চকরিয়ায় ছয় ভাইয়ের মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি হত্যা, খতিয়ে দেখতে বললেন রানা দাশ গুপ্ত
৮ পরিবারকে জায়গাসহ দেয়া হবে বাড়ি
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পিকআপ চাপায় নিহত ছয় ভাইয়ের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
গতকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ হাসিনা পাড়ার মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে যান। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত স্থানটিও পরিদর্শন করেন।
অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, একই পরিবারের ছয় সহোদরের মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। এ ধরনের ঘটনা অতীতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকিল্পত কোনো হত্যাকাণ্ড তা খতিয়ে দেখতে তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে জানতে চান, ওইদিন পিকআপ চাপায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু হওয়ার পরও কেন তাদের ময়নাতদন্ত করা হলো না? কারা মরদেহের ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ সৎকারে ইন্ধন দিয়েছে তাদের শনাক্ত করা দরকার। আমি মঙ্গলবার নিহত আরেক ভাই রক্তিম সুশীলের মরদেহ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ময়নাতদন্ত করিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই পরিবারের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ থাকবে দ্রুত যাতে তাদের পরিবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে সেজন্য যেন সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা শত চেষ্টা করলেও ছয় ভাইকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারবো না। ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ পরিবারের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং তাদের গৃহ-জমিহীন ৮ পরিবারের জন্য মালুমঘাট হিন্দুপাড়া (নাথপাড়া) এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষের ৮টি নতুন বাড়ি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এ বিসয়ে চকরিয়ার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।
পরিদর্শকালে আরও উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া পৌরসভা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নারায়ণ কান্তি দাশ, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষচারী, সুপ্রিয়া দেবী, পাবনা সৎসঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ কার্যকরী সভাপতি সজীব সিং রুবেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, কক্সবাজার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, চকরিয়া উপজেলার সভাপতি রতন বরণ দাশ, চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চকরিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুকুল কান্তি দাশ।
নিহতদের পরিবারকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আড়াই লাখ টাকা, ইসকনের পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য দেয়া হয়।
এছাড়া শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ’র পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ও পোশাকসামগ্রী দেয়া হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত-উজ জামান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলম, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওসমান গণি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল চৌধুরী, ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক রাধা গৌবিন্দ দাস, চকরিয়া পৌরসভা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনিপ দাশ সৌরভ।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে ধর্মীয় আচার শেষ করে রক্তিম দাশের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে পিকআপ চাপায় পাঁচ ভাই নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত রক্তিম শীল গতকাল মঙ্গলবার সকালে মারা যান। এছাড়া তাদের বোন হীরা সুশীল মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনা র্যাব-১৫ এর একটি দল ঢাকা থেকে পিকআপ চালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
ডিজে