রাতেই ফাঁসি চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধার ২ খুনির, কুমিল্লার ফাঁসির মঞ্চে মহড়া শেষ

0

সাড়ে ১৭ বছর পর চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী আমবাগানের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রেলওয়ে কর্মচারী শফিউদ্দিনের দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর হবে আজ মঙ্গলবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে। ইতিমধ্যে ফাঁসির মঞ্চে মহড়াও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে দুই আসামির পরিবারের লোকজন তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে আবার শেষ দেখা করবেন। রাতে ফাঁসি কার্যকরের পর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

দণ্ডিত দুজনের ফাঁসি কার্যকর হবে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আসাদুর রহমান বলেন, ২০০৪ সাল থেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি কারাগারে রয়েছেন। প্রায় তিন বছর আগে তাদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন। পরে পুনর্বিবেচনাও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়, তবে সেটিও খারিজ হয়ে যায়।

দণ্ডিত এই দুজন হলেন— শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ইমন। দণ্ডিত শিপন হাওলাদার (বন্দি নং ৫০৭৯/এ) চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর দক্ষিণ আমবাগানের প্রয়াত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নন্দনসার গ্রামে। অপরজন নাইমুল ইসলাম ইমন (বন্দি নং ৫৭৩৮/এ) চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার ডেবারপাড় এলাকার ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর পূর্বপাড়ায়।

যাকে হত্যার দায়ে দুজনের ফাঁসি হতে যাচ্ছে, সেই শফিউদ্দিন ছিলেন রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী। এছাড়া তিনি স্থানীয় রেলওয়ে আমবাগান এলাকার আইনশৃংখলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়কও ছিলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।

জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় গুলি করে খুন করা হয় শফিউদ্দিনকে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় শিপন, ইমন, হেলাল ওরফে জিএস হেলালসহ সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে খুন করেন তাকে। ওই সময় রক্তমাখা শার্ট গায়ে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন শিপন হাওলাদার।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন।

২০০৪ সালের শেষদিকে চট্টগ্রাম আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আসামির শিপন ও ইমনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া হেলাল, ফরহাদ ও মারুফ শিকদারকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. হোসেন হিরণ এবং তার ছেলেসহ ছয়জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফরহাদ, মারুফ শিকদার সাজা ভোগ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। তবে হেলাল ওরফে জিএস হেলাল এখনও চট্টগ্রাম রেলে টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে শফিউদ্দিনের স্ত্রী মাসুদা বেগম (৭০) বলেন, দুজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে—এমন কথা আমিও শুনেছি। আশাকরি ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে আমার স্বামী হত্যার ন্যায় বিচার পাবো।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm