চট্টগ্রাম শহরে বিদ্যুতের বৈষম্য এলাকায় এলাকায়, ঘন্টায় দুবার লোডশেডিং
আগ্রাবাদে বিদ্যুৎ বিতরণ সবচেয়ে কম, দুর্দশা মাদারবাড়িরও
চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণে চলছে চরম হেলাফেলা ও বৈষম্য। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চাহিদার তুলনায় সিকিভাগ বিদ্যুতও যাচ্ছে না। এর ফলে চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় সব এলাকাতেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শুক্র ও শনিবার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না— এটাই যেন নিয়ম!
দেখা গেছে, পাথরঘাটার মতো এলাকা ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছে, অথচ আগ্রাবাদের মতো ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাও একই সময়ে পেয়েছে মাত্র ১৭ মেগাওয়াট। অন্যদিকে জালালাবাদ এলাকা ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলেও বাকলিয়ার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পেয়েছে মাত্র ১২ মেগাওয়াট।
এভাবে দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম জোনের বিভিন্ন উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিতরণে চরম বৈষম্য চলছে। লোড ম্যানেজমেন্ট বলতেও দৃশ্যমান কিছু নেই। অথচ বৃহত্তর চট্টগ্রামে সুষ্ঠুভাবে বিদ্যুৎ বিতরণ ও লোড ম্যানেজমেন্টের জন্য ১৪১ কোটি ব্যয় করা হয়েছে। সেই টাকা খরচ হয়ে গেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। কাজের কাজ একবিন্দুও হয়নি।
সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চাহিদার তুলনায় সিকিভাগ বিদ্যুতও বিতরণ হচ্ছে না। বৈষম্যের এই তালিকায় শুরুতেই রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা আগ্রাবাদ। বাণিজ্যিক দিক থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও আগ্রাবাদ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ হয় সবচেয়ে কম।
দৈবচয়নভিত্তিতে গত মঙ্গলবারের (২২ জুন) চট্টগ্রাম জোনের কয়েকটি উপকেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিতরণের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পিডিবির আগ্রাবাদ উপকেন্দ্রে মোট চাহিদার পরিমাণ ছিল ৪০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে ১৭ মেগাওয়াট। স্টেডিয়াম উপকেন্দ্রে চাহিদার পরিমাণ ছিল ২৯ মেগাওয়াট, অথচ এর বিপরীতে দেওয়া হয়েছে ১৪ মেগাওয়াট। মাদারবাড়ি উপকেন্দ্রে ২১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯ মেগাওয়াট।
অন্যদিকে জালালাবাদ উপকেন্দ্রে একইদিন মোট চাহিদার পরিমাণ ছিল ২৬ মেগাওয়াট। কিন্তু এর বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। পাথরঘাটা উপকেন্দ্রে ২৯ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ গেছে ১৬ মেগাওয়াট। বাকলিয়া উপকেন্দ্রে ২০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া রামপুর উপকেন্দ্রে ১৬ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৯ মেগাওয়াট এবং নিউমুরিং উপকেন্দ্রে ২০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিতরণে এই বৈষম্যের কারণে বৃহত্তর আগ্রাবাদসহ নগরীর অন্য এলাকাগুলোতেও বিদ্যুতের আসা-যাওয়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দিনের বেশিরভাগ সময়ই প্রতি ঘন্টায় দুই তিনবার বিদ্যুৎ চলে যায়।
আগ্রাবাদে শুক্র ও শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না— এটাই যেন দীর্ঘদিনের নিয়ম। ভোরে গিয়ে বিদ্যুৎ আসে বিকেল সাড়ে চারটায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসন্তোষের চিত্র দেখা যায় প্রায়ই। সেখানেই ক্ষোভ জানিয়ে ফাহাদ হোসেন শাওন নামের একজন লিখেছেন, ‘আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি শনিবার সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতেও বলতে গেলে সারাদিনই বিদ্যুৎ থাকে না। এর সঠিক কারণটা কী? যতোদূর জানি, আগ্রাবাদ এরিয়া শুধু চট্টগ্রামই না, বরং পুরো বাংলাদশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। সকল কোম্পানির কর্পোরেট অফিস, ব্যাংক, সিঅ্যান্ডএফ এবং বন্দরের একটা অংশ এখানে অবস্থিত। তবুও এই এলাকা এতো অবহেলায় থাকার কারণ কী?’
সিপি