কর্নেলহাটে পার্কিং দখল করে ইজারাদারের বাণিজ্য, ফুটপাতে ‘চাঁদাবাজি’

যেখানে থাকার কথা গাড়ি পার্কিং, সেখানে বসেছে কাঁচাবাজার। তাও অনেকটা স্থায়ী বন্দবস্ত করেই। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি ফুটপাতও দখলে নিয়েছেন ইজারাদার। সেই দখলকে পুঁজি করেই চলছে লাখ টাকার চাঁদাবাজি। পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে ছোট-বড় দোকান বসানো হয়েছে প্রায় ১০০টি। এগুলো থেকে এককালীন এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। মাসে বড় দোকান ১৫ হাজার এবং ছোট দোকান থেকে ৮ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ফুটপাতে বসানো হয়েছে ৮০টি ভাসমান দোকান। এসব দোকানপ্রতি ১৫০ টাকা হিসেবে থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।

তবে চাঁদাবাজির কথা অকপটে স্বীকার করেছেন ইজারাদার। তার দাবি, এ কাজে তার সঙ্গে অনেক বিএনপি নেতাও জড়িত।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানার কর্নেলহাট মোড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের নিচ তলাটি পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু সেই বাজারের নিচে ছোট-বড় প্রায় ১০০টি দোকান রয়েছে। এছাড়া ফুটপাত দখল করেও বসানো হয়েছে আরও ৮০টি ভাসমান দোকান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মার্কেটটির ইজারাদার মো. জাফর আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তি। সিটি কর্পোরেশন থেকে ৪ তলা এই ভবনের ২য় ও ৩য় তলা বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি দোকান বসিয়েছেন। কিন্তু নিচ তলার পার্কিংয়ের জায়গাও তিনি দখল করে নিয়েছেন। নিচ তলায় প্রায় ১০০টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানের আকার ও স্থান নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে দোকানের অগ্রিম ভাড়া। বড় দোকান থেকে অগ্রিম বাবদ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। আর ছোট দোকান থেকে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আবার ভাড়া বড় দোকানের মাসিক ভাড়া ১৫ হাজার ও ছোট দোকানের ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।

এছাড়া ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে ৮০টি ভাসমান দোকান। দৈনিক প্রতিটি দোকান থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। সে হিসেবে দৈনিক ১২ হাজার টাকা এবং মাসে চাঁদাবাজির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

অথচ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পার্কিং ও আশপাশের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের সময় কর্নেলহাট সিটি কর্পোরেশন বাজারের পার্কিং এলাকা দখলমুক্ত করার জন্য নির্দেশনা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেননি ইজারাদার মো. জাফর আহম্মেদ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের সভাপতি ও ইজারাদার মো. জাফর আহম্মদ বলেন, ‘এতদিন চাঁদা নিয়েছি, কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু উচ্ছেদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদাবাজির কথা কেন আসছে? এখানে বিএনপির অনেক নেতাও জড়িত আছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফুটপাত দখল করে কেউ চাঁদাবাজি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। ফুটপাত অবমুক্ত করার ব্যাপারে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের ইজারাদার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই পার্কিং ও ফুটপাতে অবৈধ দোকান বসানোয় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। আবারও তারা যদি একই কাজ করে, প্রয়োজনে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে। আমরা আবারও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm