টেন্ডার ছাড়াই অর্ধকোটি টাকার কাজ, বদলির পরও কর্ণফুলীতে প্রকৌশলীর অনিয়ম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বদলির পরও তড়িঘড়ি করে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে। এসব কাজ কোনও টেন্ডার ছাড়াই, কোনো অনুমোদন ছাড়াই চলছে। মূলত বদলি করা জায়গায় যাওয়ার আগে বিল তোলার জন্যই তিনি এমনটা করছেন বলে জানা গেছে।

টেন্ডার ছাড়াই অর্ধকোটি টাকার কাজ, বদলির পরও কর্ণফুলীতে প্রকৌশলীর অনিয়ম 1

জানা গেছে, এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জাহিদুল আলম চৌধুরী এসব কাজ আগেই সম্পন্ন করে নিচ্ছেন টেন্ডার ছাড়া। উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে হয়েছে মর্মে পরে কাগজে কলমে দেখাবেন তিনি। যাতে বদলিজনিত কারণে অন্যত্র যাওয়ার আগেই বিল তুলে নিতে পারেন। প্রকল্পগুলোর বৈধতা বা কোনো ধরনের অনুমোদন নেই।

টেন্ডার ছাড়াই অর্ধকোটি টাকার কাজ, বদলির পরও কর্ণফুলীতে প্রকৌশলীর অনিয়ম 2

সরেজমিন কাজের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদের কমপ্লেক্সের ভেতরে পাঁচটি প্রকল্পের কাজ চলছে। যা আরএফকিউ (রিকোয়েস্ট ফর কোয়োটেশন) পদ্ধতিতে দেখিয়ে করানো হচ্ছে। প্রতিটি কাজ প্রায় ১০ লাখ টাকার বরাদ্দ হিসেবে করলে টাকার অংক দাঁড়ায় ৫০ লাখ।

প্রকল্পের কাজে ইটের গাঁথুনি দিয়ে মাটির নিচ থেকে ওয়াল নির্মাণ, অর্ধনির্মিত শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ, সড়ক নির্মাণ এবং একটি বড় গর্ত খনন করা হচ্ছে।

এসব কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে তড়িঘড়িতেই শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নীরব সমর্থনেই এসব কাজ চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে এলজিইডি কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ কাজগুলো নিয়ম বহির্ভূত। গোপনে আরএফকিউ দেখিয়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অথচ এ ধরনের প্রকল্পে নিয়মিত টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। আমাদের ধারণা, প্রকৌশলী জাহিদুল আলম বদলির আগে দ্রুত বিল উত্তোলনের চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্মাণকাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক বলেন, আমরা ঠিকাদার হারুনের নির্দেশে কাজ করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘এইচ এন্টারপ্রাইজ’। তবে কাজটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না।

এ বিষয়ে সম্পর্কে জানতে সদ্য বদলি হওয়া কর্ণফুলী এলজিইডি প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে অন্য এক গণমাধ্যমকর্মীর নম্বর থেকে ফোন করলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই তিনটি কাজ আলাদা বরাদ্দ। এসব কাজ করছে উপজেলা পরিষদ ভবনের কাজ করা বিভিন্ন ঠিকাদারেরা।’

পরিষদের ভেতরে রাস্তা, পাশে ওয়াল এবং সুইমিংপুলের কত টাকা বরাদ্দ, কোন প্রকল্প থেকে কাজ হচ্ছে—এসব প্রশ্নের উত্তরে জানতে তিনি বলেন, ‘এটা সুইমিংপুল নয়। এই তিনটি কাজের কত টাকা বরাদ্দ মুখস্থ নেই। রোববারে অফিসে আসেন, দেখে বলবো।’

এলজিইডির চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া কর্ণফুলীর ইউএনও মাসুমা জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে চট্টগ্রাম এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন বলেন, ‘এসব প্রকল্পের অর্থায়ন যদি উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল (রাজস্ব) থেকে হয়, সেক্ষেত্রে ইউএনও এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তিনি যেহেতু উপজেলা পরিষদের প্রশাসক। যদি এলজিইডির কোনো বরাদ্দ হতো তাহলে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার জানতেন। আমি তবুও নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানাচ্ছি।’

এদিকে এএইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘এসব কাজ আমি করছি না। আমি উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ইউএনওর বাংলোর কাজ করছি। যদিও একাজটিও আমি পাইনি। ইজিপিতে এ কাজটি পেয়েছিলেন মূলত অন্য ঠিকাদার। আমি সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছি।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মুঠোফোনে সমস্ত কাজের স্থিরচিত্র পাঠিয়ে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

গত ৮ জানুয়ারি প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বাঁশখালী উপজেলায় বদলি করা হয় প্রকৌশলী মো. জাহিদুল আলম চৌধুরী। ১০ দিন আগে কর্ণফুলী থেকে বদলি হলেও এই প্রকৌশলী কর্ণফুলী ছেড়ে যাননি।

জেজে/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm