সিডিএর জমিতেই এস আলমের ছেলে-ভাইয়ের ‘ম্যাজিক’, বন্ধক রেখে নেন বড় অংকের ঋণ
২৫ বছরেও ভবন ওঠেনি, নথি জব্দ করেছে দুদক
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্রায় ২৫ বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকা ইজারা জমি হঠাৎই দেখা গেল বাণিজ্যিক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও হয়নি কোনো কাজ। বরং ওই জমি বন্ধক রেখে নেওয়া হয়েছে বড় অংকের ব্যাংকঋণ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও বিস্ময়কর তথ্য, চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম মূলত এই জমি ইজারা নিয়েছিল ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই। সাইফুল আলম মাসুদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি এ কাজে ব্যবহার করেছে তার বড় ছেলে ও ছোট ভাইকে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সিডিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এ সংক্রান্ত দলিলপত্র জব্দ করে দুদক। শুরু হয়েছে আইনি ব্যবস্থার প্রস্তুতি।
ইজারার শর্ত ভঙ্গ
দুদক সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকায় মেসার্স মডার্ন প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং মেসার্স হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড নামে দুই প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে ১০১ দশমিক ৮৭ কাঠা জমি ইজারা দেয় সিডিএ। শর্ত ছিল, দুই বছরের মধ্যে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে।
কিন্তু প্রায় ২৫ বছরেও কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি। বরং ২০২০ সালে জমিটি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার জন্য সিডিএর অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করা হয়। পরে এস আলম ট্রেডিংয়ের নামে জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়।
ছেলে ও ভাইয়ের মাধ্যমে জোচ্চুরি
বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান আহসানুল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হাসান দুজনই এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। আহসানুল আলম তার বড় ছেলে এবং আবদুল্লাহ হাসান ছোট ভাই।
২০২৩ সালের জুনে সাইফুল আলম মাসুদের বড় ছেলে আহসানুল আলমকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বানানো হয়। তারও আগে তিনি ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে কিংবা পরে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
দুদকের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, সিডিএর বরাদ্দ জমি পরিদর্শনে গিয়ে তারা চৌধুরী সুপার শপ ও রয়েল অটোকার নামে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেখতে পান। অথচ সিডিএর নথিতে এসব ব্যবহার নেই। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বাণিজ্যিকভাবে জায়গাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সিডিএ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দায়িত্বে অবহেলার তদন্ত
অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক হামেদ রেজা। তিনি জানান, বরাদ্দের শর্ত লঙ্ঘন হলেও ইজারাদারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিডিএ। এতে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইজারাপ্রাপ্ত হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। সিডিএর কোনো কর্মকর্তার দায় আছে কি না তা নিরূপণ করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



