ভিডিও/ মুরগির খাঁচায় দুই কিশোরকে ইলেকট্রিক শক, পার পেয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত সেই নেতা
দেড়শ টাকা চুরির অপবাদে অকথ্য নির্যাতন
মাত্র ১৫০ টাকার চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় মুরগির খাঁচায় বন্দি করে দুই শিশুকে ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলেও অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিফাত করিমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ঈদগড় বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার দুই শিশু ওই এলাকার মো. রশিদ আহমেদের ছেলে ইব্রাহিম (১০) ও একই এলাকার মো. নুরুল আলমের ছেলে মো. সোহেল (১১)।
অভিযোগ উঠেছে, ঈদগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিফাত করিমের নিজস্ব মালিকানাধীন মুরগির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন নির্যাতিত শিশু ইব্রাহিম ও সোহেল। গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকালে প্রতিদিনের মতো সকালে তারা দোকানে আসলে তাদেরকে রিফাত দোকান থেকে দেড়শ টাকা চুরি করছে কিনা জানতে চান। তারা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এরপরই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিফাত তাদের দুজনকেই মুরগি রাখার খাঁচায় ঢুকিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করেন। সাথে সাথে নির্যাতনের ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
নির্যাতিত শিশু ইব্রাহিমের বাবা রশিদ আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ছেলে ও আমার ভাইয়ের ছেলে সোহেল রিফাতের মুরগির দোকানে মাসিক বেতনে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। গত বৃহস্পতিবার দেড়শ টাকার চুরির কথা বলে আমার ছেলেদের মুরগি রাখার খাঁচায় বন্দি করে ইলেকট্রিক শক ও সিগারেটের আগুন দিয়ে নির্যাতন করা হয়। আমাদের থানায় অভিযোগ না দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা ফোন করতেছে। তারা ঘরোয়াভাবে বিচার করার কথা বলেন। কিন্তু তারা এখনও কোনো বিচার করে নাই। আমাদের ছেলেদের মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এবিষয়ে ঈদগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ঘটনার বিষয়ে খবর নিয়েছি। অভিযুক্ত রিফাত ও নির্যাতিত শিশুদের পরিবারের সাথে আমরা কথা বলেছি। ঘটনার মধ্যে শিশুদেরও দোষ ছিল। রিফাত শিশুদের ভয় দেখানোর জন্য এমন করেন বলে আমাদের জানান। এই ঘটনার জন্য রিফাত ভুল স্বীকার করেছেন। রিফাতের সাথে শিশুদের পরিবারের সাথে মিলিয়ে দিয়েছি। তারা এখন ওই দোকানেই কাজ করছে।’
মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নিলেন না কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করলে পক্ষ বিপক্ষ থাকবে। ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
নির্যাতনের ভিডিওটি দেখে আপনার কেমন লাগছিল জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমারও ভালো লাগে নাই দেখে। রিফাত আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। আগামীতে এইরকম হবে না বলে সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দুই পক্ষের দোষ থাকায় তাদের কে মিলামিল করে দিয়েছি। যার কারণে রিফাতের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিফাতের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ঈদগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিফাত তার দোকানের কর্মচারীদের নির্যাতনের বিষয়টি শুনেছি। ঘটনার পরপর রিফাতের ওপরও হামলা করার কথা শুনেছি। আমি ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠিয়েছিলাম। কোন পক্ষ এখনও আমাদের কাছে অভিযোগ করে নাই। অভিযোগ করলে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
এএন/সিপি