দীর্ঘ ছয় বছর ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এই সময়ে তিনি ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। সন্ত্রাসী নানান অপকর্মে সুবিধার জন্য গড়ে তুলেন বিশেষ গ্রুপ ‘কিশোর গ্যাং। যে গ্রুপের মাধ্যমে ফারুক চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের উপকূলীয় জনপদ মায়ানী ইউনিয়নে ও তার আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য।
সম্প্রতি স্থানীয় মধ্যম মায়ানী গ্রামের ব্যবসায়ী ফজলুল করিমের কাছে চাঁদা দাবি করে ফারুক। এরপর সেই ব্যবসায়ী বাদি হয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাতে স্থানীয় বড়তাকিয়া বাজার এলাকা থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, ‘মঙ্গলবার ফারুককে গ্রেপ্তােরর পর বুধবার চাঁদাবাজি ও মারামারির পৃথক দুটি মামলায় আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে যা তদন্ত চলছে।’
এদিকে, ফারুকের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও নানা অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা মিরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়ন এলাকার মানুষ তার গ্রেপ্তারের খবরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী।
স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরের ছাপা নয়ন বলেন, ফারুক সভাপতি থাকাকালীন ৬ বছরে সংগঠনের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফারুক গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে অভিযোগ দিতে থানায় ভিড় করছে ভুক্তভোগী লোকজন। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেও নিজেদের অভিযোগ জানাতে ছুটে আসছেন তারা।
মায়ানী ইউনিয়নের মনু ভূঁইয়া বাড়ির আজমল খান শুলন নামে এক সৌদি আরব প্রবাসি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তার পরিবার ফারুকের সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে নির্যাতিত হয়ে আসছে। কয়েক বছর আগে তাদের ১ একর ২০ শতক জমি দখল করে ফারুক সেখানে ইট-সুরকির ব্যবসা শুরু করে।
মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কজন সদস্য ফারুকের সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। বুধবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শামছুদৌহা, মাহফুজ মিয়া মনা ও নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা সকলেই ফারুক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে অসহায়। কিছু বললেই মারধর করতো। এলাকার কোন উন্নয়ন কাজ করতে হলে তাকে চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা না দেওয়ায় এ তিন ইউপি সদস্যকে একাধিকবার লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।
মায়ানী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ফারুক করেনি এমন কোন অপরাধ নেই। সে আমার ৬ লাখ টাকা সে আত্মসাত করে। পরে টাকা চাইতে গেলে বেশ কয়েকবার আমাকে খুন করার চেষ্টা করে।
এদিকে, চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত ফারুকের হাত থেকে রেহাই পাইনি মায়ানী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল মাঠে মাটি ভরাট কাজে চাঁদা দাবি করে ফারুক। চাঁদা না দেয়ায় তার হাতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের লাঞ্ছিত হতে হয় বলে জানান স্কুল পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য।
এসএ/এমএহক