s alam cement
আক্রান্ত
৮৩৮৭১
সুস্থ
৫৫৮২৪
মৃত্যু
৯৮৪

চট্টগ্রামে উত্থান মডেল পিয়াসার ডালপালা মেলে ঢাকায়, শূন্য থেকে কোটিপতি

0

চট্টগ্রামেই জন্ম ও মডেলিংয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল ঢাকার অভিজাত মহলে পরিচিত মুখ মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। ৩২ বছর বয়সী পিয়াসার হাত অনেক লম্বা, তাকে সমীহ করে চলেন অনেক বাঘা বাঘা শিল্পপতিও— এমন কথা ঢাকার অভিজাত মহলে সবাই জানেন। সেই পিয়াসাই হঠাৎ করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বিস্মিত অনেকেই হিসাব মেলাতে পারছেন না।

পিয়াসাকে রাজধানীতে তার বারিধারার বাসা থেকে রোববার (১ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধরার পর পুলিশ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ তুলেছে, পিয়াসা তার বাসায় ডেকে উচ্চবিত্তদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। অভিযানে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, ইয়াবা জব্দ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

পিয়াসার পাশাপাশি মৌ নামের আরও এক মডেলকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার (২ আগস্ট) রাত ১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি ঢাকা উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তারা দুজন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। আটক দুজন দিনের বেলায় ঘুমান এবং রাতে এসব কর্মকাণ্ড করেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় এলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরে সেসব ভিডিও এবং ছবি পরিবারকে পাঠাবেন বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন।’

উত্থান যেভাবে

চট্টগ্রাম নগরীর আসকারদিঘি এলাকায় ছিল পিয়াসার বাসা। ২০১৫ সালে ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে পিয়াসার বিয়ের যে কাবিননামা হয়, সেখানে পিয়াসার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ ছিল— ৩ আর কে মিশন লেন, আসকরদিঘীর পশ্চিম পাশ, চট্টগ্রাম। এক টাকা দেনমোহরের ওই বিয়েতে কন্যাপক্ষে উকিল ছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাজিরহাট এলাকার আব্দুল জলিলের পুত্র আব্দুল মোতালেব।

১৯৮৯ সালের ১০ নভেম্বর এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম পিয়াসার। বাবা মাহাবুব আলম ছিলেন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তার মায়ের নাম রকি মাহাবুব।

Din Mohammed Convention Hall

চট্টগ্রামে উত্থান মডেল পিয়াসার ডালপালা মেলে ঢাকায়, শূন্য থেকে কোটিপতি 1

২০০৮ সালের দিকে পিয়াসাকে প্রথম অংশ নিতে দেখা যায় চট্টগ্রামে ঈদ উপলক্ষে দৈনিক সমকাল পত্রিকার একটি ফ্যাশন সংখ্যার ফটোসেশনে। এরপর তাকে দেখা গেছে স্থানীয় কয়েকটি ফ্যাশন শোতেও। তবে তার লক্ষ্য ছিল আরও বড়।

লক্ষ্য ছিল আরও দূরে

পরের বছরেই পিয়াসা তার মা রকি মাহাবুবকে সঙ্গী করে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় যাওয়ার কিছুদিন পর পিয়াসার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে এশিয়ান টিভির সাবেক এমডি মিজানুর রহমানের সঙ্গে। এর সূত্র ধরে ধীরে ধীরে মিডিয়াপাড়ার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন পিয়াসা। এ সময় তাকে টিভি উপস্থাপক হিসেবেও দেখা যায়। একসময় তিনি হয়ে ওঠেন এশিয়ান টেলিভিশনের পরিচালক এবং প্রিভিউ কমিটির প্রধান। এনটিভির রিয়েলিটি শো ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’র অন্যতম প্রতিযোগীও ছিলেন পিয়াসা।

পিয়াসা এ সময় নানা কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তোলেন ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছাড়াও ধনীর সন্তানদের সঙ্গে। তাদের সুনজরে থেকে বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে ওঠেন। গুলশান বারিধারার অভিজাত ফ্লাটে বসবাস তার। চড়েন কোটি টাকার বিএমডাব্লিউ গাড়িতে। সন্ধ্যা হলেই তাকে একদল তরুণী নিয়ে রাজধানীর অভিজাত সিসা বা মদের আড্ডায় দেখা যায়।

সর্বশেষ তাকে সোহানা গ্রুপ ও কক্সবাজারের বিলাসবহুল হোটেল হোয়াইট স্যান্ড রিসোর্টের পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।

২০১৫ সালে দীর্ঘদিনের প্রেমিক আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদকে বিয়ে করেন তিনি।

বিতর্কিত নানা ঘটনায় আলোচিত

এরপর বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনায় আলোচনায় আসেন পিয়াসা। ২০১৭ সালে মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তার নাম সামনে আসে। সর্বশেষ গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর যে মামলা হয়েছিল তাতেও পিয়াসার নাম ছিল।

২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে নাম ছিল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। প্রথমে মামলা করতে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করেছিলেন পিয়াসা। কিন্তু সেই পিয়াসার বিরুদ্ধেই আবার মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগে জিডি করেছিলেন ভুক্তভোগী। চার বছর পর আবারও আলোচনায় আসেন সেই পিয়াসা।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জুয়েলারি শপ আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ছিলেন ওই ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি। পিয়াসা ছিলেন সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী। রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই সাফাতের সঙ্গে পিয়াসার ডিভোর্স হয়েছিল। ওই ঘটনার পর দিলদার আহমেদ তার সাবেক পুত্রবধূ পিয়াসার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। পিয়াসাও সাবেক শ্বশুর দিলদার আহমেদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছিলেন।

সেসময় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার নেপথ্য কারিগর হিসেবে পিয়াসাকে অভিযুক্ত করেছিলেন। পরে অবশ্য তাদের মধ্যে সমঝোতা হয় বলে খবর প্রকাশ পায়। ধর্ষণের শিকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে সহায়তার কথা স্বীকার করলেও কয়েকদিনের মাথায় পিয়াসা তাদের মীমাংসা করার জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। এজন্য পিয়াসার বিরুদ্ধে দুটি সাধারণ ডায়েরিও করেন তিনি।

এদিকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের মামলার এজাহারে ‘ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার’ নাম উল্লেখ করেন মামলার বাদি ও কলেজছাত্রী মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান। নুসরাত জাহান জানান, ২০১৯ সালে স্ত্রী পরিচয়ে বনানীর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে মুনিয়াকে নিয়ে থাকতেন আনভীর। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার এক নারীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে। ওই সময় ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসাকে দিয়ে মুনিয়াকে নিজেদের বাসায় ডেকে নেন আনভীরের মা। বাসায় নিয়ে তাকে হুমকি-ধমকি দেন। আনভীরের সঙ্গে মেলামেশা করলে পরিণতি হবে কঠিন। শর্ত দেন বেঁচে থাকতে চাইলে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm