চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ওয়াকিটকি-ড্রোন আর ৫ বিদেশি পিস্তলসহ ১৩ অস্ত্র, ৪ জায়গায় ৬ ঘন্টার অভিযান পুলিশের
অস্ত্র–মাদকসহ গ্রেফতার ৩, পলাতক ২৪
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্যসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় নগদ টাকা, ড্রোন, ওয়াকিটকি ও টাকা গণনার মেশিনসহ নানা সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়। তবে মূল হোতাসহ অন্তত ২৪ জন সহযোগী পুলিশি উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলামের দিকনির্দেশনায় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানার যৌথ আভিযানিক দল এবং সিএমপির সোয়াত টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান পরিচালিত হয় চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের পেছনের মাছবাজার এলাকার একটি ভবনের তৃতীয় তলায়, পাঁচলাইশ থানার শুলকবাহর হাজী আইয়ুব আলী সওদাগর রোডের সমিল গলি ইউনুস কোম্পানির ভবনের দ্বিতীয় তলায়, একই এলাকার জান মোহাম্মদ চাকলাদার জামে মসজিদের সামনে পুকুরপাড়ে এবং বাকলিয়া থানার সহায়তায় কালামিয়া বাজার এলাকায়।
অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম বুইশ্যা ও আইয়ুব আলীর সহযোগী মো. বেলাল (২৮), হৃদয় বড়ুয়া (৩০) এবং মো. আজাদ (২৩)-কে গ্রেফতার করা হয়। তবে মূল হোতা শহিদুল ইসলাম বুইশ্যা ও আইয়ুব আলীসহ মোট ২৪ জন সহযোগী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল পাঁচটি, বিদেশি বন্দুক তিনটি, দেশীয় পাইপগান দুটি, শর্ট শুটার গান একটি এবং দেশীয় লম্বা বন্দুক দুটি। এছাড়া উদ্ধার করা হয় ৫৮টি তাজা কার্তুজ, ৯৫টি বুলেট, ১৩টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, নগদ চার লাখ ২০ হাজার টাকা, তিন হাজার ৫০০ ইয়াবা, এক হাজার ১০০ পুরিয়া গাঁজা (ওজন সাড়ে পাঁচ কেজি), টাকা গণনার মেশিন, ওয়াকিটকি, ড্রোন, সিসি ক্যামেরা, ডিভিআর, ড্রিল মেশিন, বৈদ্যুতিক কাটার, মনিটর ও একটি মোটরসাইকেল।
উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই অভিযান ছিল দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা নজরদারির ফল। আমরা সন্ত্রাসী ও মাদকচক্রের শক্ত ঘাঁটি ভেঙে দিতে পেরেছি। পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
গ্রেফতার আজাদের (২৩) বিরুদ্ধে আগে থেকেই পাঁচলাইশ থানায় অস্ত্র ও দস্যুতার দুটি মামলা রয়েছে। পলাতক শহিদুল ইসলাম বুইশ্যার (২৩) বিরুদ্ধে সিএমপি’র বিভিন্ন থানায় ১৯টি, আইয়ুব আলীর (৪১) বিরুদ্ধে ১৮টি, মো. ইদ্রিসের (২৩) বিরুদ্ধে ৯টি, মো. ইয়াছিনের (২৩) বিরুদ্ধে ৫টি এবং শিবুর (২৭) বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে।
ঘটনার পর চান্দগাঁও থানায় দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রথমটি অস্ত্র আইন ১৮৭৮-এর ১৯(এ)(এফ)/১৯এ ধারায় এবং দ্বিতীয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ৩৬(১) এর সারণির ১০(খ)/১৯(খ)/৪১ ধারায় দায়ের করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় এর আগেও কয়েক দফা অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘সন্ত্রাসী বুইশ্যাকে গ্রেফতারের জন্য পাঁচলাইশ থানা ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ বেশ কয়েকবার যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। গতকাল ডিসি নর্থ স্যারের নেতৃত্বে এই দুই থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের একটি পরিত্যক্ত ভবনের বুইশ্যার আস্তানা থেকে কিছু নগদ টাকা ও একজন আসামি গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে পাঁচলাইশ থানাধীন রওশন বোর্ডিংয়ের পাশে শামসুল হকের বাসা থেকে হৃদয়সহ আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়। হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে পৃথক তিনটি কক্ষ থেকে ১৩টি অস্ত্র, গোলাবারুদ, ইয়াবা, গাঁজা, নগদ টাকা ও ড্রোনসহ মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত সামগ্রী অভিযানে আমরা উদ্ধার করি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম ঘটনাস্থল চান্দগাঁও থানা হওয়ায় এই বিষয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা রুজু করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’