সাঈদীর গায়েবানা জানাজায় সংঘর্ষে নিহত ১, চকরিয়া-পেকুয়ায় আহত ২৮

কক্সবাজারের চকরিয়ায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরও ১৩ জন। এদের মধ্যে পুলিশের ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

এই সময় পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

অপর দিকে পেকুয়ায় জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ওসিসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪ টায় চকরিয়ার লামার চিরিংগায় ঘটনার সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ।

নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ ফোরকান (৬০)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের ছেলে।

চকরিয়ার স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, চকরিয়া সরকারি হাইস্কুল মাঠে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করার পূর্ব ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু অনুমতি না থাকায় পুলিশ সেখানে জানাজা পড়তে দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে বিকাল সাড়ে ৪ টায় কয়েক হাজার লোক চকরিয়া পৌরসভার লামার চিরিঙ্গা এলাকায় জড়ো হয়ে জানাজা শুরু করে। এই সময় অজ্ঞাত মুখোশধারী অর্ধশত লোক গিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে।

Yakub Group

জানাজা পণ্ড হয়ে গেলে অজ্ঞাত লোকজন গুলিবর্ষণ করতে করতে লাঠি দিয়েও কয়েকজনকে মারধর করে। পুলিশ আসার আগেই এসব লোকজন পালিয়ে যায়। পরে জানাজায় আসা লোকজন ইট-পটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া পুলিশের একটি ও চলাচলরত অপর একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ছৈয়দ ইফতেখারুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধসহ ৭ জন আহত চিকিৎসা নিচ্ছে।

চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনিসহ পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, চকরিয়ায় জানাজা নিয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে গুলিবর্ষণ পুলিশের পক্ষে করা হয়নি। এতে হতাহত কতজন তা বিস্তারিত পেলে জানানো হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, ‘নিষেধ করা সত্ত্বেও স্থান পরিবর্তন করে গায়েবানা জানাজা পড়ে তারা। পরে মিছিল নিয়ে পৌরশহরের সহাসড়কে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশ ও পাবলিকের গাড়ি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘হয়তো নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে হতাহত হতে পারে। তা তদন্ত করা হবে।’

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পৌরশহরে ইউএনও জেপি দেওয়ান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব-উর-রাজা’র নেতৃত্বে বিপুল পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য নিরাপত্তা ও হাঙ্গামা দমাতে সড়কে অবস্থান করেছিলেন।

এদিকে পেকুয়ায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ওসিসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্যদের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হামলায় আহতরা হলেন পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলাম, অমর চন্দ্র বিশ্বাস, মফিজুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)  মো. জসিম উদ্দিন, কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রদীপ কুমার দে, মো. সবুর মিয়া, রবি উল্লাহ, ইমরান হোসেন, রামকৃষ্ণ দাশ, তৌহিদুল ইসলাম, রিপন মিয়া, রিয়াজুল ইসলাম। এদের মধ্যে এসআই শাহিনুল ইসলামের হাত ও অমর চন্দ্র বিশ্বাসের পায়ের আঘাত গুরুতর।

পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার ঘটনার সত্য নিশ্চিত করে জানান, পেকুয়া সদরের একটি মাঠে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওখানে অনুমতি না থাকায় বাধা দেওয়া হয়। ওখান থেকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদির নেতৃত্বে লোকজন বারবাকিয়া বাজারে চলে যায়। ওখানে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার নামাজ শুরু করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশের একটি টহল টিম বাজারে উপস্থিত ছিল। নামাজ চলাকালীন সময় হঠাৎ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে তারা।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি। এই সময় জানাজায় আগত লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে তিনিসহ ১৫ জন পুলিশ আহত হন।

মোহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!