চট্টগ্রামে নগরে কর্মরত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরামের’ উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার কৃতী সন্তান প্রয়াত সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জামাল খান সড়কের একটি রেস্টুরেন্টে এই আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের জীবন ও কর্ম এবং এলাকার উন্নয়নে চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত সাংবাদিকরা নিজ নিজ বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেন।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এসএম রানার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক জসীম চৌধুরী সবুজ।
জসীম চৌধুরী সবুজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সাংবাদিকতা আজ দুই ভাগে বিভক্ত—একটি জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক দল, আরেকটি আওয়ামী সাংবাদিক দল। এই বিভাজনের কারণে পেশাদার সাংবাদিকরা পদদলিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। নিজাম ভাই (নিজাম উদ্দিন আহমেদ) একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কখনও সুবিধা দাবি করেননি। তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত ও প্রতিবাদী পেশাদার সাংবাদিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এলাকার সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, যদি সাংবাদিকতাই করেন, তবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে করুন। টাকা কামানোর ইচ্ছে থাকলে সাংবাদিকতার পাশাপাশি ঠিকাদারি না করে, শুধু ঠিকাদারিই করুন। সাংবাদিকতা ও অন্য পেশাকে একসঙ্গে মেশাবেন না। এই শিক্ষা আমরা নিজাম ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আমি নিজেও তা অনুসরণ করার চেষ্টা করি।’ তিনি নিজাম উদ্দিন আহমেদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হোসাইন তৌফিক ইফতিখার, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মিজানুল ইসলাম ও এশিয়ান টিভির ব্যুরো প্রধান সরওয়ার আমিন বাবুসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মোনাজাত পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাবেক কোষাধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন ইউসুফ। মোনাজাতে দেশের শান্তি ও প্রয়াত সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
ফোরামের সভাপতি এসএম রানা তার বক্তব্যে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রামের ইংরেজি দৈনিক দ্য পিপলস ভিউতে ট্রেইনি স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতায় যাত্রা শুরু করেন নিজামউদ্দিন আহমদ। ১৯৮১ সালের শেষের দিকে তিনি চট্টগ্রামের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি লাইফে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি নিউ নেশনের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে তিনি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের স্ট্রিংগার হিসেবে কাজ করেন। তিনি সংবাদ সংস্থা বিএনএ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে রয়টার্সের ঢাকা ব্যুরোতে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের মে মাস পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। সর্বশেষ তিনি দি ডেইলি অবজারভারের বিজনেস এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।