জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ২৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন হবে প্রতিটি দলের জন্যই সবচেয়ে কঠিন কাজ। গণতন্ত্রে ভোটাধিকার সবচেয়ে বড় নাগরিক অধিকার। এ অধিকার যেন জনগণ নির্বিঘ্নে ও স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে আচরণবিধি মেনে চলা-প্রতিটি ধাপে রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার বা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পবিত্র উমরা হজ্ব পালন করে এসেই এসব আসনের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।
দলের উচ্চপর্যায়েে একটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে তত্ত্বাবধান করছেন। প্রার্থীদের যোগ্যতা, জনসম্পৃক্ততা এবং দলের প্রতি নিষ্ঠাকেই প্রার্থী মনোনয়নের প্রধান মানদণ্ড হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্র থেকে এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল এড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্বাচনী মাঠ সরব হয়ে উঠবে বলে নেতাকর্মীরা আশা করছেন।
রোববার (২৬ অক্টোবর) ঢাকার গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) সংসদীয় আসন থেকে অংশ নেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম ইদ্রিস মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, বিএনপি নেতা সৈয়দ সাদাত আহমেদ। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) থেকে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপি নেতা এস এম মামুন মিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী ও নুরুল আনোয়ার। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামাল হোসেন।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) থেকে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর।
দলীয় সূত্র জানা যায়, গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ইতোমধ্যে একাধিক মাঠ জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। জরিপের ফলাফল, নীতিনির্ধারকদের মতামত এবং তৃণমূল জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ভিত্তিতে তালিকা চূড়ান্ত।
দলীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় আসনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সৈয়দ সাদাত আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম ও লায়ন হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, নাজমুল মোস্তফা আমিন ও মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা এবং চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও–বোয়ালখালী) আসনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর নাম রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনটি সম্ভাব্য জোটের প্রার্থী এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ইদ্রিচ মিয়া বলেন, গুলশান কার্যালয়ের বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার সাথে সবাই মিলেমিশে কাজ করতে হবে। যদি কেউ কাজ না করে তাহলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যিনি নমিনেশন পাবেন তিনি কোন ধরনের মিষ্টি বিতরণ ও উৎসব আনন্দ করতে পারবেন না। আর সংসদীয় আসনে যারা নমিনেশন পাবেন না তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থী যিনি হবেন তাকে বুঝিয়ে নির্বাচনী মাঠে একসাথে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের সাথে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি কথা বলে দলীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।



