s alam cement
আক্রান্ত
৯১০২৮
সুস্থ
৫৭৯৫৬
মৃত্যু
১০৭২

পরীক্ষা দিতে মরিয়া চবি শিক্ষার্থীরা, কর্তৃপক্ষের ‘না’

দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটে ১০টিরও বেশি বিভাগ

0

‘শিক্ষকদের অবহেলার কারণে পরীক্ষা হয়নি দেড় বছর। এরপর এলো করোনা। এই করোনাতেও যাচ্ছে দেড় বছর। করোনা কখন যাবে তারও ঠিক নাই। অন্য বিভাগের বন্ধুরা গতবছর অনার্স শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ চাকরিতে যোগও দিয়েছে। আর আমরা এখনো তৃতীয় বর্ষই শেষ করতে পারিনি। কখন অনার্স শেষ করবো, আর কখন চাকরি বাকরি করবো তার কোন ঠিক নাই। পরিবারের যে হাল আমাকে ধরার কথা উল্টো পরিবার থেকে টাকা নিয়ে নিজে চলছি। এখন অনলাইন, অফলাইন বা অন্য যেকোন উপায়ে পরীক্ষাটা দিতে পারলে যেন উদ্ধার হই।’

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইংরেজি বিভাগের আব্দুল আহাদ (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী। বিভাগের শিক্ষকদের অবহেলা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, করোনাসহ বেশ কিছু কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় তিন বছর ধরে তৃতীয় বর্ষে আটকে আছেন তিনি।

একইভাবে আড়াই বছর ধরে তৃতীয় বর্ষে আটকে আছেন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রবরাও। তিনবার পরীক্ষার রুটিন দেওয়ার পরও তাদের পরীক্ষা শুরু হয়নি। যদিও ২০১৯ সালে তার অনার্স শেষ হওয়ার কথা।

আব্দুর রব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এভাবে আর ঝুলে থাকতে চাই না। অটোপাশ হোক অনলাইন বা অফলাইন হোক পরীক্ষা নিয়ে নিক। আমরা আর মানসিক যন্ত্রণায় থাকতে চাই না। করোনা শুরু হওয়ার আগে একবার, করোনা শুরু হওয়ার পরে দুইবার রুটিন দিয়েও আমাদের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়নি।’

শুধু আব্দুল আহাদ বা আব্দুর রবই নন, পরীক্ষা না হওয়ায় এভাবে সেশনজটে আটকে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের হাজারও শিক্ষার্থী। তারা অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে দ্রুত শিক্ষাজীবন শেষ করতে চান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে এই মুহূর্তে অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে তারা ভাবছেন না। শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা গেলে হল খুলে সশরীরেই পরীক্ষা নেওয়া হবে।

দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটে কয়েকটি বিভাগ
এদিকে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টিরও বেশি বিভাগ। এদের মধ্যে রয়েছে— ইংরেজি, ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স, মেরিন সায়েন্সেস, ফিশারিজ, ওশনোগ্রাফি, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন ও পরিবেশ বিদ্যা ইনস্টিটিউট, প্রাণিবিদ্যাসহ আরও কয়েকটি বিভাগ। এদের মধ্যে কোনটিতে দুই থেকে আড়াই বছরেরও বেশি জট রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা না হওয়ায় এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত।

Din Mohammed Convention Hall

আড়াই বছরেও প্রথম বর্ষের গণ্ডি পার হতে না পারা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন সিফাত বলেন, ‘আমরা আড়াই বছর ধরে একই বর্ষে আছি। আমরা দুই বার পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। প্রথম বার তিনটা পরীক্ষা এবং দ্বিতীয়বার একটা পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেখানে বাসা ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ করেও পরীক্ষা শেষ করতে পারিনি। আমাদের অনেকেরই চাকরির বয়স পার হয়ে যাবে অনার্স শেষ করতে করতে। আমাদের পরিবার থেকে অনেক চাপ দিচ্ছে। এখনই যদি পরীক্ষা শুরু না করা হয় তাহলে অনেকের শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ। অফলাইন হোক বা অনলাইন হোক পরীক্ষা দিতে চাই।’

ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রায়হান বলেন, ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছি। দেড় বছর ধরে সপ্তম সেমিস্টারে পরে আছি। অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চাই।’

ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমান নোবেল বলেন, ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমাদের ৮ম সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ছিল। ডিপার্টমেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে যথারীতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দীর্ঘ ১৬ মাসে একটা সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা নিতে পারেনি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দিনেও এই পরীক্ষা নেওয়ায় ব্যাপারে তারা কোনো পন্থাও তৈরি করে নাই। অনলাইন হোক,ওপেন বুক হোক কিংবা হলে যেভাবে হোক পরীক্ষা দিয়ে আমাদের অভিশপ্ত সেশনজট থেকে মুক্তি চাই।’

জানা যায়, গত ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এজন্য আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সাতটি শর্ত জুড়ে দিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করে টেকনিক্যাল কমিটি। এগুলো মেনে পরীক্ষা নিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর তা হতে পারে অনলাইনে পরীক্ষা, কুইজ, সৃজনশীল কাজ, মৌখিক পরীক্ষা। এদিকে ইউজিসির নির্দেশনার পর গত ২৩ মে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালযের সহ-উপাচার্যকে প্রধান করে ডিনদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটি প্রত্যেক বিভাগকে একাডেমিক কমিটির মিটিং করে সিদ্ধান্ত দিতে বলে। তবে প্রায় বিভাগই সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দেয়ায় ১৫ জুন একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় সব পরীক্ষা সশরীরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনে ফের স্থগিত হয়ে যায় সব পরীক্ষা।

এদিকে অর্ডিন্যান্স জটিলতা, বিভাগীয় সভাপতিদের দ্বিমত, টেকনিক্যাল সমস্যা ও পরীক্ষার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে অনাগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি যদি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে তবে আমরা পরীক্ষা নিয়ে নেবো। আর যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে পরীক্ষা নিতে পারবো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিভাগের সভাপতি বলেন, ‘যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগই হয় মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে, সেখানে ছাত্রদের পরীক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট বা ভাইভার মাধ্যমে নিলে সমস্যা কোথায়? শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবনের কথা ভেবে আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান বলেন, ‘করোনা যেহেতু বাড়তেছে সেহেতু আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের এভাবে বসিয়ে রাখা যাবে না। অনলাইনে পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া যায় প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে আমরা নেতিবাচক না। তবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।’

এদিকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়টা আমাদের অর্ডিন্যান্সে নাই। অনলাইনে পরীক্ষা নিতে হলে আমাদের অর্ডিনেন্স পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে থাকে। সেখানে সবার কাছে স্মার্ট ডিভাইস, পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিরাও সশরীরে পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের সব বিভাগের ক্লাস ৯০ শতাংশের ওপরে নেওয়া আছে। বর্তমানে টিকা কার্যক্রম চলছে। সবার টিকা নিশ্চিত হলে হল খুলে সশরীরে পরীক্ষা নেবো।’

এমআইটি/সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm