চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটি নিয়ে জল্পনা, নাছির-নওফেল বলয় ভাঙার আভাস

0

সম্মেলন হয়েছে কিছুদিন হলো, কিন্তু শেষ হয়নি হিসাবনিকাশ। কে হবেন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, এই হিসাবের বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি আলোচিত হচ্ছে— কোন গ্রুপ কী পদ পাবেন? এবার আ জ ম নাছির বলয়ের লোকজন শীর্ষপদ পাবে তো? নাকি আগের কমিটিগুলোর মত ‘সান্ত্বনা পুরস্কারেই’ শান্ত থাকতে হবে তাকে?

চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতিতে প্রভাব রাখা দুটি গ্রুপের একটি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং অন্যটি আ জ ম নাছির উদ্দীনের। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বরাবরই সফল মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়। কমিটির ক্ষেত্রেও আধিপত্য তাদের। কিন্তু আ জ ম নাছির বলয় রাজনীতির মাঠে সরব থাকলেও ঠিক কী কারণে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে— সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে বাবার ধারা ধরে রাখতে ভোলেননি মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলও।

চলতি বছরের ৯ মার্চ ঘোষণা করা হয় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি। নাছির গ্রুপের হেভিওয়েট প্রার্থী থাকার পরও তাদের পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হন মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়ের লোক হিসেবে পরিচিত দেবাশীষ নাথ দেবু ও আজিজুর রহমান আজিজ। এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে নাছির বলয় থেকে সহসভাপতি ৩ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান ১ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান ২ জন।

এরপর গত ৩০ মে শেষ হয় নগর যুবলীগের সম্মেলন। তাতে সভাপতি পদে ২৮ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আবেদন জমা পড়ে ৬৫ জনের। এদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ প্রার্থীই মহিউদ্দিন বলয়ের।

নাছির বলয় থেকে দিদারুল আলম দিদার, হাসান মুরাদ বিপ্লব, আব্দুল মান্নান ফেরদৌস, জাবেদুল আলম সুমন, আবু মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, ওয়াহেদুল আলম শিমুল প্রধান দুটি পদের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু নাছির বলয়ের প্রায় সকল নেতাকর্মী বর্তমান নগর যুবলীগের সদস্য দিদারুল আলম দিদারকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন।

Yakub Group

এর আগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় ২০১৩ সালে গঠিত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের কমিটির প্রধান দুটি পদসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ যায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মীদের ঝুলিতে। তারপর একই সালের ৯ জুলাই গঠিত যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতেও ঘটে একই ঘটনা। নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও চার যুগ্ম-আহ্বায়কের তিনজনই সরাসরি ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।

এদিকে মহিউদ্দিন বলয় থেকে যাদের নাম জোর গলায় শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, আরশেদুল আলম বাচ্চু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দীন, কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন।

এদের মধ্যে কমিটিতে মাহবুবুল হক সুমন এবং এম আর আজিম আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন একাধিক সিনিয়র নেতা।

তবে বর্তমান যুবলীগ কমিটির সদস্য আসিফ মাহমুদ চমক দেখাবেন বলে ঈঙ্গিত করেন তারা। তিনিও মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনীতি করে এসেছেন।

বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, নওফেলের পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছেন এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চু। এছাড়া নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনিও তালিকার ভালো জায়গায় আছেন বলে জানা গেছে।

কিন্তু যুবলীগের রাজনীতি না করা কোনো প্রার্থীকে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের প্রধান পদে আনা হবে না বলে ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই হিসাবে কপাল খুলতে পারে সুমন-আসিফের।

এছাড়া মহিউদ্দিন-নাছির বলয়ের বাইরে দেবাশীষ পাল দেবুর কথাও আলোচনায় আসছে। করোনাকালে অনন্য ভূমিকা রাখা সাজ্জাত হোসেনের নামও আলোচিত হচ্ছে কোনো কোনো মহলে।

চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটি বণ্টন নিয়ে উভয় গ্রুপের একাধিক নেতা খোলামেলা আলোচনা করলেও নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি কেউ।

নাম প্রকাশ না করলেও একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, প্রতিবার মহিউদ্দিন বলয় কমিটি বাগিয়ে নিলেও এবার তা হবে না।

জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতে, ঢাকায় উপরের মহলে লবিং করে উপমন্ত্রী নওফেল নগর স্বেচ্ছাসেক লীগ কমিটির প্রধান দুটি পদ বাগিয়ে নেন। হয়তো যুবলীগের বেলায়ও তেমনটা হতে পারে। তবে এবার কেন্দ্রীয় যুবলীগের দায়িত্বে রয়েছে খোদ শেখ মুজিবের পরিবারের সন্তান। যুবলীগ সভাপতি শেখ শামস পরশকে ‘ডোমিনেট’ করার ক্ষমতা এখনো নওফেলের হয়নি। তাই এবারের যুবলীগের কমিটিতে অন্তত একটি হলেও বড় পদ পেতে যাচ্ছে নাছির বলয়।

তবে নওফেল গ্রুপের একাধিক নেতার জানান, আ জ ম নাছির মেয়র থাকাকালীন যেসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন সেজন্য তিনি নেত্রী ও দলীয় হাইকমান্ডের কাছে ‘কালার’ হয়ে গেছেন। নাছিরকে যদি পলিটিক্যালি স্টাবলিশ করতে চাইতো তাহলে ওনাকে মেয়র নমিনেশন দেওয়া হতো। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য কর্মীরাও ভুগছেন। সেজন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকার পরও দুটি প্রধান পদের একটিও তার কর্মীদের ভাগ্যে জুটেনি।

এই গ্রুপের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নাছির ভাই চেষ্টা করছেন দিদার ভাইকে একটা পদে আনার জন্য। ঢাকার নেতাদের কাছে নাছির ভাই সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছে। উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে একটি পক্ষ। তাই তিনি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আগের কমিটিগুলোতে বড় ভাগ পাননি। তবে সেই ষড়যন্ত্র অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন এবং এর প্রমাণ দেখাবেন এবারের যুবলীগের কমিটিতে।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm