s alam cement
আক্রান্ত
৫১০৯৩
সুস্থ
৩৭১৬৮
মৃত্যু
৫৬৩

চট্টগ্রামে ‘বড়লোকের ক্লাব’ মদ খেয়ে ভ্যাট দেয় না, ৫ বছরে ফাঁকি ৮ কোটি টাকা

অভিযোগের তীর চিটাগং সিনিয়র্স ক্লাবের বিরুদ্ধে

0

চট্টগ্রামের জামালখানে ‘অভিজাত’ সিনিয়র্স ক্লাবের মদের বারসহ বিভিন্ন সেবায় বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ক্লাবের কনফারেন্স রুম, সেলুন, গেস্ট হাউস, জিমনেশিয়াম, বেকারি, সুইমিং পুল, বিনোদন, খাবারসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ক্লাবটিতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। গত অন্তত পাঁচ বছর ধরে ক্লাবটি কোনো উৎসে ভ্যাট পরিশোধ না করেই চলছে বহাল তবিয়তে।

চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় অবস্থিত চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাবে গত পাঁচ বছরে অন্তত আট কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। অবশ্য ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, ভ্যাট দেওয়ার নিয়মকানুন সম্পর্কে তারা অবহিত নন বলেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী বর্তমানে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রামের জামালখানে সিনিয়র্স ক্লাবের মদের বার।
চট্টগ্রামের জামালখানে সিনিয়র্স ক্লাবের মদের বার।

রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট একটি ‘নিবারক দল’ গঠন করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাবে পরিদর্শন ও তল্লাশি চালায়। তল্লাশি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাগজপত্র প্রাথমিকভাবে যাচাই করে গরমিল দেখতে পায় ‘নিবারক দল’। পরে বিশদ অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়।

চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব লিমিটেডে অনুমোদিত বার রয়েছে। এর মাধ্যমে ক্লাব সদস্যদের জন্য মদ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। এখানে সরবরাহ করা মদের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য।

Din Mohammed Convention Hall

ভ্যাট কমিশনারেটের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত মোট পাঁচ বছরে চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব প্রায় ২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকার সেবা সরবরাহ করেছে। এই সেবার প্রায় সবটাই মদ ও সিসা বিক্রি থেকে এসেছে। এর বিপরীতে সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অথচ শুল্ক পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ টাকা। আর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এই পাঁচ অর্থবছরে সিনিয়র্স ক্লাব থেকে প্রাপ্য ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। অথচ এখানে পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ২২ লাখ টাকা। বাকি তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকাই পরিশোধ করা হয়নি।

মদ আর সিসা বিক্রিতেই শুধু নয়, চিটাগং সিনিয়র্স ক্লাব ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত যে পরিমাণ ব্যয় বা কেনাকাটা করেছে, তাতেও প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে উৎসে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি এক টাকাও।

লিমিটেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাবে ভ্যাট আইন অনুযায়ী ব্যয় বা কেনাকাটার ওপর উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য।

চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুসারে, চট্টগ্রামের বিত্তশালীদের ক্লাব হিসেবে পরিচিত এই সিনিয়র্স ক্লাবের কর্তৃপক্ষ গত পাঁচ বছরে সবমিলিয়ে তিন কোটি ৩৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৭ টাকার ভ্যাট, এক কোটি ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭৮ টাকার সম্পূরক শুল্ক এবং দুই কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৭ টাকার উৎসে ভ্যাটসহ মোট সাত কোটি ৭৩ লাখ ৩২ হাজার ৮০৩ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এই হিসাবে সুদ যুক্ত হয়নি। সুদসহ এই ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি দাঁড়াবে শেষপর্যন্ত।

২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর সিনিয়র্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই অভিযানের পর র‍্যাব জানায়, ক্লাবটিতে গোপন তিনটি স্টোররুম পাওয়া গেছে এবং যে পরিমাণ মদ বিক্রির অনুমোদন রয়েছে ক্লাবটির, তারা বিক্রি করছে এর চেয়েও বেশি।

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm