ভোগান্তি পেরিয়ে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ, চট্টগ্রামের টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড়

0

তীব্র তাপদহের মধ্যেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ পালনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মঙ্গলবার ঈদ। তাই সোমবারের মধ্যেই পৌঁছাতে হবে বাড়ি। এজন্য ভীড়, যানজট ও বাড়তি ভাড়ার চাপ পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবহনের উঠেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে যাত্রীরা। এ যেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।

চট্টগ্রাম থেকে ৬৪ জেলার গণপরিবহন চলাচল করছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনালগুলোর মধ্যে রয়েছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, অক্সিজেন বাস টার্মিনাল, অলংকার বাস টার্মিনাল, মাদারবাড়ি বাস টার্মিনাল, দামপাড়া বাস টার্মিনাল, কদমতলী বাস টার্মিনাল ও শাহ আমানত বাস টার্মিনাল।

এরমধ্যে অক্সিজেন বাস টার্মিনাল থেকে গাড়ি যাচ্ছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, কাপ্তাই ও খাগড়াছড়ি। কদমতলী ও অলংকার বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলছে দাউদকান্দি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে।

অন্যদিকে বহদ্দারহাট ও শাহ আমানত বাস টার্মিনাল থেকে গাড়ি চলাচল করছে বান্দরবান, সাতকানিয়া, কক্সবাজারসহ ২০টি রুটে।

এদিকে গণপরিবহনের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই বাড়তি ভাড়ায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে নিয়ে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। এদের একজন আলমগীর হোসেন পরিবার নিয়ে যাবেন কক্সবাজার। গণপরিবহনের ঝামেলায় না গিয়ে মাইক্রোবাসের করে রওনা দেন তিনি।

এর আগে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সারাদেশে তীব্র তাপদহ। বাসে করে রোজার মধ্যে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই গাড়ি রিজার্ভ করে চলে যাচ্ছি। কিছু বাড়তি টাকা যাচ্ছে, তাও কিছুটা শান্তিতে যেতে পারব। এজন্য টাকা ছাড়তো একটু দিতেই হবে।’

ব্যাংকার লুবনা সুলতানা বলেন, ‘২৯ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি থাকলেও শনিবার আমাদের ব্যাংক খোলা ছিল। এজন্য আমি বাড়ি যেতে পারিনি পরিবার নিয়ে। আজ (রোববার) বাড়ি যাওয়ার জন্য বসে আছি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। যাত্রীর চাপও অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি আছে। তারপরও যেতে হচ্ছে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঈদ করব বলে। আমাদের সঙ্গে ঈদ করবেন বলে উনারা অপেক্ষা করছেন। হাজার দুর্ভোগ পেরিয়ে হলেও আমাদের নাড়ির টানে যেতে হয় বাড়ি।

বাসচালক মো. মিন্টু বলেন, ‘অন্যান্য ঈদে যে পরিমাণ যাত্রী থাকে এবার তারচেয়ে বেশি। কিন্তু ঈদের ছুটি আগে হওয়ার কারণে চাপ একটু কম হচ্ছে। সবাই আরামে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারছে। এখনও কিছু কলকারখানা ছুটি দেয়নি। তাদের ছুটি হলে চাঁদরাতের আগে কিছুটা বাড়তি চাপ পড়বে যাত্রীদের।’

এদিকে বাড়তি ভাড়ার নেওয়ার অভিযোগে তুলে মো. কাউছার নামের এক যাত্রী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কক্সবাজার যাওয়ার জন্য নতুন চান্দগাঁওয়ে একটি বাস কাউন্টারে যাই। আগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পূরবী এসি বাসের টিকিট ছিল ৪০০ টাকা। ওইদিন একটা টিকিটের জন্য ৫০০ টাকার নোট দিই। টিকিট আমার হাতে দেওয়ার পর ১০০ টাকা চাইলে কাউন্টার থেকে জানায়, ভাড়া ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ১০০ টাকার ভাড়া বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে, ঈদে যাত্রীর চাপ বেশি থাকার অজুহাত দেখান তারা। পরে আমি টিকিট বাতিল করে দিই।’

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া কোনো যুক্তি নেই। চাপ বাড়লে তাদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির খুব দরকার। যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুবছর ঈদে যে চিত্র ছিল এবার তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারপরও এবার ঈদের কিছুটা হলেও সাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারছে মানুষ। এবার অনেক আগেই প্রায় সবাই ছুটি পেয়েছে। হাতে কয়েকদিন সময় ছিল, যার ফলে এবার যাত্রীরা আরামে বাড়ি ফিরতে পারছেন।’

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে এবার ৬৪টি জেলার সব রুটেই এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ গাড়ি চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিয়েই আমরা গাড়িগুলো ছেড়েছি। এবার কিন্তু বাড়তি ভাড়ার কোনো অভিযোগ নেই। যাত্রীদের থেকে হেল্পাররা অল্প টাকা নিচ্ছেন। তাও ৫০/৬০ টাকা বেশি দিচ্ছে যাত্রীরা খুশি মনে, বকশিস হিসেবে। এটাকে আমরা অভিযোগ হিসেবে ধরছি না তাছাড়া যাত্রীদের জোর করা হচ্ছে না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm