‘গোল্ডেন আওয়ার’ বাঁচাতে পারে জীবন, স্ট্রোক থামাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রঙিন লড়াই

স্ট্রোকের ৮০ ভাগই প্রতিরোধযোগ্য

হঠাৎ কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে পড়া কিংবা হঠাৎ দৃষ্টিশক্তিতে ঝাপসা ভাব — এই সাধারণ লক্ষণগুলোই হতে পারে স্ট্রোকের সবচেয়ে জরুরি সংকেত। কয়েক মিনিটের দেরিতেই মস্তিষ্কের কোটি কোটি কোষ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তাই স্ট্রোক প্রতিরোধ ও দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।

সোমবার সকালে সাইকেল র‍্যালি দিয়ে দুই দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন। চমেক ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে র‍্যালি শেষ হয় হাসপাতালের মূল মাঠে, যেখানে সাইকেল ফেস্ট, ক্রিকেট-ফুটবলসহ নানা ক্রীড়া আয়োজনে মুখর হয়ে ওঠে দিনটি।

অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চমেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তাসলিম উদ্দিনসহ বহু চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তাসলিম উদ্দিন, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সানাউল্লাহ শামীম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুল কাদের, সহকারী অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সিরাজুল মুনির অহি, সহকারী অধ্যাপক ডা. মইনুদ্দীন জাহেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. কামাল হোসেন, ডা. মাজেদ সুলতান, ডা. সমীর, আবাসিক সার্জন ডা. ইমরান হোসেন, ডা. আলাউদ্দিন, ডা. নারায়ণ ধর, ডা. মির্জা, ডা. শিহাব, ডা. শামীমা, ডা. খুরশীদ, ডা. আয়াতুল আমিন, ডা. জয়দীপ, ডা. সৌমেন, ডা. রাখাল, ডা. আশিক, ডা. মুনীর, ডা. নূর, ডা. সজীব, ডা. জিসান, ডা. দেবব্রত, ডা. হিমা, ডা. ইরফান প্রমুখ।

প্রধান অতিথি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক সময় স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অবহেলা করি—যেমন হঠাৎ কথা জড়ানো, শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া বা দৃষ্টিতে ঝাপসা দেখা। এই মুহূর্তগুলোই আসলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ ও রিহ্যাবিলিটেশন বিষয়ে চমেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য—‘স্ট্রোক-মুক্ত চট্টগ্রাম’। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন স্ট্রোক চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবা চালু করেছে। আমরা চাই, মানুষ দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিক—এটাই এই দিবসের মূল বার্তা।’

অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার অর্ধেকেরও বেশি সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ী অক্ষমতায় ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও স্থূলতা এখনও প্রধান ঝুঁকির কারণ।’

নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘স্ট্রোকের ৮০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, ধূমপান বন্ধ করা, লবণ ও তেল কম খাওয়া এবং দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা—এই ছোট পরিবর্তনগুলোই জীবন বাঁচাতে পারে।’

ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘স্ট্রোক প্রতিরোধ মানেই জীবন বাঁচানো। আজকের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষকে বোঝানো যে স্ট্রোক হঠাৎ ঘটে, কিন্তু এর ঝুঁকি প্রতিদিন তৈরি হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন—এসবের প্রতি সচেতন না থাকলে যেকোনো মুহূর্তে স্ট্রোক হতে পারে। নিউরোসার্জারি বিভাগ শুধু চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধমূলক কাজেও ভূমিকা রাখতে চায়।’

ksrm