেশিন চালু থাকতে হবে, অবকাঠামো, জনবল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’

Yakub Group

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘বর্তমান ডাক্তারসহ ২ হাজার ৩৮ জন স্টাফ রয়েছে। আমরা চাই, হাসপাতালের ৮০০ সিট বাড়ানো হোক। জনবল বাড়ানো হোক। ১৩০০ থেকে ২২০০ শয্যার বেডে রূপান্তর করার ঘোষণা আমাদের শুধু আশাই জাগাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব রূপ দেখতে পাচ্ছি না। আমরা প্রতিমাসে কার্ডিয়াক সার্জারি করছি আড়াই হাজার। আর নরমাল সার্জারি পাঁচ হাজারের বেশি। মেডিকেলে ওয়ানস্টপ ইমারেজন্সি সার্ভিসের (ওসেক) কারণে ইনডোর রোগীর ভর্তি কমেছে। এটাই এখন মেডিকেলের চিকিৎসাসেবায় সেরা অর্জন মেডিকেলের।’

পরিচালক আরও বলেন, ‘গত বছর ১২৯ কোটি টাকা বাজেট ছিল, এখন হয়েছে ১৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু রোগীদের জন্য বাজেট কমে গেছে। বাড়তি বাজেট ব্যয় হচ্ছে স্টাফদের বেতনে। স্টাফদের ইনক্রিমেন্ট বেড়েছে। তাই বাজেট বৃদ্ধির জন্য আমরা আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’

স্টাফদের আবাসন সমস্যার ওপর জোর দিয়ে পরিচালক বলেন, ‘স্টাফদের আসন সমস্যা এখানে নাজুক। ৪র্থ ও ২য় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন নেই। সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের রাতে স্টোরের চাবি ছিল কর্নেলহাটে। কারন স্টোর ইনচার্জ থাকেন কর্নেলহাটে। তার আসতে দেরি হওয়ায় তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টার্ন ডাক্তারদের আবাসন ভবনও নাজুক অবস্থায় রয়েছে।’

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম আমিরুল মোরশেদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm