কর্ণফুলী নদীর সদরঘাটে যাত্রী পারাপারে ইজারা পেতে মাহমুদ হোসেন নামের এক মাঝির অনুমতি ছাড়াই তার কাগজপত্র জমা দিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি খলিলুর রহমান নাহিদের বিরুদ্ধে। তবে নাহিদের দাবি, তিনি গত ১৭ বছরের ইজারাদার। এবারও সব নিয়ম রক্ষা করে তিনি টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্ণফুলীর নদীর সদরঘাটে যাত্রী পারাপারের টেন্ডার ঘোষণা করার পর একাধিক সাম্পান মাঝি দরপত্র জমা দেন। এতে সর্বোচ্চ দরদাতার নাম ওঠে মাহমুদ হোসেনের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হন মিজানুর রহমান। মিজান ইছানগর সদরঘাট সাম্পান টেম্পো মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। অপর দিকে মাহমুদ হোসেন ১৫ নম্বর ঘাটের মাঝি। কিন্তু তার নামে দরপত্রে অংশ নেওয়া হলেও কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন মাহমুদ। এমনকি জালিয়াতির এই বিষয়টি চসিক মেয়র রেজাউল করিমকেও জানিয়েছেন উল্লেখ করে মাহমুদ হোসেন বলেন, টেন্ডারে তিনি অংশই নেননি।
গত ২৯ মার্চ চসিকের ঘাট মূল্যায়ন কমিটি কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে মাহমুদ হোসেনের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতি দেখতে পান। চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম দরদাতা মাহমুদ হোসেনকে ৮ এপ্রিলে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে চসিকে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দেন। কিন্তু ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত মাহমুদ হোসেন কাগজপত্র জমা দেননি।
রাজস্ব কর্মকর্তার চিঠিতে ৮ এপ্রিলের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে তার টেন্ডার বাতিলের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে মেয়াদ শেষ হওয়া ইজারাদার খলিলুর রহমান নাহিদসহ একটি পক্ষ মেয়র মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে দেখা করে আরও তিনদিন সময় চেয়ে নেন। এই তিনদিন চসিকের রাজস্ব বিভাগ থেকে সরাসরি খেয়া পারাপারের খাজনা আদায় করার কথা রয়েছে।
সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, সদরঘাট নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতাদের পক্ষ থেকে মেয়র মহোদয়ের কাছে আরও তিনদিন সময় চাওয়া হয়েছে। মেয়র মহোদয় তাদেরকে তিনদিন সময় দিয়েছেন। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে না পারলে আমরা আইনগতভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।
৮ এপ্রিলের নির্ধারিত সময়ের পাঁচদিন পরও বিষয়টি সমাধান না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি মেয়র মহোদয় দেখছেন। তারা সময় চাওয়াতে তিনি তা মঞ্জুর করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে সেটা দিতে না পারলে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’
ভিপি নাহিদ যার কাগজপত্র জমা দিয়েছেন সেই মাঝি মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি এত টাকায় টেন্ডার কিভাবে দেবো? আমার কাগজপত্র চুরি করে আমার অজান্তে আমার নামে টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি মেয়র মহোদয়ের সাথে দেখা করে তাকে জালিয়াতির বিষয়টি বুঝিয়েছি।’
যার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর— ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সেই খলিলুর রহমান নাহিদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাহমুদের ভাই আমির হোসেন আমার অফিসে চাকরি করে। মাহমুদ সাম্পানের মাঝি। যেহেতু ঘাট ইজারার জন্য সাম্পান মাঝিকেই আবেদন করতে হয়, সেহেতু আমিরুল তার ভাইয়ের সাথে কথা বলে আমাকে কাগজপত্র দেয়। এটাই হলো মূল বিষয়।আপনি যেগুলো বলছেন সেসব সত্য নয়।’
মাহমুদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাহিদ বলেন, ‘এগুলো মাহমুদের বক্তব্য নয়। দ্বিতীয় দরদাতাকে দিয়ে যারা দরপত্র জমা করিয়েছে তারাই এসব করছে।’
সিপি