s alam cement
আক্রান্ত
১০২১৮২
সুস্থ
৮৬৮৫৬
মৃত্যু
১৩২১

মনোনয়ন বাণিজ্যের নালিশ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তৃণমূলের আস্থা হারাচ্ছে

ইউপি ভোটে বিতর্কিতদের পোয়াবারোয় ত্যাগীদের হতাশা

0

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়ছেন না। চট্টগ্রামে সম্প্রতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে একটি ইউনিয়নে প্রার্থী বদলে যাওয়ার ঘটনায় নেতাকর্মীরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও অন্য নেতাদের প্রতি আরও বেশি সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিতদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার পেছনে প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলছেন তারা জোরালোভাবেই।

নানা নাটকীয়তার পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নে অবশেষে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে। যদিও ওই ইউনিয়ন থেকে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলমগীর জামানের নামই ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এই ঘোষণার পরপরই শাহনেওয়াজ চৌধুরীর শুভাকাঙ্ক্ষীরা অভিযোগ তোলেন, মনোনয়ন বোর্ড থেকে শাহনেওয়াজ চৌধুরীকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ ব্যক্তিস্বার্থে সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছে। এমন অভিযোগের পর শাহনেওয়াজ চৌধুরী সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই হোয়াটসঅ্যাপে এই বিষয়ে জানান।

এর কয়েক ঘন্টা বাদে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া মুঠোফোনে শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে জানান, ধলই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন তিনি। আগের ঘোষণায় ভুল ছিল। তবে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এমন ভুল ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জোরালোভাবে। এর পাশাপাশি সবাই শাহনেওয়াজ চৌধুরীর মতো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠছে দলীয় সভানেত্রীর পর দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে।

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, অন্য নেতাদের কাছে সুবিচার পাওয়া বেশ কঠিন। কেউ কারও কথা শুনতেও রাজি না। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিতদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে— এমন অভিযোগ তুলতে এখন আর কেউ রাখঢাক করছেন না। নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, অর্থের বিনিময়ে বা নিজের বলয় ধরে রাখতে প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে চিহ্নিত কিছু নেতা বিতর্কিতদের মনোনয়ন পাইয়ে দিচ্ছেন।

এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে দলের যোগ্য প্রার্থী হচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিত। আর এতে ত্যাগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। বিভিন্ন স্থানে তাদের সমর্থকরা বিক্ষোভ করে জানাচ্ছেন প্রতিবাদ। প্রার্থী পরিবর্তন না হলে অনেকেই ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিদ্রোহী প্রার্থী বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া শতাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে। গত এক সপ্তাহে এসব অভিযোগ জমা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী পরিবারের সদস্য, অনেকে আবার সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

Din Mohammed Convention Hall

অভিযোগ যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে কেউ আবার বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা, কেউ খুন ও নারী নির্যাতন মামলার আসামি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, বিধবাভাতার কার্ড নিয়ে প্রতারণা, গরিবের চাল বিক্রিসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের নামও আছে অভিযুক্ত প্রার্থীদের তালিকায়।

টাকার বিনিময়ে এসব বিতর্কিতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।

সূত্র জানায়, বিতর্কিত ও বিদ্রোহীদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে তৃণমূলে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কোথাও কোথাও নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করেছেন স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ উপজেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা। কিছু কিছু জায়গায় পাঠানো হয়েছে একজনের নাম।

এসব বিষয়ে অবশ্য মুখ খুলতেও নারাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতাবানদের বিরাগভাজন হতে না চাওয়া বা মন রক্ষা করে চলতে চাওয়াকেই এর প্রধান কারণ মনে করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। পাশাপাশি রাজনীতির সবকিছুতেই অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এসব বিষয়ে ফোরামে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজার কথাও বলছেন তারা।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে যা হল, সেটাকে কিভাবে দেখছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মনোনয়ন বোর্ডের এই এখতিয়ার আছে। উনারা কাউকে মনোনয়ন দিতেও পারেন, আবার প্রয়োজনবোধে সেটা বাতিলও করতে পারেন।’

এক্ষেত্রে ধলইয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার ভুলটি ইচ্ছাকৃত ভুল নাকি অনিচ্ছাকৃত? — এমন প্রশ্নের জবাবে আতাউর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আত্মসমালোচনা বা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়ে যাবে এসব বলতে গেলে। তাই আমি এ প্রসঙ্গে বাইরে কথা বলতে চাই না। আমরা এগুলো দলীয় ফোরামে বলবো।’

এই সঙ্গে তিনি এও যোগ করেন, ‘তবে আমাদের দেশে এটা এখন একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে সবকিছুতেই টাকার একটা আলোচনা জুড়ে যাচ্ছে।’

এক্ষেত্রে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করতে দলীয় ফোরাম কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ আতা বলেন, ‘আসলে কেউ কারও বিরাগভাজন হতে চায় না, সবাই সবার মন রক্ষা করে চলতে চায়— এটাই মূল সীমাবদ্ধতা। তবে আমি মনে করি এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দলীয় ফোরামেই এসব অভিযোগ উত্থাপন করা উচিত এবং এসব সমস্যার সমাধানও হওয়া উচিত।’

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm