s alam cement
আক্রান্ত
৯৯৪৮৬
সুস্থ
৭১৪৬৪
মৃত্যু
১২৩২

হাজতখানায় চেহারা দেখা ৩০০, ভাতের প্যাকেট দেওয়া ২০০ টাকা!

কক্সবাজারে কোর্ট পুলিশের বেপরোয়া বাণিজ্য

0

হাজতখানার আসামিদের নিয়ে বেপরোয়া বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। চিড়িয়াখানার জীবজন্তুর মতো হাজতি আসামিদের উপস্থাপন করা হচ্ছে স্বজনদের কাছে। তফাৎ একটাই— চিড়িয়াখানায় নগদ টাকায় টিকেট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আর কোর্ট পুলিশের হাজতখানায় নগদ টাকা দিয়ে টিকেট ছাড়াই প্রবেশ করা যায়। চিড়িয়াখানায় জীবজন্তু দেখা যায়, আর হাজতখানায় আপনজনদের দেখে স্বজনরা।

গত কয়েকদিন কোর্ট পুলিশের হাজতখানার আশপাশে ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কোর্ট-হাজতে থাকা একজন হাজতিকে দেখতে তার স্বজনদের দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। আর হাজতির জন্য এক প্যাকেট ভাত হাজতখানায় ঢোকাতে দিতে হয় ২০০ টাকা। তবে ভাতের মূল্য ১৬০ টাকা বলেও জানান ভুক্তভোগী লোকজন।

গত ২৯ ও ৩১ আগস্ট সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে, কোর্ট পুলিশের বেপরোয়া বাণিজ্য চলছে প্রকাশ্যেই। কোর্ট পুলিশের দায়িত্বরত দুই কনস্টেবল মনিরুল হক ও অলি উল্লাহ হরদম চালিয়ে যাচ্ছেন নগদ টাকা নিয়ে হাজতিদের চেহারা দেখানোর কাজ। পাশাপাশি থেমে ছিল না জিআরও অফিসও। চার্জশিটের ফটোকপি, মামলার এজাহারের ফটোকপি ও রিকল স্বাক্ষরসহ নানা খাতে চলছে অর্থের খেলা। তবে এর প্রতিবাদ না করে ‘ম্যানেজ ফর্মুলা’য় তুষ্ট ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি, টাকা না দিলে শত রকম আইন দেখাবে তারা। পাশাপাশি নানাভাবে হয়রানিও করবে। যে কারণে বাধ্য হয়ে চাপা ক্ষোভ নিয়ে টাকা দিয়েই নিজেদের বিপদ সামলে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

টেকনাফ সাবরাং এলাকার আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি জানান, পুলিশ যে কৌশলে টাকা নেয় তাতে মনে হয় আমরা যেন তাদের খুব প্রিয় বা আপনজন। পুলিশ আমাদের হাত ধরে এক কর্নারে নিয়ে গিয়ে হাতে হাত রেখেই টাকা নেয়। তারপর হাজতে ঢোকার সুযোগ দেয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজতে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ কোর্ট সেলের পাশে অবস্থান করেন। একজন আসামির সঙ্গে দেখা করতে আসেন ৪-৫ জনও। সেখান থেকে অনেককে টাকার অভাবে স্বজনদের সঙ্গে দেখা না করে বাড়ি ফিরতে হয়। তবে ইয়াবা কারবারির স্বজনদের উপস্থিতি সবসময়ই চোখে পড়ার মতো। তাদের জন্য রয়েছে দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষ সুবিধাও। মোটা অংকে অনেকটা জামাই আদরে হাজতে থাকা স্বজনদের দেখেন আত্মীয়স্বজনরা।

৩১ আগস্ট মঙ্গলবার টেকনাফ হ্নীলা এলাকার মারামারি মামলার আসামি নাছির উদ্দিনকে দেখতে কোর্ট হাজতে যান তার ভাই দেলোয়ার হোসেনসহ ৭ স্বজন। দেলোয়ার জানান, সকাল ১১টা থেকে কোর্ট হাজতের সামনে এসে অপেক্ষা করেছেন তার বোন-ভাবী ও মাসহ নিজেই। তারা ৭ জনের মধ্যে ৪ জনকে দেখা করতে দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। টাকার অভাবে বাকি তিনজন আর দেখা করতে পারেনি হাজতে থাকা নাছিরের সঙ্গে। এছাড়া নাছিরের জন্য হাজতে খাবারের প্যাকেট ঢোকাতে দিতে হয় আরও ২০০ টাকা। একই দিনে উখিয়া থানার আরেক মামলার আসামি আলমের সঙ্গে দেখা করেন তার তিন স্বজন। তাদের কাছ থেকেও কোর্ট পুলিশের কর্মরতরা ৫০০ টাকা নিয়েছেন।

Din Mohammed Convention Hall

২৯ আগস্ট রামু গর্জনিয়ার অস্ত্র মামলার আসামি নজরুল ইসলামকে দেখতে যান তার বোন ও দুই ভাই। তাদেরকেও ভাইয়ের চেহারা দেখতে দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। একই দিন উখিয়া থানার আসামি হাসানকে হাজতখানায় দেখতে যান তার বাবা ও ভাই। তারা জানিয়েছেন, হাজতে থাকা তাদের স্বজন হাসানকে দেখতে ও খাবার দিতে দায়িত্বরত পুলিশকে দিতে হয়েছে সাড়ে ৫০০ টাকা। একইভাবে উখিয়ার মরিচ্যার এলাকার আসামি মোস্তাককে দেখতে যান তার ভাই ও দুই বন্ধু। তিনজনকে হাজতখানায় মোস্তাকের চেহারা দেখতে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে বলে তারা জানান।

এছাড়া গত ২১ আগস্ট লাইটহাউজ এলাকার কালু নামের এক আসামিকে হাজতখানায় দেখতে যান তার স্ত্রী। ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে দুই মিনিট দেখা করে কথা বলতে তাকেও দিতে হয়েছে ৩০০ টাকা।

এভাবেই শত শত মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোর্ট পুলিশ। অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিবাদের ভাষা ভুলে গিয়ে হাজতে থাকা স্বজনদের দেখছেন আপনজনরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবীর সহকারী বলেন, ‘কোর্ট পুলিশের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতিতে হাজতে থাকা আসামিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা লোকজন চরম আর্থিক হয়রানির শিকার হচ্ছে।’

এদিকে উল্লেখিত হাজতখানার পাশাপাশি কোর্টে জিআরও ও কনস্টেবলদের সাথে মাঝেমধ্যে ঘুষ আদায় নিয়ে আইনজীবী সহকারীদেরও বাকবিতণ্ডার অভিযোগ ওঠেছে। কারণ কোনো নথি বা চার্জশিট তুলতে জিআরও অফিসে দিতে হচ্ছে চড়া ঘুষ।

আইনজীবী সহকারীদের মতে, অতীতের মতো উল্লেখিত সকল কাগজপত্র তুলতে বর্তমানে দায়িত্বরতরা উৎকোচ দাবি করে বেশি। এমনকি আদালত চলাকালীন হাজিরা দিতে আসা আসামি কিংবা রিমান্ড শুনানি হলেও কোর্ট পুলিশদের টাকা দিতে হয়। তাদের মতে, গোটা আদালত অঙ্গনে এক ধরনের নৈরাজ্য কায়েম করেছে কোর্টপুলিশ।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোর্ট পুলিশের এক সদস্য জানান, আমরা ছোটখাটো চাকরিজীবী বলেই সব দোষ আমাদের কাঁধে এসে পড়ে। কিন্তু সারাদিন চাঁদাবাজির টাকা কেউ একা ভোগ করতে পারে না। বড় বরাতটি হাজতখানার পাশে বড় কর্তার পকেটে চলে যায়।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক চন্দন চক্রবর্তী বলেন, কেউ যদি কোন আসামির সাক্ষাতের জন্য আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে প্রমাণ পেলে সেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার নাকের ডগায় এসব চলছে— এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে কোর্ট ইন্সপেক্টর বলেন, ‘সব দিকে খেয়াল রাখা সম্ভব নয়।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘যদি কোর্ট পুলিশের কোন সদস্য এরকম টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক সেই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিপি

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm