চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের প্রথম দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রথমবার আহ্বান করা দরপত্রে নতুন শর্ত জুড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান সেই শর্ত পূরণ করে দরপত্র জমা দিতে পারেনি। কিন্তু পুনঃদরপত্রে আরও একটি নতুন শর্ত দেয় কর্তৃপক্ষ। আর এতে বিপাকে পড়েছে দরপত্র কিনতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলো। দুই নতুন শর্তের কারণে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান পুনঃদরপত্রের সিডিউল কিনেছে। একইসঙ্গে পুনঃদরপত্রের বিজ্ঞপ্তিতে প্রিটেন্ডার মিটিংয়ের কথা বলা হলেও এখনও তা আয়োজন করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন সিডিউল ক্রয় করা প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের জন্য গণমাধ্যমে গত ১৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ১ সেপ্টেম্বর। সেটিতে নতুন শর্ত হিসেবে বলা হয় দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর হতে লাইন্সেন্স প্রাপ্তির পর ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু সেই দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয় গত ২৩ অক্টোবর। এবার সেই বিজ্ঞপ্তিতে আগের শর্তের সঙ্গে যোগ করা আরও এক শর্ত। সেই শর্তে বলা হয়, পাঁচ অর্থবছরের যেকোনো এক বছর ৭৫ জন আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এই দুটি নতুন শর্তের পর ‘শাপলা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত ৩০ অক্টোবর একটি সিডিউল কেনে। পুনঃদরপত্রের শেষ সময় ৬ নভেম্বর। তবে বিজ্ঞপ্তিতে গত ৩০ অক্টোবর প্রিটেন্ডার মিটিংয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও কোনো প্রিটেন্ডার মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়নি। যা পিপিআর ২০০৮ এর ধারা ৫৬(খ) এর উপধারা ৫ এর লঙ্ঘন বলে জানা গেছে।
বর্তমান পুনঃদরপত্রের সিডিউলের শর্ত ৮ এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পূর্বের শর্ত পরিবর্তন করে (পিপিআর ২০০৮ এর ধারা ৫৬(খ)এর উপধারা ৪ লঙ্ঘন করে) নতুন শর্ত সংযোজন করা হয়েছে। বর্তমান শর্ত ৮ অনুযায়ী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে যে কোনো এক বছরে ৭৫ জন আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেলে আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের দরপত্র আহ্বান শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই শর্ত অনুযায়ী প্রশাসনিক অনুমোদনের চিঠিতেও ওই লাইসেন্স চাওয়া হয়নি।
এবারের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের তালিকায় রয়েছে ৮ম শ্রেণি পাস এসি মেকানিক ১ জন, স্যানেটারি মিস্ত্রি ১ জন, বাবুর্চি ৩ জন, সহকারী বাবুর্চি ৪ জন, ওয়ার্ডবয় ৪১ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৬৩ জন, আয়া ২০ জন, সহকারী গার্ডেনার ১ জন, স্যানেটারি হেলপার ১ জন, ল্যাব এটেন্ডেন্ট ৫ জন, ওটি এটেন্ডেন্ট ২০ জন, স্ট্রেচার বিয়ারার ১৫ জন, লিফটম্যান ১৪ জন, হোস্টেল এটেন্ডেন্ট ২ জন এবং ওপিডি এটেন্ডেন্ট ২ জন।
সিডিউল ক্রয় করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাপলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী প্রণয়ন বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরসহ আজ পর্যন্ত হাসপাতালে আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের কাজ সুনামের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে আমার প্রতিষ্ঠান শাপলা এন্টারপ্রাইজ। গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২২-২৩ সালের জন্য অনুষ্ঠিত আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের দরপত্রে প্রথমবারের মত সেবাকর্মী সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি সংস্থায় রেজিস্ট্রেশন ও নবায়নকৃত লাইসেন্সের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। গত বছরের আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের দরপত্রে তা চাওয়া হয়নি। এরপরও আমরা সেই অনুযায়ী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তাই দরপত্রের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্সটি আমরা হাতে পাইনি। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান রেসপন্সিভ না হওয়ায় দরপত্রটি পুনরায় আহ্বান করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২২ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত কেউ সিডিউল কেনেননি। ৩০ অক্টোবর আমি দরপত্রের সিডিউল কিনি। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে গত ৩১ অক্টোবর তারিখে প্রিটেন্ডার মিটিংয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও কোনো ধরনের মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়নি। ফলে পুনঃদরপত্রের সিডিউলে উল্লেখ করা নতুন কিছু শর্ত দৃষ্টিগোচর হলেও তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাইনি।’
প্রণয়ন বড়ুয়া আরও বলেন, ‘দরপত্রে এমন একটি প্রশ্নবিদ্ধ শর্ত আরোপ কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদানের জন্য বলে আমি মনে করি।’
আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জমজম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী দিদারুল আলম বলেন, ‘২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমার প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহ করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমার প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের জন্য দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। দরপত্রে ঠিকাদারি সংস্থার লাইসেন্স না থাকায় সকল দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু পুনঃদরপত্রে নতুন শর্তে বলা হয়, লাইসেন্স প্রাপ্তির পর গত ৫ বছরের মধ্যে ১ বছর ৭৫ জন আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে এ রকম শর্ত পূরণ করতে বলা হয়নি। শর্তের কারণে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সুবিধা পাবে বলে মনে করি। এদিকে শর্ত পূরণ করতে না পারায় আমি ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো সিডিউল ক্রয় করতে পারিনি।’
এদিকে পুনঃদরপত্রে দেওয়া নতুন দুই শর্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
ডিজে