s alam cement
আক্রান্ত
৪৪৮৬০
সুস্থ
৩৪৮৩০
মৃত্যু
৪৩০

ওষুধ পাচারের হিড়িক চট্টগ্রাম মেডিকেলে, রোগীর কপালে শুধুই প্যারাসিটামল

0

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দের বেশিরভাগ ওষুধই পাচার হয়ে যাচ্ছে বাইরে। নানা কৌশলে এসব ওষুধ পাচার করে দিচ্ছে হাসপাতালের স্টোর কিপার, ওয়ার্ড বয়, আয়া-নার্স মিলিয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। কেবল সরকারি ওষুধ নয়, রোগীদের দিয়ে একই ওষুধ বারবার কিনে এনে সেসব ওষুধও পাচার করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের এই প্রধান হাসপাতালে এই চিত্র বছরজুড়ে চললেও লকডাউনে ওষুধ পাচার চলছে লাগামহীন গতিতে।

অভিযোগ উঠেছে, চমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অন্য কোনো ওষুধ না দিয়ে ওয়ার্ডের নার্সরা সকাল-বিকাল সরবরাহ করছেন কেবল নাপা-প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ। সকাল-বিকাল ওয়ার্ডে রাউন্ড অনিয়মিত হয়ে পড়ায় নার্সরা রোগীদের নির্ধারিত ওষুধ বণ্টন করছেন না। অথচ গত অর্থবছরেই শুধু চমেক হাসপাতালে ওষুধ বরাদ্দ ছিল ১৪ কোটি টাকার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লকডাউনে হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় ওষুধ চোরদের পুরোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে আবার। হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ড মাস্টার বাশার, রাজিব দাশ, ডেন্টাল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুস সাত্তার ও ডেন্টাল সেক্রেটারি হায়াত ওষুধ পাচারে সরাসরি জড়িত রয়েছেন। হাসপাতালের বাইরে তাদেরকে সহায়তাকারীদের মধ্যে যাদের নাম আলোচনায় আছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন ফার্মেসি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তপন, মিন্টু, হারাধন, উত্তম, সাহাব উদ্দিন, নূর হোসেন, বুলেট, জাহাঙ্গীরের নাম। এই চক্রটিই রোগীদের জন্য বরাদ্দের বিনামূল্যের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছে।

তবে অভিযোগের তীর যাদের প্রতি তাদের সবাই এ অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। তারা দাবি করেছেন, হাসপাতালের ওষুধ চুরি করেন নার্সরা। তারা যদি চুরিই না করতেন, তাহলে রোগীদের প্যারিাসিটামল-নাপা ছাড়া আর কোন ওষুধ দেন না কেন?

জানা গেছে, হাসপাতালে অতি গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি ওয়ার্ড, নিউরো সার্জারি, মেডিসিন, শিশুরোগ, হৃদরোগ, অর্থোপেডিকস, গাইনী ও ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়। কিন্তু এসব ওয়ার্ডে রোগীরা বিনামূল্যের কোনো ওষুধ পান না বললেই চলে। এসব ওয়ার্ডে রোগীদের ওষুধ না পাওয়ার এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে ওষুধ চুরির ঘটনা এই হাসপাতালে নতুন নয়। কিন্তু চোর ধরা পড়লেও শাস্তি হয়েছে নামমাত্র।

Din Mohammed Convention Hall

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় দেড় লাখ টাকার ওষুধ চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন ডেন্টাল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুস সাত্তার। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এমনই আরেক ঘটনায় ওয়ার্ড মাস্টার রাজীব দাশ স্টোর অফিসারকে হাত করে ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করে স্টোর থেকে ওষুধ পাচার করেন। ১০০টি বহির্বিভাগের স্বাক্ষরবিহীন ওষুধের স্লিপসহ ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ২০১৭ সালে ধরা পড়েন রাজিব দাশ। কিন্তু এ ঘটনায়ও রাজিব দাশের কোনো শাস্তি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীদের সরবরাহযোগ্য ওষুধের নাম তালিকা করে টাঙ্গানো থাকে নার্সদের রুমে। থাকে ডাক্তারদের রুমেও। তালিকায় দেখা গেছে, মজুদ ওষুধের মধ্যে রয়েছে আ্যামোক্সিলিন, ক্লোক্সসিলিন, সিপ্রেডিন, ডক্সিসাইক্লিন, টেট্রাসাইক্লিন, ওমিপ্রাজোন, ট্যাবলেট এসপিরিন, এমলোডিপাইন, এলবিনডাজোল, এজিথ্রোমাইসিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, কনট্রিমোক্সাজোল, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, সিপ্রোফ্লোক্সেসিন, ক্লোনাজিপ্যাম, কারভিডিঅল, কারডিজেম, ডাইক্লোফেনাক, ফেরাস সালফেট, হালোপিরিডল, পাইরোভিখট, রিবোফ্লেবিন, ভারপামিল ইত্যাদি।

ইনজেকশনের মধ্যে রয়েছে এমিকাসিন, এমপিসিলিন, ডায়াজিপাম, মেট্রো, প্রোসাইক্লিডিন, রেনিটিডিন, সালবিউটামল ইত্যাদি। এছাড়া সিরাপ ও ড্রপের মধ্যে এমোক্সিলিন, সালবিউটামল ছাড়াও গজ, ব্যাণ্ডেজ, তুলা, স্যাভলন, হেক্সিসল, ভায়োডিন, এমআরআই/সিটি ফিল্ম ইউসল ইত্যাদি পর্যাপ্ত রয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু এ নোটিশ হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে টাঙ্গিয়ে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও টাঙানো আছে শুধু কিছু ওয়ার্ডে। আবার কোনো কোনো ওয়ার্ডে টাঙানো হলেও ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ডবয়রা এ নোটিশ ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ আছে। এটি টাঙানো থাকলে রোগীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে— তাই নোটিশ ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউনের দিনগুলোতে তালিকাভুক্ত ওষুধের মধ্যে প্যারাসিটামল-নাপাই দেওয়া হয়েছে রোগীদের। লকডাউন শুরু হওয়ার আগের দিন থেকেই ডাক্তারদের ছুটির ফাঁদে পড়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড। নার্সরা আসছেন অনিয়মিত।

২৮ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এ ওয়ার্ড থেকে কোন ওষুধই রোগীরা পাচ্ছেন না। এক্সিপিন ইনজেকশান, সেফট্রোন, ওরাডেক্সন, সেফার্ডসহ কোন ইনজেকশনই রোগীরা পান না। একই অবস্থা দেখা গেছে, ১৬ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে। সকালবেলা নার্সরা ওয়ার্ডে রোগীদের নাপা-প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন। হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের চিত্র একই।

হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ডমাস্টারের অভিযোগ, লকডাউনের সুযোগে নার্সরাই মূলত হাতব্যাগে ওষুধ পাচার করছেন। ছুটির সময়ে দায়িত্বশীল কাউকে দিয়ে নার্সদের ব্যাগ চেক করানো উচিত বলে মনে করেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চিফ স্টাফ নার্স ইনসাফে হান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এরকম অভিযোগ আমার কাছেও মাঝে মাঝে আসে। কেউ যদি এটা করে নার্স কমিউনিটির জন্য একটা খারাপ ম্যাসেজ। আমি এ বিষয় নিয়ে হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলবো।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আফতাবুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হাসপাতালে চলতি অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। বর্তমানে যে পরিমাণ ওষুধের মজুদ আছে, তাতে সংকট থাকার কথা না। লকডাউনে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা ও ওষুধ পাওয়ার কথা। সেখানে রোগীরা কেন ওষুধ পাচ্ছেন না, এটি খতিয়ে দেখবো।’

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm