বিয়ে করে ‘সমাজের’ জরিমানা খেলো লোহাগাড়ার যুবক, ক্ষোভের পোস্ট ভাইরাল ফেসবুকে

0

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উপজেলার বাসিন্দা মো. ওয়াহিদুল আলমগীর। বিয়ে করলেন তিনি। কিন্তু বিয়েতে সমাজের মানুষদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোয় আয়োজন করতে পারেননি। তাই চটলো সমাজের ‘কর্তা’ ব্যক্তিরা। বিয়ে করে না খাওয়ানোর ‘দায়ে’ আলমগীরকে গুণতে হচ্ছে মাশুল। সমাজের রীতি ভাঙায় তাকে তারা জরিমানা করেছে ১০ হাজার টাকা।

এমন ঘটনা ঘটলো লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাটখোলা মুড়া এলাকার আউলিয়া মসজিদ সমাজে।

ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি থেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ওয়াহিদুল আলমগীর দিয়েছেন পোস্ট। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনাও। অনেকেই এই ধরনের রীতিকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ সমাজের কথিত নেতাদের বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী মো. ওয়াহিদুল আলমগীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ছুড়ে লিখেছেন, ‘বিয়ে করা কি পাপ? মা মারা যাওয়ার পরে একবেলা খেয়েছি, দুই বেলা খেতে পারি নাই। তখন তো সমাজ দেখে নাই।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিয়ে করে সমাজের লোকজনকে একবেলা ভাত খাওয়াতে পারিনি বলে তখন নিকৃষ্ট সমাজ (চুনতি আউলিয়া মসজিদ সমাজ) আমাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে। আল্লাহর কাছে বিচার চাই। এই জালিম সমাজ ধ্বংস হোক। হয়তো সুযোগ এবং সামর্থ্য ছিল না। না হয় কেউ কারো কাছে মাথা নত করে না।’

ওই পোস্টে শহীদ উল্লাহ নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘যখন তুমি চাকরির জন্য হাহাকার করছিলে, তখন এই সমাজ কোথায় ছিল। তারা শুধু খেতে চায় কেন? দায়িত্ব নিতে পারে না কেন? তাহলে সমাজ কি শুধু বিয়ের ভাত খাওয়ার জন্য?’

ভুক্তভোগী মো. ওয়াহিদুল আলমগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সমাজে তো অনেকেই আমার মতো বিয়ে করেছেন। তাদের তো কাউকেই জরিমানা করা হয়নি। আমি যখন বিয়ে করি তখন লকডাউন ছিল এবং আমার আর্থিক অসচ্ছলতা রয়েছে। যার কারণে সমাজের লোকদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্থানীয় একটি চক্র আউলিয়া মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করে। আমি তার প্রতিবাদ করায় আমাকে বিয়ের অজুহাতে ১০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে। আমার কাছে টাকা না থাকায় আমার বাবা ঋণ করে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেছেন।’

স্থানীয় সমাজের সর্দার শামসুউদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘সমাজকে না জানিয়ে বিয়ে করায় তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এটি গত ১০ বছর ধরে আমাদের এলাকায় সামাজিক নিয়ম’।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু বলেন, ‘এভাবে সমাজের সর্দারদের জরিমানা করার কোনো এখতিয়ার নেই। এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ভুক্তভোগীর উচিত হবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা। তারপরও যদি ভুক্তভোগী কোনো প্রতিকার না পান তাহলে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিবে।’

আরএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm