‘শিবিরের নাছির বলছি’— এমন দাবি করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, গার্মেন্টস, বালুমহাল এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকেও ফোন করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন সব অভিযোগ পেয়ে ‘দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত একসময়ের ত্রাস নাছির নিজেই এবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজের উদ্বেগ জানালেন। সাড়ে ২৬ বছর জেলে থাকার পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বেরিয়ে আসেন তিনি।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের আইমান টাওয়ারে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘এনসি ট্রেডিং’ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নাছির উদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, ‘কতিপয় দুষ্টচক্র আমার নাম ভাঙ্গিয়ে তথা আমার নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টস, বালুমহাল, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাঁদাবাজি করছে।’
গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জামায়াতে ইসলামীর এক সমাবেশে হাটহাজারীর মন্দাকিনীর বাসিন্দা নাছিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পরিচয়’ করিয়ে দেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহজাহান চৌধুরী।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ‘ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত’ রেখেছেন— এমন দাবি করে নাছির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি জেল থেকে বেরুনোর পর থেকে আমার নামে চাঁদাবাজির বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ পাচ্ছিলাম। এর মধ্যে কিছু কিছু খবর আমার কাছের মানুষদের মাধ্যমে পেয়েছি। হয়তো এর বাইরেও আরও অনেক ঘটনা থাকতে পারে, যা আমার অজানা।’
‘যেসব ঘটনার খবর আমি পেয়েছি, তার মধ্যে কিছু কিছু মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা গেছে তাদের মধ্যে খাগড়াছড়ির লোক আছে, মাদারীপুর-শরীয়তপুর-নওগাঁর লোকও আছে’— এমন কথা উল্লেখ করে নাছির বলেন, ‘চাঁদা চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি এমন একজনকে ফোন করেছিল, আমার এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে পরে সেটা জেনেছি। সিরাজউদ্দৌলা রোডের দুই শিক্ষক ছাড়াও শিপিং কর্পোরেশনের একজনকে তারা ফোন করেছিল। এরকম আরও কিছু রিপোর্ট আমি পেয়েছি।’
আ জ ম নাছিরের ব্যবসা দেখার প্রশ্নই আসে না
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নাছির বলেন, ‘আমি এখন টুকটাক ব্যবসা করার চেষ্টা করছি। কন্ট্রাকটরির একটা লাইসেন্সও বানিয়েছি। চকবাজারে একটা অফিসও নিয়েছি।’
গুঞ্জন রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছিরের ব্যবসা দেখাশোনায় আপনি যুক্ত আছেন— এমন প্রশ্নে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘না না, এরকম তো প্রশ্নই ওঠে না।’
তবে ইপিজেডভিত্তিক ডেনিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের সঙ্গে ‘ব্যবসায়িক’ সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও তাদের দেওয়া হ্যারিয়ার গাড়িতে চড়েন— এমন তথ্যকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নাছির।
জেলে ছিলেন সাড়ে ২৬ বছর
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার এক সপ্তাহ পর গত বছরের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান নাছির। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ওইসব মামলায় একে একে জামিন পাওয়ার পর তিনি কারামুক্ত হন। সবমিলিয়ে ২৬ বছর ৪ মাস চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন তিনি।
নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় গুম, খুনসহ প্রায় ৩৬টি মামলা ছিল। সাক্ষী না পাওয়ায় এর মধ্যে ৩১টি মামলায় খালাস পান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে— অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা, হাটহাজারী ট্রিপল মার্ডার, চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে জমির উদ্দিন হত্যা মামলাসহ আরও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলা। এর বাইরে কয়েকটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তার সাজাও হয়। এর মধ্যে দুটির মামলার সাজার মেয়াদ ভোগ করে ফেলেছেন তিনি।
সিপি