কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান।
ক্রমবর্ধমান হ্যান্ডেলিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন শুরু করার ফলেই বন্দর কর্তৃপক্ষ এই পরিসংখ্যান পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে শহীদ মো. ফজলুল রহমান মুন্সী অডিটরিয়াম হলে ১৩৫তম বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে। কোভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করেছে। অন্যদিকে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রকোপে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি বাঁধাগ্রস্থ হলেও দৃঢ়তার সাথে বিশ্ব ও অভ্যন্তরীন সংকট মোকাবেলা করে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এর পূর্ববর্তী অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। আজকের বন্দর বিগত দিনের চেয়ে আরও বেশি কর্মক্ষম এবং আগামীর বন্দর হতে যাচ্ছে আরও আকর্ষণীয়, সমৃদ্ধ ও কার্যকর।’
তিনি বলেন, ‘বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে কনটেইনারবাহী জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন-অ্যারাইবল বার্থিং প্রদান করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুর কলম্বো বন্দরে ৫ থেকে ৭ দিন, চায়নার বন্দরসমূহে ১০ থেকে ১২ দিন, ইউরোপের বন্দরসমূহে ১৫ দিন, ইউএসএর বন্দরসমূহে ২০ দিনের অধিক বার্থিং ডিলে হয়েছিল। উক্ত সময়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দিক-নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরণের অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি তেমন একটা অসুবিধার সম্মুখীন হয়নি। করোনাকালীন বন্দর সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমরা বন্দরের ৫২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হারিয়েছি।’
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন ‘চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠা হতে এ যাবৎকালের মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ কন্টেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডেলিং করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২১ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ মেট্রিকটন। এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৩ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২০৯টি। জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৩ শতাংশ। কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের এই পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি প্রক্ষেপণকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান হ্যান্ডেলিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ যার প্রত্যক্ষ ফলাফল এই পরিসংখ্যান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সহায়ক অন্যান্য সংস্থা, এজেন্সি যেমন শুল্ক বিভাগ, ব্যাংক, শিপিং এজেন্টগণ আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে সপ্তাহে প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা কার্যক্রম সম্পাদন করছে।’
চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্পন্ন অটোমেশন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের আধুনিক বন্দরগুলোর মতো অপারেশনাল সেবা অটোমেশন করার জন্য ইলেকট্রনিক ডেলিভারী অর্ডার সিস্টেম চালু করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৩৯০টি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
বে-টার্মিনালের জন্য ৮০৩ একর জায়গা বরাদ্দ হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫০০ মিটার মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১২০০ ও ৮০০ মিটারের দুইটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। যেটাতে ৪ হাজার ৫০০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। ২০২২ সালের জুলাই মাস নাগাদ পিসিটিতে কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর বহিঃনোঙ্গর থেকে কাপ্তাই ড্যাম পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীতে বিশদ হাইড্রোলজিক্যাল এবং হাইড্রোলিক স্টাডি শীর্ষক স্টাডি কাজ সম্পাদনের জন্য ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়ালিংফোর্ড, যুক্তরাজ্যকে নিয়োগ দিয়েছি আমরা। উক্ত স্ট্যাডি চলমান রয়েছে। এই স্ট্যাডি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সহসা আমরা বন্দর জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়াতে পারবো।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মো. মাহবুবুর রহমান, সদস্য (অর্থ) মো. কামরুল আলম, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম।
এএস/এমএফও