s alam cement
আক্রান্ত
৩৫১০৮
সুস্থ
৩২২৫০
মৃত্যু
৩৭১

কর্ণফুলী গ্যাস—কাজের গতি ‘স্থবির’ তিন মাস ধরে অভিযান বন্ধ, অভিযোগও শুনছেন না এমডি

0

তিনি একটা সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যোগ দিয়েছেন ৩ মাসের বেশি। কোনো প্রতিষ্ঠানে নতুন এমডি আসলে কাজের গতি বেড়ে যায়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চল্য, নিয়মিত কার্যক্রমে হয় গতিসঞ্চার। কিন্তু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) গঠল তার উল্টো। নতুন এমডি যোগ দেয়ার পর কাজেকর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ভেঙে পড়েছে অফিসের শৃঙ্খলাও। বন্ধ রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান, জরিমানা আদায়সহ নতুন গ্যাস সংযোগপ্রদান কার্যক্রম।

কর্ণফুলী গ্যাসে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রভঞ্জন বিশ্বাস যোগ দেয়ার পর থেকে সৃষ্টি হয়েছে এ অচলাবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বেশিরভাগ সময় অফিসে মুখে কুলুপ এটে একা সময় কাটান। কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে দেখা করতে চান না। কোন গ্রাহক দেখা করতে গেলে কিংবা অফিস সময়ে কেউ টিএন্ডটি কিংবা মুঠোফোনে কেউ ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেন না। এর ফলে বেড়েছে গ্রাহক অসন্তুষ্টি। ব্যাঘাত ঘটছে অফিসের রুটিন কার্যক্রমে।

তবে করোনার কারণে তার মুখে কুলুপ এঁটে অফিসে বসে থাকা ও কাজে নির্লিপ্ততা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক জনের কাছ থেকে। জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে তিনি ঢাকার পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম কেজিডিসিএল-এর এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রকৌশলী প্রভঞ্জন বিশ্বাস কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদারের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০২০ এর ৩০ নভেম্বর কেজিডিসিএল’র প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।

সূত্র জানায়, প্রভঞ্জন বিশ্বাস আসার আগে প্রতি মাসে গ্রাহকদের সমস্যা নিয়ে গ্রাহক ঐক্য পরিষদের সাথে বসে আলাপ আলোচনা করতেন আগের এমডিরা। কিন্তু গত তিনমাসে একবারও গ্রাহক সমাবেশ হয়নি। এ নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে তৈরি হয়েছে হতাশা, বিরক্তি। নতুন সংযোগের জামানতের বড় অংকের টাকা জমা রেখেও সংযোগ না পেয়ে গ্রাহকরা নতুন এমডির দ্বারস্থ হয়ে তার সাক্ষাৎ চান। কিন্তু সাক্ষাৎ না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে নতুন গ্যাস লাইন সংযোগ বন্ধ থাকায় বেকারত্বের কবল থেকে মুক্তি পেতে দাবি-দাওয়া নিয়ে নতুন এমডির সাথে দেখা করার চেষ্টা করেন চট্টগ্রাম মহানগর গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তারাও হয়েছেন বিফল। বাধ্য হয়ে তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাদের দাবি-দাওয়া সংবলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পেশ করেছেন।

Din Mohammed Convention Hall

সংগঠনটির সাধ্যারন সম্পাদক মো. সেলিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে মুঠোফোনে বলেন, ‘গত তিনমাসে নতুন এমডির সাথে দেখা করতে গেলে একবারও দেখা করার সুযোগ মিলেনি। তিনি বারবারই বলেছেন তিনি কথা বলার মত অবস্থায় নেই। তিনি কারো কোন সমস্যার কথা শুনতে পারবেন না।’

তাঁর এ অনীহার সত্যতা মিলেছে কেজিডিসিএল ভিজিল্যান্স শাখায় গিয়ে। গত তিনমাসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কর্মসূচি থেমে আছে। কোন জবাবদিহিতা না থাকায় অফিসের কর্মকর্ত ও কর্মচারীরা অনেকটাই ফ্রি স্টাইলে অফিস সময় পার করে বাসায় চলে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ করার শর্তে প্রশাসন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন এমডি দায়িত্ব নেয়ার পর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিনা নোটিশে কাজে অনুপস্থিত থাকছেন। যে যার মত করে অফিসে আসে। কোন কাজ না করে কেউ কেউ হাজিরা খাতায় দস্তখত করে অফিসের বাইরে চলে যায়।

কেজিডিসিএলের ভিজিল্যান্স শাখিার উপ মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হাসান সোহরাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘করোনার কারণে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ আছে। আর এমডি স্যারও নতুন।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

নতুন এমডি নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী সংসদ (সিবিএ)’র নেতা কর্মীদেরও রয়েছে বড় ধরনের ক্ষোভ। সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মো. আসলাম বলেন, ‘নতুন এমডি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মনে হয় মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কারো সাথে ভালো করে কথা বলেন না। গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তরিক নন। নিয়মিত অপারেশনাল কার্যক্রমও অনেকটা বন্ধ হয়ে আছে। এখন পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠানের আমাদের থেকে শুরু করে এত তৃত্বীযাংশ কর্মচারীর সাথে পরিচিত হতে পারেননি। আসলে তিনি দীর্ঘদিন পেট্রোবাংলার প্লানিং বিভাগে কাজ করেছেন। আর কেজিডিসিএল একটা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। তাই এখানকার কাজকর্ম তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। আর করোনার কারণেও তিনি অফিসিয়াল কার্যক্রম থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন বলে জানা গেছে।’

এ বিষয়ে কেজিডিসিএল ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. অলিউল্লাহ হক জানান, ‘নতুন এমডি নিয়ে আর কী বলব? তিনি তো সারাদিন অফিসের দরজা ভিতর থেকে লক করে বসে থাকেন। কেউ কোন প্রয়োজনে তার সাথে দেখা করতে গেলে দেখা পাওয়াটা দুরূহ। ৫ বছর ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে নতুন সংযোগের নামে ২৫ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে রেখে দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গ্যাস লাইন সংযোগের খবর নেই। তাহলে আমাদের সমস্যা ও দুঃখের কথা তাকে ছাড়া আর কাকে বলব? কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি আমাদের সাথে দেখা না করেন তাহলে কি করে আমাদের কথা তার মাধ্যমে উপর মহলে পৌঁছাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আগের এমডিরা প্রতি বৃহস্পতিবার কিংবা সোমবার অফিসিয়াল দিক নির্দেশনা নিয়ে মিটিং করত। বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরা হত মিটিংয়ে। কিন্তু তিনি আসার পর থেকে তিনমাসে কোন বোর্ড মিটিং হয়নি। চলতি মাসে বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হলেও তার স্থায়িত্ব ছিল আধাঘন্টারও কম। চা পর্ব শেষ করেই শেষ হয়ে গেছে মিটিংয়ের কার্যক্রম।’

অলিউল্লাহ আরো বলেন, ‘আমরা যতটুকু জেনেছি, তিনি করোনার জন্য একটি বিশেষ দূরত্ব অবস্থান পালন করছেন। তিনি অনেককেই বলেছেন, করোনার কারণে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কার্যক্রমে জড়িত হয়ে কাজ করতে পারছেন না।’

এ বিষয়ে কথা বলতে প্রভঞ্জন বিশ্বাসের সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরিচয় জানিযে ক্ষুদেবার্তা দিয়ে পুনরায় ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কেএস

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm