দুদকের ‘দায়মুক্তি’ পেলেন চট্টগ্রামের যমুনা অয়েলের ৪ কর্মকর্তা, উঠল নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

0

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের শীর্ষ চার কর্মকর্তা। মেয়াদপূর্তির আগে কোম্পানির এফডিআর ভাঙায় ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ তোলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তদন্তের সেই অভিযোগ ‘প্রমাণিত’ না হওয়ায় চার কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এই চার কর্মকর্তা হলেন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড চট্টগ্রামের সাবেক ডিজিএম (এইচআর) ও বর্তমান জিএম (এইচআর) মাসুদ করিম, সাবেক ডিজিএম (ফাইন্যান্স) অবসরপ্রাপ্ত নাজমুল হক, ডিজিএম (অর্থ) মোহাম্মদ খসরু আজাদ এবং সাবেক ম্যানেজার (অর্থ) এবং বর্তমানে এজিএম (অর্থ) মোহাম্মদ আবুল বশর।

এদের মধ্যে খসরু আজাদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির থানার বাবুনগর গ্রামের মৃত আবু মিয়ার ছেলে এবং আবুল বশর হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে। এছাড়া মাসুদ করিম টাঙ্গাইলের গোসাইবাড়ি কুমুলী গ্রামের মো. আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ও নাজমুল দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালী থানার ঘাসিপাড়ার মৃত করিমুল হকের ছেলে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জুনে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় দুই বছর মেয়াদে ২১০ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকার এফডিআর জমা রাখে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ এফডিআরগুলো ভাঙানো হয়। মেয়াদপূর্তির পর আটটি এফডিআর ভাঙা হলে সেখানে সুদ বা লাভ পাওয়া কথা ছিল ২৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩৪ টাকা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ভাঙায় লাভ পাওয়া যায় ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৬ টাকা। এতে আরও ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা লাভ না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

এ বিষয়ে অভিযোগ উঠলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক। প্রায় দুই বছর অনুসন্ধান শেষে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনায় যমুনা অয়েলের শীর্ষ চার কর্মকর্তার ‘দোষ’ না পাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তবে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিষয়ে পুনঃতদন্তের দাবি জানান।

এর আগে ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিটুমিন বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যমুনা অয়েল কোম্পানির ছয় কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সেখানে মাসুদ করিম ও খসরু মামলার আসামি ছিলেন। এই মামলায় মাসুদ করিম দেড় মাস কারাভোগও করেন।

এদিকে এমডির নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দের ব্যাংকেই এফডিআরগুলো রাখেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলো থেকে বিশেষ সুবিধাও গ্রহণ করতেন তারা।

এছাড়া এমডিসহ চারজনের বিরুদ্ধে যমুনা অয়েলের আওতাধীন ১৬টি ডিপোর তেল চুরি এবং নিয়োগ এবং বদলি বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। যা নিয়ে সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়।

যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ডিজিএম (অর্থ) খসরু আজাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি অডিট বিভাগে কর্মরত। অভিযোগটা ছিল যমুনার অভ্যন্তরীণ বিষয়। অডিটের আওতায় ছিল না। সেখানে হয়তো কোনো একজন বলেছে বিধায় দুদকের অভিযোগে আমার নাম দেওয়া হয়।’

জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) মাসুদ করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় দুদক আমাকে ওই অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আনচারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুদকে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে আছে তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm