s alam cement
আক্রান্ত
৯৬৫০৩
সুস্থ
৬৩৪৮০
মৃত্যু
১১৬৬

দেড় কোটি টাকার গাড়ি কিনে চট্টগ্রামের ‘সড়ক উন্নয়ন’ দেখতে চায় চসিক

১৫টি নির্মাণসামগ্রীর জন্য চায় আরও ৩০ কোটি

1

চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক উন্নয়নের একটি প্রকল্পের জন্য একটিমাত্র জিপ গাড়ি কিনতে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা চেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অন্যদিকে ১৫টি নির্মাণসামগ্রী কিনতে চেয়েছে মোটে ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে এমন বিলাসী প্রস্তাব ঢাকায় যাওয়ার পর দেখে বিস্মিত পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। সেই প্রস্তাবের একের এক গলদ ধরে পরিকল্পনা কমিশন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে হবে না। টেকনিক্যাল কমিটিই ঠিক করবে— কী কী কিনতে হবে আর কতো দামে কিনতে হবে।

মাত্রাতিরিক্ত এই ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য। সেই প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় দুই হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৩৬ মাস মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে যাওয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ১৫টি নির্মাণসামগ্রীর জন্য যে খরচ দেখানো হয়েছে, সেটা মাত্রাতিরিক্ত। এমনকি কিসের ভিত্তিতে এই ব্যয় ধরা হয়েছে, তার কোনো বিস্তারিত তথ্যও উল্লেখ করেনি চসিক। করোনাকালে সরকার আর্থিক টানাপড়েনে থাকায় ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য প্রকল্পের আওতায় যানবাহন কেনাকাটায়ও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি প্রকল্পের জন্যই প্রায় দেড় কোটি টাকার জিপ কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন যাকে রীতিমতো বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছে। এছাড়া ১৫টি নির্মাণসামগ্রী কেনার জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় ধরাকেও মাত্রাতিরিক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর বিভিন্ন সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ব্রিজ, কালভার্ট, ফুটওভার ব্রিজ, ওভারপাস, গোলচত্বরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে যানজট হ্রাস ও নাগরিক সেবা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবটি পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে।

কোন্ খাতে কতো টাকা চায় চসিক?

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন বাবদ চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ বাবদ ৮৪ লাখ টাকা, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ বাবদ ৫৮ কোটি টাকা, ১৪টি ব্রিজ নির্মাণ বাবদ চাওয়া হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া ২২টি কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১৪ কোটি টাকা ও ১০টি গোলচত্বর নির্মাণ বাবদ ১২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

Din Mohammed Convention Hall

অন্যদিকে স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫৭ কোটি টাকা এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তাছাড়া ৩৬ মাসের জন্য পরামর্শক ফি বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

যেসব গলদ ধরেছে পরিকল্পনা কমিশন

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) এক ভার্চুয়াল সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনায় বিভিন্ন গলদ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। তার আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রকল্পটির পুরো প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

আলোচনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে নির্মাণ যন্ত্রপাতি থাকার পরও প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য এতো বেশি পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী কেনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

চসিকের প্রস্তাবে শুধু ফুটওভার ব্রিজ কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ, কালভার্ট, গোলচত্বর কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে সেসব স্থান উল্লেখ করা হয়নি। এসব অবকাঠামো নির্মাণের বিস্তারিত একক ব্যয় বিভাজন এবং এগুলোর ধারণাগত ড্রইং-ডিজাইনও চসিকের প্রস্তাবে সংযুক্ত করা হয়নি। এসব স্থাপনা নির্মাণের যৌক্তিকতার বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

অন্যদিকে স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ গণপূর্ত অধিদপ্তরের দরের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হলেও সেখানে সাল উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু কতোগুলো স্ট্রাকচার তথা ভবনের জন্য এই ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে তার বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন তো নয়ই, এমনকি ইউটিলিটি স্থানান্তরের ব্যয় বিভাজনও চসিকের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি।

ব্যয় ঠিক হবে কমিটির সুপারিশে

এমন অবস্থায় ১৫টি নির্মাণ যান-যন্ত্রপাতির ব্যয় নির্ধারণ করতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে। তবে সেই কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটা কমিশনই ঠিক করে দেবে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুসারেই নির্মাণসামগ্রীগুলোর দাম ঠিক করা হবে।

রুটিনমাফিক কাজের জন্য পরামর্শক ফি বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকাকেও মাত্রাতিরিক্ত হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন এই ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে চসিককে।

অন্যদিকে দেড় কোটি টাকার জিপ গাড়ি কেনা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, কোন্ প্রকল্পে কোন্ কর্মকর্তার জন্য কেমন গাড়ি কেনা হবে— এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে নীতিমালা আছে, সেটা মেনেই গাড়ি কিনতে হবে।

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

1 মন্তব্য
  1. Kamal বলেছেন

    জনগনের সম্পদ এভাবেই কর্তারা লুটপাট চালায়, মানুষের জানার অধিকার নেই। এভাবে চলতে থাকে নিরাপদ প্রশ্রয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm